সিলেটে উন্মুক্ত হল বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র

দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সিলেট বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র।

সিলেট প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2018, 05:54 PM
Updated : 2 Nov 2018, 06:01 PM

জাতিসংঘের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত এ কে আবদুল মোমেন শুক্রবার বিকেলে নগরের টিলাগড় এলাকায় চিড়িয়াখানার আদলে নির্মিত কেন্দ্রটি উদ্বোধন করেন। 

বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, এখানে আছে নয় প্রজাতির অর্ধশতাধিক প্রাণী। চলতি বছরের মধ্যেই  আরও বেশ কয়েক প্রজাতির প্রাণী আনা হবে।

প্রথম দিনই বন্যপ্রাণী দেখতে চিড়িয়াখানায় দর্শকের ঢল নামে। এটি সিলেটের মানুষের বিনোদনের অভাব পূরণের পাশাপাশি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণেরও সুযোগ সৃষ্টি করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

বন কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, গত ২৭ অক্টোবর গাজীপুরের সাফারি পার্ক থেকে এখানে স্থানান্তর করা হয় দুটি জেব্রা, দুটি হরিণ, ১২টি ময়ূর, একটি গোল্ডেন ফিজেন্ট পাখি, তিনটি সিলভার ফিজেন্ট পাখি, তিনটি ম্যাকাও পাখি, চারটি আফ্রিকান গ্রে প্যারোট, চারটি সান কানিউর পাখি, ৩০টি লাভ বার্ড ও একটি অজগর। আগামী আরো দুইটি চিত্রল হরিণ এবং ডিসেম্বরে বাঘসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রাণী আনা হবে বলে জানিয়েছেন বন কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। 

প্রকল্প প্রায় ছয় বছর আগে শুরু হয় বলে তিনি জানান।

নগরের মিরাবাজার থেকে আসা ব্যাংকার শাহেদ মুস্তাফিজ বলেন, সিলেট নগরে পরিবার নিয়ে বিনোদনের কোনো সুযোগ নেই। ইকোপার্কে বন্যপ্রাণী দর্শনের ব্যবস্থা করায় নগরবাসীর বিনোদনের অভাব অনেকটা পূরণ হবে।

বন্যপ্রাণী দেখতে আসা এমসি কলেজের ছাত্রী সুমাইয়া তাবাসসুম বলেন, “জিরাফ, ময়ূরসহ অনেক প্রাণী আনা হয়েছে। বাঘ, সিংহসহ বিলুপ্তপ্রায় আরও প্রাণী আনা হলে কেন্দ্রটি পূর্ণতা লাভ করবে।”

মানুষের বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টির প্রশংসা করলেও বন্যপ্রানী সংরক্ষণের বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশ ও প্রাণীবিষয়ক সংগঠনের নেতারা। 

এ ব্যাপারে পরিবেশবিষয়ক সংগঠন ভূমি সন্তানের সমন্বয়ক আশরাফুল কবীর বলেন, “টিলাগড় ইকোপার্ক মূলত বন্যপ্রানী সংরক্ষণ কেন্দ্র। তাই বন্য জীববৈচিত্র্য রক্ষায় প্রতিদিন কী পরিমাণ দর্শনার্থী এখানে আসবেন তা বনবিভাগকে নির্ধারণ করতে হবে।

“এছাড়া বনের ভেতরে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তা না হলে এটি একটি বিনোদনকেন্দ্রেই পরিণত হবে। প্রাণী সংরক্ষণের মূল উদ্দেশ্যটি ব্যাহত হবে।”

বন কর্মকর্তা মনিরুল বলেন, ২০০৬ সালে নগরের টিলাগড় এলাকায় শুরু হয় ইকোপার্ক নির্মাণের কাজ। পাহাড় ও টিলাবেষ্টিত প্রায় ১১২ একর জায়গাজুড়ে এই পার্ক নির্মাণে প্রথম ধাপে ব্যয় ধরা হয় এক কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ টাকা। এই প্রকল্পের আওতায় বন বিভাগের  উদ্যোগে লাগানো হয় নানা জাতের গাছ। ২০১২ সালের ৩ অক্টোবর মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক সভায় ইকোপার্কটিতে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম চিড়িয়াখানা নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 

“সিলেটের মানুষের বিনোদনের অভাব পূরণে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও তার উন্নয়নের বিশেষ অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে নেন এটিকে। তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২০১২ সালে টিলাগড় ইকোপার্ক বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ও চিড়িয়াখানা নির্মাণে বরাদ্দ দেওয়া হয় ৯ কোটি ৯৯ লাখ ৯৬ হাজার টাকা। প্রকল্পটির কাজ তিন বছরের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে ব্যর্থ হয় সংশ্লিষ্টরা। ফলে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় চার কোটি টাকা ফেরত যায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে।”

২০১৬ সালের জুনে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটি হস্তান্তর করা হয় সিলেট বিভাগীয় বন অফিসকে। 

মনিরুল বলেন, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্রটির কাজ শুরুর দিকে প্রায় ৮০ লাখ টাকা ব্যয়ে কেনা হয় বাঘসহ বেশ কিছু প্রাণী। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে প্রায় ছয় বছর ধরে সেগুলো রাখা হয় গাজীপুর সাফারি পার্কে। 

“বন্যপ্রাণীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতাল ও  অবকাঠামো নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার পর গত ২৭ অক্টোবর এখানে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকের অভাবে এখনও হাসপাতালটির কার্যক্রম শুরু না হলেও চলতি বছরের মধ্যে সেটি চালু করা হবে।”

হাসপাতালটি চালু হলে সিলেটের বিভিন্ন স্থান থেকে উদ্ধার হওয়া অসুস্থ প্রাণীদের চিকিৎসা দিয়ে এই সংরক্ষণ কেন্দ্রের বনে অবমুক্ত করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান।