ক্রিকেটার চামেলি ধুঁকছেন বিছানায়

বাংলাদেশ জাতীয় নারী দলের সাবেক ক্রিকেটার রাজশাহীর চামেলি খাতুন উন্নত চিকিৎসার অভাবে বিছানায় ধুঁকছেন।

বদরুল হাসান লিটন রাজশাহী প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2018, 12:02 PM
Updated : 31 Oct 2018, 03:18 PM

প্রায় এক মাস ধরে বিছানায় পড়ে আছেন ৩২ বছর বয়সী এই ক্রীড়াবিদ, যার জীবনের একটি যুগ কেটেছে অ্যাথলেটিকস, ফুটবল আর ক্রিকেটের মাঠে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মুনজুর রহমান বলেন, “লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়াসহ মেরুদণ্ডে হাড়ের ব্যথা রয়েছে চামেলির। মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় অবশ হয়ে যাচ্ছে শরীরের ডান পাশ।

“মেরুদণ্ডে শিগগির অস্ত্রোপচার জরুরি। প্রায় এক মাস আগে তাকে ভারতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু অর্থসঙ্কটে তিনি যেতে পারছেন না। রাজশাহীতে আমরা তাকে সাধ্যমত চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছি।”

রাজশাহী নগরের দরগাপাড়ায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন চামেলি। জরাজীর্ণ ছোট্ট দুটি ঘরে চামেলি, তার বাবা রোস্তম আলী, মা মনোয়ারা বেগম ও অবিবাহিত বড় বোন চম্পা খাতুনের সংসার।

রাজশাহীর হেতেমখা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করা চামেলি একজন আনসার সদস্য। তার আয়েই চারজনের সংসারটি চলে।

বড় বোন চাম্পা খাতুন বলেন, “চামেলির খেলার নেশা ছোটবেলা থেকেই। কোনোভাবেই তাকে আটকে রাখা যেত না। পালিয়ে পালিয়ে খেলতে যেত। স্কুলের সব খেলায় সে প্রথম হত। এখন সবকিছু অনিশ্চয়তার মধ্যে।”

১৯৯৯ থেকে ২০১১ পর্যন্ত জাতীয় নারী ক্রিকেট দলে ছিলেন চামেলি। ২০১০ সালে এশিয়া কাপে রানার আপ বাংলাদেশ দলেও তিনি খেলেছেন।

এখন তিনি বিছানায় ছটফট করছেন। কাতরাচ্ছেন মেরুদণ্ডের ব্যথায়। বিছানায় ছয়টি বালিশে হেলান দিয়ে কথা বলার সময় তার ডান পা ও হাত কাঁপছিল।

তার মা ও বোন জানান, ঘণ্টাখানেক পরপর চামেলির পাশ ফিরিয়ে দিতে হয়। সেই সঙ্গে ম্যাসাজ করতে হয় নিয়মিত। তা না হলে অবশ হয়ে যেতে থাকে।

চামেলি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, প্রায় আট বছর আগে জিম করার সময় তিনি কোমরে ব্যথা পান। এরপর থেকে মাঝেমধ্যেই ব্যথা অনুভব হত। ওষুধ খেয়ে ব্যথা কমিয়ে আনসারের চাকরি চালিয়ে যাচ্ছিলেন। দেড় বছর আগে ঢাকা থেকে বদলি হয়ে রাজশাহী চলে আসেন।

“গত ২৫ সেপ্টেম্বর অফিসে কাজ করার সময় ডান হাত আর পায়ে কাঁপুনি উঠে আমি পড়ে যাই। তখন ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন বাইরে গিয়ে সার্জারির জন্য দরকার কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা।”

চামেলির মা-বাবাও অসুস্থ। তার মায়ের প্রতি সপ্তায় ৬০০ টাকার ওষুধ লাগে। চামেলি ছাড়া তাদেরও বেঁচে থাকা কঠিন।

অসুস্থ এই ক্রিকেটার বলছেন, প্রায় এক মাস আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে সাহায্যের আবেদন করে কোনো সাড়া পাননি তিনি।

“গত ২৮ সেপ্টেম্বর বোর্ডের কর্মকর্তা ফাইম আহমেদকে আমার বিষয়টা জানাই। তিনি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্রসহ জাতীয় দলের কাগজপত্র দ্রুত মেইল করে পাঠাতে বলেন। ওই দিনই পাঠিয়ে দিই। কিন্তু এক মাস হয়ে গেল, কোনো সাড়া মেলেনি। অবশ্য ফাইম আহমেদ ব্যক্তিগতভাবে কিছু সহযোগিতা করেছেন।”

তবে বিসিবির মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, চামেলির অভিযোগ সঠিক নয়।

“বিসিবির সিইও, বিসিবির চিকিৎসক একাধিকবার তাকে ঢাকায় আসতে বলেছেন, যাতে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যায়। খরচের ব্যবস্থা বিসিবিই করবে। বিসিবি প্রয়োজনে বিদেশে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে- এ কথাও তাকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো এক অজ্ঞাত কারণে সে ঢাকায় আসতে চায় না।”