শাবিতে ভর্তি ফি বাড়ছে ৩৯ শতাংশ

প্রতিবছর ভর্তি ফি বাড়াচ্ছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বছরও গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩৯ শতাংশ বাড়ছে।

হোসাইন ইমরান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2018, 06:43 AM
Updated : 6 Nov 2018, 07:26 AM

গত বছর প্রথম বর্ষে ভর্তি ফি ছিল ৬৮৫০ টাকা। এ বছর তা ২৬৫০ টাকা বাড়িয়ে করা হচ্ছে ৯৫০০ টাকা।

সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার গ্রহণের বিজ্ঞপ্তির পাশাপাশি বর্ধিত এই ভর্তি ফির কথা জানানো হয়। আগামী ১১ থেকে ১৩ নভেম্বর সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

তবে ফি বৃদ্ধির ঘোষণা ওয়েবসাইটে দিলেও তা ৭ নভেম্বর একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কম ফি নিচ্ছি। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে এটা আরও বেশি।

“আমরা একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় ভর্তি ফি বৃদ্ধির বিষয়টি চূড়ান্ত করব। সবার মতামতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।”

ভর্তি আবেদন ফি, ভর্তি ফি, সেমিস্টার ফি ধারাবাহিকভাবে বেড়ে চলছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে উপাচার্য আমিনুল হক ভূঁইয়ার সময় আগের বছরের তুলনায় ৩৩ শতাংশ ফি বাড়িয়ে দুই ইউনিটে ১০০০ ও ১২০০ টাকা করা হয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে কমিয়ে ৮০০ ও ৯০০ টাকা করা হয়। ওই সময় ভর্তি ফি কমানোর পাশাপাশি আগামী পাঁচ বছর ভর্তি ফি অপরিবর্তিত থাকবে বলে সিদ্ধান্ত হয়েছিল একাডেমিক কাউন্সিলের সভায়।

কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে প্রতিবছর ফি বৃদ্ধি করেই চলছে কর্তৃপক্ষ।

২০১১-১২ সেশনে ভর্তি ফি ছিল ৪৬০০ টাকা। ২০১৩-১৪ সেশনে তা হয় ৪৮৫০ টাকা। গত পাঁচ বছরে তা বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

গত বছরের তুলনায় ভর্তি আবেদন ফি দুই ইউনিটে ৫০ টাকা করে বাড়িয়ে ৮৫০ ও ৯৫০ করা হয়েছে, যা গত বছর ৮০০ ও ৯০০ ছিল। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি আবেদন ফি ৩৫০ টাকা।

কর্তৃপক্ষের ফি বৃদ্ধির এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে আসছেন শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মইনুদ্দিন মিয়া বলেন, “প্রতিবছর কোনো ধরনের কারণ ছাড়াই ফি বৃদ্ধি হয়। দিন দিন উচ্চশিক্ষার সুযোগ বিত্তশালীদের জন্য নিশ্চিত করে দেওয়া হচ্ছে। এটা একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের চরিত্রে হতে পারে না।”

ফি বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি সুচিত্র ঘোপ বলেন, “আমরা শিক্ষাবাণিজ্যের বিরুদ্ধে। শিক্ষা আমাদের মৌলিক অধিকার। আমরা এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তকে প্রত্যাখ্যান করছি। আমাদের দাবি অবিলম্বে এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত বাতিল হোক।”

বর্ধিত ভর্তি ফির পরিমাণ সহনশীল নয় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইমরান খান।

তিনি বলেন, “আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের দাবি নিয়ে বসব। সেটা সহনশীল পর্যায়ে নিয়ে আসার জন্য কথা বলব।”

বিশ্ববিদ্যাল ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাযিরুল আযম বলেন, “আগামী পাঁচ বছর কোনো ফি না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছিল। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবছর ধারাবাহিকভাবে ফি বাড়িয়ে যাচ্ছে।

“এবছর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে চা শ্রমিকের সন্তানদের জন্য কোটা চালু করা হয়েছে। চা শ্রমিকরা দিনে কয় টাকা রোজগার করে? তারা কয় দিনের ইনকাম দিয়ে ৯৫০০ টাকা জমাবে?”

এসব বিষয়ে উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলছেন, “আমরা চা শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করব। তাদের শিক্ষা গ্রহণের সকল সুযোগ-সুবিধা দিব।”

চা শ্রমিক ছাড়াও কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুরের সন্তানদের পক্ষে এই পরিমাণ ফি পরিশোধ করা কষ্টকর হবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনেকেই।

তাদের জন্য কোনো ব্যবস্থা নেবেন কি না এ বিষয়ে উপাচার্য বলেন, “আমি ইনস্ট্যান্ট কিছু বলতে পারছি না। সব বিষয়েই একটি কমিটি কাজ করে। হুট করে চাইলেই একটি সিদ্ধান্ত নিতে পারব না। সবার সাথে কথা বলে একটি সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সবার সাথে আলাপ করে দেখব।”