মেয়র লোকমান হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’ গ্রেপ্তার, রিমান্ডে

নরসিংদীর পৌর মেয়র লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের সাত বছর পর কথিত মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

বেনজির আহমেদ বেনু নরসিংদী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 Oct 2018, 02:50 PM
Updated : 31 Oct 2018, 02:51 PM

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই মো. জাকারিয়া জানান, মঙ্গলবার রাতে রাজধানীর ডিওএইচএস এলাকার একটি বাড়ি থেকে নরসিংদী জেলা গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।  

তিনি জানান, বুধবার তাকে নরসিংদীর অতিরিক্ত কিচারিক হাকিম শামীমা আক্তারের আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের হেফাজতের (রিমান্ড) আবেদন করা হয়।

“শুনানি শেষে আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।”

মোবারককে আদালতে নেওয়া হলে আদালত ভবনের বাইরে কয়েকশ নারী-পুরুষ তার শাস্তি দাবি করে বিক্ষোভ করে এবং শ্লোগান দেয়। তারা তার দিকে পচা ডিম ও জুতা নিক্ষেপ করে।

এসআই জাকারিয়া জানান, মোবারক প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেন হত্যা মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি। ওই মামলার অভিযোগপত্রে তাকে ওই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী বলা হয়।

গত ২৫ অক্টোবর তিনি মালয়েশিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন। এতদিন পলাতক ছিলেন। নরসিংদীতে তার মালিকানাধীন একটি জমি বিক্রি করতে দেশে এসে আত্মগোপনে ছিলেন বলে জাকারিয়া জানান।  

“গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় রাজধানীর ডিওএইচএসের একটি বাসা থেকে তাকে মঙ্গলবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তার সঙ্গে রেহানুল ইসলাম ভূইয়া লেলিন নামের আরেকজনকে আটক করা হয়েছে। লেনিন বিভিন্ন মামলার গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত আসামি।”

২০১১ সালের ১ নভেম্বর পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধঅরণ সম্পাদক লোকমান হোসেন জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলাকারীর গুলিতে নিহত হন।

ওই ঘটনায় নিহতের ভাই কামরুজ্জামান কামরুল বাদী হয়ে তৎকালীন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই সালাহউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুকে প্রধান আসামি করে ১৪ জনের বিরুদ্ধে নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

আসামিদের মধ্যে মোবারক হোসেন মোবা পলাতক ছিলেন। বাকি ১৩ জনের সকলেই গ্রেপ্তার হলেও পরে জামিনে বেরিয়ে যান। পুলিশ প্রায় আট মাস তদন্ত করে ২০১২ সালের ২৪ জুন সালাউদ্দিনসহ এজাহারভুক্ত ১১ আসামিকে বাদ দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

তাতে মামলার এজহারভুক্ত ৩ নম্বর আসামি শহর আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ মোবারক হোসেন মোবা, ২ নম্বর আসামি নরসিংদী পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ-সভাপতি আবদুল মতিন সরকার, তার ছোট ভাই শহর যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল ইসলাম সরকারসহ অন্য ১২ জনকে আসামি করা হয়।

এই অভিযোগপত্রে অনাস্থা জানিয়ে ২০১২ সালের ২৪ জুলাই নরসিংদীর মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে নারাজি দেন মামলার বাদী কামরুজ্জামান কামরুল। আদালত ২৫ জুলাই নারাজি আবেদন খারিজ করে অভিযোগপত্র বহাল রাখে। পরবর্তীতে ২৮ অগাস্ট নারাজি আবেদন খারিজের বিরুদ্ধে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে আপিল করেন বাদী। আদালত ২ সেপ্টেম্বর সেই আবেদন গ্রহণ করে ৪ নভেম্বর শুনানি শেষে ফের নারাজি আবেদন খারিজ করে। এরপর উচ্চ আদালতে যান বাদী।

এরপর তিনি ওই অভিযোগপত্র বাতিল করে সিআইডির মাধ্যমে ফের তদন্তের আবেদন জানিয়ে নিম্ন আদালতে বিচারকার্য স্থগিত রাখতে উচ্চ আদালতে রিট করেন। হাই কোর্ট আবেদনটি আমলে নিয়ে নিম্ন আদালতে বিচার কাজ স্থগিত করে দেয়।

প্রয়াত লোকমান হোসেনের ছোট ভাই কামরুজ্জামান বলেন, “আমরা জানতে পেরেছি আমার বড় ভাই লোকমান হোসেন হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী মোবারক হোসেন মোবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এটি নরসিংদীবাসীর জন্য কতটা স্বস্তিদায়ক তা বলে বোঝানো যাবে না। তাও আবার লোকমান ভাইয়ের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকীর আগের দিন। এ জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আমার পরিবারসহ নরসিংদীবাসী কৃতজ্ঞ।”

এদিকে মোবারক গ্রেপ্তার হওয়ায় শহরের বিভিন্ন স্থানে তার শাস্তির দাবিতে  মিছিল হয়েছে।

১ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) লোকমান হোসেনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে জেলা আওয়ামী লীগ, শহর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ-যুবলীগের উদ্যোগে মিলাদ মাহফিল, দোয়া ও গণভোজের আয়োজন করা হয়েছে।