রাজশাহী নগরে প্রেক্ষাগৃহ নেই, ‘দেবী’ দেখতে পবায় বাবুল হলে

রাজশাহী নগরে কোনো প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় ‘দেবী’ সিনেমা দেখতে দর্শকরা পবা উপজেলার বাবুল সিনেমা হলে ভিড় করেছেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিশফিকুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Nov 2018, 09:04 AM
Updated : 3 Nov 2018, 10:07 AM

ব্যবসা ভালো না থাকায় রাজশাহী শহরের সর্বশেষ সিনেমা হল ‘উপহার’ গত ১২ অক্টোবর বন্ধ করে দেওয়া হয়। এর সাতদিন পর মুক্তি পাওয়া দেবী চলচ্চিত্রটি দেখার অপেক্ষায় ছিলেন সারা দেশের মতো রাজশাহীর সিনেমাপ্রেমীরাও।

শুক্রবার নগরী থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে পবার নওহাটায় বাবুল হলে দেবী সিনেমার প্রদর্শনী শুরু হয়। বহু কাঙ্খিত এ চলচ্চিত্র দেখতে সেখানে ভিড় জমান দর্শকরা। এ নিয়ে দর্শকেরা নানা রকম প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে।

কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের কাহিনি অবলম্বনে জয়া আহসান প্রযোজিত চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন অনম বিশ্বাস। গত ১৯ অক্টোবর চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়। ইতিমধ্যে দেশের ৫০টির মতো হলে ছবিটি মুক্তি পেয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়েন ইয়াজিম পলাশ। তিনি গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত চলচ্চিত্র দেখছিলেন রাজশাহী নগরীর উপহার হলে। কিন্তু হলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাকে বাবুল হলে এসে দেবী দেখতে হলো বলে জানান। 

পলাশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “উপহার সিনেমা হলটি বন্ধ হওয়ার কারণে অনেক দূরে গিয়ে দেবী সিনেমা দেখতে হলো। এভাবে যদি সিনেমা হলগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে এক সময় আমাদের সংস্কৃতি হুমকির মুখে পড়বে। হারিয়ে যাবে আমাদের ঐতিহ্য।”

তাই নিজেদের স্বার্থে সংস্কৃতি রক্ষায় শহরে সিনেমা হল থাকা উচিত বলে মনে করেন তিনি।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী নিমেল রায় ৫-৭ জন বন্ধুর সঙ্গে দেবী দেখতে এসেছেন।

তিনি বলেন, “আজকে দলবেঁধে অনেক দিন পর সিনেমা দেখতে আসলাম। আগে যেমনটা যাওয়া হতো রাজশাহীর উপহার হলে। তবে ওই হল থেকে এটি দূরে হলেও বন্ধুদের নিয়ে সিনেমা দেখতে এসে খুব ভালো লাগছে।”

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ ফরিদ বলেন, “শহরে যখন সিমো হল ছিল তখন আমাদের যাতায়াতে সুবিধা ছিল; এখন দূরে গিয়ে সিনেমা দেখতে হলে খরচা ও সময় বেড়ে।”

নগরীর বন্ধ হয়ে যাওয়া সিনেমা হলগুলো পুনরায় চালুর দাবির জানান তিনি।

রাজশাহী সিটি কলেজের শিক্ষার্থী রাজিব বলেন, “এ সিনেমাটি আমাদের বাংলা সাহিত্যের একজন বিখ্যাত ব্যক্তি হুমায়ুন আহমেদের। দেবী উপন্যাস থেকে ছবির ভিন্নতা রয়েছে। সিনেমাটি দেখার সময় একবারও দেবী উপন্যাসের কথা মনে হয়নি।”

বাবুল সিনেমা হলের এজেন্ট রূপচাঁন মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে অনেক দর্শক এসেছে। তবে হাউজফুল বলা যাবে না। হয়ত কাল থেকে দর্শক সংখ্যা বাড়তে পারে। এ রকম দর্শক সাধারণত কোনো উৎসব বা ঈদে হয়।”

তিনি উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, “আমরা এমনও শো চালিয়েছি, যেখানে দর্শক থাকত মাত্র চার থেকে পাঁচজন। কিন্তু আজ অনেক দর্শককে আমরা অনেকদিন পর পেয়েছি। আমাদের মালিক আজ এসছিলেন। তিনিও খুশি।”

এত দর্শক সমাগমের কারণ হিসেবে তিনি বলেন, “রাজশাহী শহরে বর্তমানে কোনো হল না থাকায় এখানে ভিড় বেড়েছে। তাছাড়া ছবিটিও খুব ভালো হয়েছে আর ভালো চলছে বিভিন্ন জায়গায়।”

প্রতিদিন দুপুর সাড়ে ১২টা, বিকেল ৩টা, সন্ধ্যা ৬টা ও রাত ৯টায় সিনেমা প্রদর্শনী হবে বলে রূপচাঁন মিয়া জানান।

চলচ্চিত্রটির মাধ্যমে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের জনপ্রিয় চরিত্র ‘মিসির আলি’ এই প্রথম এলো বড়পর্দায়। চলচ্চিত্রে চরিত্রটি রূপায়ণ করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। আর কেন্দ্রিয় চরিত্র ‘রানুর’ ভূমিকায় রয়েছেন দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া আহসান।

এতে অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন শবনম ফারিয়া, অনিমেষ আইচ ও ইরেশ জাকের। জয়া আহসান প্রযোজিত চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করেছেন অনম বিশ্বাস।