তরিকুল সমাহিত হলেন যশোরে

যশোর ঈদগাহে শেষ জানাজার পর নিজ শহরে বিএনপি নেতা সাবেক মন্ত্রী ও সদর আসনের চারবারের সাংসদ তরিকুল ইসলামকে দাফন করা হয়েছে।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 Nov 2018, 03:40 PM
Updated : 5 Nov 2018, 03:44 PM

সোমবার সন্ধ্যায় যশোরের কারবালা কবরস্থানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্যকে দাফন করা হয়।

এর আগে বেলা আড়াইটায় হেলিকপ্টারে তার মরদেহ যশোর বিমানবন্দরে আনা হয়। সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্সে নেওয়া হয় তার যশোর শহরের বাসভবনে।

সেখান থেকে বিকেলে ৩টায় মরদেহ নেওয়া হয় শহরের লালদীঘী পাড়ে জেলা বিএনপি কার্যালয়ে। এখানে কিছু সময় রাখার পর মরদেহ নেওয়া হয় যশোর ঈদগাহ ময়দানে। এখানেই বিকাল ৪টা ৩৫ মিনিটে শেষ নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়।

জানাযায় বিপুল সংখ্যক বিএনপি নেতা-কর্মী ও তরিকুল ইসলামের ভক্ত-অনুসারীরা অংশ নেন। জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষের ভিড়ে পুরো ঈদগাহ ময়দান এবং আশপাশের রাস্তাগুলো পরিপূর্ণ হয়ে যায়।

জানাজার পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পক্ষে কফিনে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান।

এ সময় তার সঙ্গে ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায়চৌধুরী, সহ-ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অমলেন্দু দাস অপুসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

পরে যশোর জেলা বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়।

জানাজা শুরুর আগে মরহুমের পরিবারের পক্ষ থেকে তরিকুল ইসলামের ছেলে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বক্তব্য রাখেন।

যশোর নেওয়ার আগে জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় তার নামাজে জানাজা হয়। এরপর দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তরিকুল ইসলামের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানায় তার দল বিএনপি।

সোমবার সকালে শেষবারের মত ঢাকার নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আনা হলে সহকর্মীরা তার কফিনটি দলীয় পতাকায় ঢেকে দেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নেতৃত্বে স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বিএনপি ও দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রয়াত এ সহযোদ্ধার প্রতি। কফিনে ফুল দেওয়ার পর কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা।

পরে মহানগর বিএনপি, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, কৃষক দল, তাঁতী দল, ড্যাব, অ্যাব,মৎস্যজীবী দল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে তরিকুল ইসলামের কফিনে শ্রদ্ধা নিরেবদন করা হয়।

শ্রদ্ধা নিবেদন পর্বের আগে বিএনপি কার্যালয়ের সামনের সড়কে তরিকুল ইসলামের জানাজা হয়।

মহাসচিব, স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ছাড়াও বিএনপি নেতাদের মধ্যে আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, আমিনুল হক, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, জয়নাল আবেদীন, এজেএম জাহিদ হোসেন, আমানউল্লাহ আমান, ভিপি জয়নাল আবেদীন, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, রুহুল কবির রিজভী, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আসাদুজ্জামান রিপন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সানাউল্লাহ  মিয়া, মাসুদ আহমেদ তালুকদার,  মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, আবদুস সালাম আজাদ, আমিরুল ইসলাম আলিম এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা জানাজায় অংশ নেন।

২০ দলীয় জোটের নেতাদের মধ্যে মোস্তফা জামাল হায়দার, এম এ রকীব, মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মুফতি মহিউদ্দিন ইকরাম, আহসান হাবিব লিংকন, শামীম সাঈদী জানাজায় ছিলেন।

জানাজা শুরুর আগ মুহূর্তে কাতারে দাঁড়ানো নেতাদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মাটিতে পড়ে গেলে দ্রুত তাকে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়।

মির্জা ফখরুল তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে প্রয়াত সহকর্মীর রাজনৈতিক জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে বলেন, “তরিকুল ইসলাম সারাটা জীবন রাজনীতি করেছেন দেশের জন্য, জনগণের জন্য, খেটে খাওয়া মানুষের জন্য। তার এই চলে যাওয়া দেশের জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি।”

তরিকুল ইসলামের মৃত্যুতে সকাল থেকে কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ সারাদেশে বিনেপি কার্যালয়ে দলীয় পতাকা অর্ধনমিতকরণ রাখা হয়। সেই সঙ্গে তোলা হয় শোকের কালো পতাকা।

নয়া পল্টনে জানাজা শেষে বেলা সোয়া ১১টার দিকে সাবেক এই সাংসদের কফিন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে আরেক দফা জানাজা হয়।

সংসদের প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ, আওয়ামী লীগের সাংসদ শামসুল হক টুকু, কাজী নাবিল আহমেদ, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম খান, এম মোরশেদ খান, আবদুল্লাহ আল নোমান, হাফিজউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মান্নান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জাফরুল ইসলাম চৌধুরী, নাজিম উদ্দিন আলম, এনামুল হক চৌধুরী, শাহজাদা মিয়া, ইসমাইল জবিউল্লাহ, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, মজিবুর রহমান সারোয়ার, নিজামউদ্দিন, এবিএম আশরাফ উদ্দিন নিজান, আলমগীর কবির, নূর মোহাম্মদ খান, আক্তারুজ্জামান, জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, এলডিপির অলি আহমেদ, রেদোয়ান আহমেদ, আবদুল করিম আব্বাসী, আবদুল গণি, শাহাদাত হোসেন সেলিমসহ সাংসদ ও সরকারি কর্মকর্তারা এ জানাজায় অংশ নেন।

পরে সংসদের পক্ষে প্রধান হুইপ আসম ফিরোজ, বিরোধী দলের পক্ষে জাতীয় পার্টির নুরুল ইসলাম  এবং বিএনপির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে নজরুল ইসলাম খান, এলডিপির পক্ষে অলি আহমেদ কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

রোববার বিকালে রাজধানীর অ্যাপেলো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তরিকুল ইসলাম। তার বয়স হয়েছিল ৭২ বছর।

যাশোর থেকে চার বার নির্বাচনে জিতে সংসদে যাওয়া তরিকুল চারদলীয় জোট সরকারের তথ্যমন্ত্রী এবং পরিবেশ ও বনমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৯১ সালে খালেদা জিয়ার সরকারে তিনি প্রথমে সমাজকল্যাণ এবং পরে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটিতে আসার আগে তিনি সহসভাপতিসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন।

তরিকুলের জন্ম ১৯৪৬ সালের ১৬ নভেম্বর যশোরে। তার বাবা আব্দুল আজিজ একজন ব্যবসায়ী ছিলেন।

তরিকুল ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতিতে যুক্ত ছিলেন; বাংলাদেশের স্বাধীনতার আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পরও সক্রিয় ছিলেন বাম আন্দোলনে।

স্বাধীনতার পর মওলানা ভাসানীর দলে থাকা অবস্থায় ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের ডাকে বিএনপিতে যোগ দিয়েছিলেন তরিকুল। মৃত্যু পর্যন্ত এই দলেই ছিলেন।

তরিকুল যশোর থেকে প্রকাশিত লোকসমাজ সংবাদপত্রের প্রকাশক ছিলেন। যশোর পৌরসভার চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি।

তরিকুল ইসলামের কফিন তার নিজের জেলা যশোরে নেওয়ার আগে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা হয়।