দুই বছর পূর্তিতে মঙ্গলবার গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহীদ মিনার চত্বরে আদিবাসী-বাঙালি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সাহেবগঞ্জ বাগদাফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি, জাতীয় আদিবাসী পরিষদ, বাংলাদেশ আদিবাসী ইউনিয়ন, আদিবাসী-বাঙালি সংহতি পরিষদ ও জনউদ্যোগ সম্মিলিতভাবে এই সমাবেশ আয়োজন করে।
রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ১৯৬২ সালে আখ চাষের জন্য গোবিন্দগঞ্জের সাহেবগঞ্জ-বাগদা এলাকায় এক হাজার ৮৪২ একর জমি অধিগ্রহণ করে।
২০১৬ সালের ১ জুলাই এই খামারের প্রায় ১০০ একর জমিতে ঘর নির্মাণ করে বসবাস করাসহ ধান, পাট ও মাসকালাই চাষ করতে থাকেন। বাকি জমিতে চিনিকল কর্তৃপক্ষ আখ রোপন করে।
পরে আখ কর্তন নিয়ে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ ও চিনিকল শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষ বাধে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনজন সাঁওতাল মারা যায় ও উভয় পক্ষের অন্তত ৩০ জন আহত হয়। এক পর্যায়ে ওই দিন সন্ধ্যায় ঘরবাড়িতে আগুন দিয়ে সাঁওতালদের উচ্ছেদ করে পুলিশ।
দিনটি স্মরণ উপলক্ষে গোবিন্দগঞ্জে নানা কর্মসূচির আয়োজন করা হয়।
সকালে একটি শোক শোভাযাত্রা সাওঁতাল পল্লী মাদারপুর ও জয়পুর গ্রাম থেকে বের হয়ে ১২ কিলোমিটার দূরে গোবিন্দগঞ্জ পৌর শহীদ মিনারে এসে শেষ হয়। পরে নিহত তিন সাঁওতাল স্মরণে পৌর শহীদ মিনারে পুস্পস্তবক অর্পণ ও মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করার পর এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সেখানে সমাবেশ করেন তারা।
সুলতানা কামাল বলেন, “এ রকম একটি নিষ্ঠুর, অমানবিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘন করার মতো ঘটনা স্বাধীন বাংলাদেশে ঘটা আমাদের জাতির জন্য লজ্জাজনক। আমি এর বিচার দাবি করছি।”
তিনি ওই দিনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সাঁওতালদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা এবং তাদের ক্ষতিপূরণ দাবি করেন।
পংকজ ভট্টাচার্য বলেন, সাহেবগঞ্জ ও বাগদা ফার্ম এলাকায় পরিকল্পিতভাবে পুলিশ ও সন্ত্রাসী বাহিনী ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষ সাঁওতাল এবং বাঙালি কৃষকদের ওপর আক্রমণ চালায়।
“পুলিশের উপস্থিতিতে চিনিকল মালিকের সন্ত্রাসীরা তাঁদের বাড়িঘরে আগুন দেয়। পুলিশের গুলিতে নিহত হন তিন সাঁওতাল। কিন্তু দুই বছর পরও এসব ঘটনায় অভিযুক্ত স্থানীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আকন্দ বুলবুলসহ মূল আসামীদের কেউই গ্রেপ্তার হয়নি।”
এরপর ২৬ নভেম্বর থোমাস হেমরম বাদী হয়ে সাপমারা ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আহম্মেদসহ ৩৩ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৫০০ থেকে ৬০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে আরেকটি মামলা করেন।
মামলার অগ্রগতি প্রসঙ্গে পিবিআই গাইবান্ধা ইউনিটের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনর্চাজ) ও সহকারী পুলিশ সুপার আবদুল হাই সরকার বলেন, এ পর্যন্ত সাঁওতালদের মামলায় ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এরমধ্যে একজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
“নিহত তিন সাঁওতালের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। তবে ভিসেরা রিপোর্ট পাওয়া যায়নি।”
তিনি বলেন, পিবিআই সাঁওতালদের লুট হওয়া কিছু ঢেউটিন ও মালামাল উদ্ধার করেছে। তদন্তে অনেকটা অগ্রগতি হয়েছে। অচিরেই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে।