‘নৌকা’ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর অপেক্ষায় ময়মনসিংহের ইয়াসিন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নান্দনিক নকশায় কাঠের তৈরি স্মারক নৌকা উপহার দিতে চান ময়মনসিংহের কাঠমিস্ত্রি ইয়াসিন আলী।

ইলিয়াস আহমেদ ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2018, 10:58 AM
Updated : 1 Nov 2018, 11:17 AM

এজন্য তিনি প্রায় এক বছর ধরে ঢাকা গিয়ে ও আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে ধর্ণা দিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাননি বলে হতাশার কথা জানিয়েছেন।

তবে প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহে আসা উপলক্ষে কিছুটা আশার আলো দেখছেন তিনি। শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহ আসার কথা রয়েছে।

ভালুকা উপজেলার মেজরভিটা গ্রামের ইয়াসিন আলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জননেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কাছ থেকে দেখার জন্য নৌকা তৈরির পরিকল্পনা করি।

“একাশিকাঠ দিয়ে দুই বছর ধরে ১০টি নৌকা তৈরি করেছি। তারপর এ বছর জানুয়ারি থেকে বিভিন্ন নেতাদের কাছে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার কথা বললেও তারা শুধু আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন। নৌকাগুলো শেখ হাসিনাকে না দিতে পারলে মরেও শান্তি পাব না।”

প্রধানমন্ত্রীর ময়মনসিংহে আসার খবর তিনি পেয়েছেন জানিয়ে বলেন, “খবর শুনে মনটা ভরে গেছে।

“ভালুকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা আশ্বস্ত করেছেন, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করিয়ে দেবেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার অপেক্ষায় আছি।”

৪০ বছর বয়সী ইয়াসিন ছেলেবেলা থেকেই শেখ হাসিনার ভক্ত বলে জানিয়েছেন তার স্ত্রী রোকেয়া আক্তার।

তিনি বলেন, “ছোটকাল থেকেই আমার স্বামী হাসিনার ভক্ত। তাই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার জন্য দুই বছরে ১০টি কঠের নৌকা তৈরি করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সাথে কোনোভাবেই দেখা করতে পারছে না।

“দুশ্চিন্তায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে। এখন কোনো কাজকর্ম করে না। এ কারণে সমস্যায় পড়েছি। তিন মেয়ে নিয়ে অভাবের সংসারে ভাড়া বাসায় কষ্টে দিন যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে নৌকাগুলো দিতে পারলে আবার সে কাজে মন দিলে সংসারে শান্তি ফিরবে বলে আশা করছি।”

মেজরভিটা গ্রামের আব্দুর রফিক নামে এক ব্যক্তি বলেন, “ইয়াসিনকে আমরা নৌকাপাগল বলে ডাকি। সে নৌকার খুব ভক্ত। তাই সংসার ও মেয়েদের কথা চিন্তা না করে সব কাজ বাদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ পাওয়ার জন্য ১০টি নৌকা তৈরি করেছে। নৌকাগুলো প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেওয়ার জন্য বিভিন্ন নেতাদের কথায় ঢাকা গিয়েও প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ না পেয়ে ঘুরে আসছে।”

ওই গ্রামের বাবুল হোসেন নামে এক ব্যক্তি বলেছেন, “আমরা আশা করছি নেতারা তাকে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করানোর উদ্যোগ নেবেন।”

এ বিষয়ে ভালুকা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তুফা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর জন্য নৌকা তৈরির বিষয়টি প্রশংসনীয়। ইয়াসিন অনেকবার আমার কাছে এসেছে। আমি কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি। আমি চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।”

ময়মনসিংহে সাজ সাজ রব

প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে তাকে স্বাগত জানাতে সড়ক-মহাসড়কজুড়ে এখন তোরণের ছড়াছড়ি। রঙিন ব্যানার, ফেস্টুন আর বিলবোর্ডে সেজেছে পুরো শহর। প্রধান প্রধান সড়ক ছাপিয়ে অলিগলিতেও শোভা পাচ্ছে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে স্বাগত জানিয়ে পোস্টার-ব্যানার-প্ল্যাকার্ড আর বিলবোর্ড।

ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো. ইকরামূল হক টিটু বলেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন এই বিভাগে কয়েক হাজার কোটি টাকার দুই শতাধিক উন্নয়ন প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও উদ্বোধন করবেন।

শেখ হাসিনা প্রায় সাড়ে পাঁচ বছর পর ময়মনসিংহে আসছেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে চাঙা ভাব।

জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, শুক্রবার বিকেল ৩টায় ঐতিহাসিক সার্কিট হাউজ মাঠে জনসভায় ভাষণ দেবে প্রধানমন্ত্রী।

“সেখানে ১৫ লক্ষাধিক লোকসমাগমের লক্ষ্য নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বসে নেই দলটির কোনো নেতাকর্মী। তারা দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দলটির শীর্ষ নেতাকে বরণ করে নিতে। রেকর্ড জনসমাগম ঘিরে ‘ময়মনসিংহের মাটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি’ পুরনো এই প্রবাদ আবারও নতুন করে প্রধানমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরা হবে।

এর আগে ২০১৩ সালের ৩ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ময়মনসিংহ এসেছিলেন বলে তিনি জানান।

জেলা বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সভাপতি এম এস ফুয়াদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা ঘিরে দলীয় প্রধানের দৃষ্টি কাড়তে কয়েক কোটি টাকার তোরণ, ব্যানার আর প্যানাফ্ল্যাক্স নির্মাণ করেছেন দলটির নেতাকর্মী ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা।

সরেজমিনে ময়মনসিংহ শহরের প্রবেশপথ শিকারিকান্দা থেকে শহরের মাসকান্দা বাইপাস, চরপাড়া, মাসকান্দা, নতুন বাজার, গাঙ্গিনার পাড়মোড়সহ সব সড়কে পাল্লা দিয়ে চলছে ব্যানার লাগানোর প্রতিযোগিতা।

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জহিরুল হক খোকা বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর জনসভায় জনতার ঢল নামবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী দলীয় নেতা-কর্মীদের দিকনির্দেশনা দেবেন। এ জনসভায় ১৫-১৬ লাখ লোকসমাগমের লক্ষ্য রয়েছে আমাদের।”

জেলা প্রশাসক সুভাষ চন্দ্র বিশ্বাস বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ময়মনসিংহ বিভাগে সফরকালে ১০৩টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ৯৩টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন। এজন্য ইতোমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।”