শনিবার নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে সামসুজ্জোহা ক্রীড়া কমপ্লেক্স মাঠে আয়োজিত জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
‘জেগেছে নারায়ণগঞ্জ, জেগে ওঠো শেখ হাসিনার বাংলাদেশ’ শ্লোগানে স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি, আগুন সন্ত্রাস ও অশুভ শক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে এ জনসভার আয়োজন করা হয়।
দুপুর থেকেই বিভিন্ন এলাকার আওয়ামী লীগ ও অংগ সংগঠনের হাজার হাজার নেতাকর্মী রং-বেরংয়ের ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে, ঢাক-ঢোল পিটিয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিলে জনসভাস্থলে আসতে থাকেন।
বিকালের মধ্যে পুরো জনসভাস্থল জনসমুদ্রে পরিণত হয়। আশপাশের ভবনগুলোতেও বিপুল সংখ্যক মানুষকে জমায়েত হতে দেখা যায়।
জনসভায় শামীম ওসমান বলেন, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের জন্য মাঠে নামবে না। ওরা নির্বাচন বন্ধ করে এদেশকে আফগানিস্তান বানানোর চিন্তা করছে।
“ওরা সেই শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে চায় যারা জাহাজ ভরে বাংলাদেশে অস্ত্র এনে উলফার সৃষ্টি করেছে, বিচ্ছিন্নবাদীদের আশ্রয় দিয়েছে। এদেশে ওই শক্তিকে ক্ষমতায় আনতে যারা একসাথে ৫শ জায়গায় বোমা হামলা করেছিল। ওরা ওই শক্তি সৃষ্টি করতে চায় যারা জঙ্গিবাদ ও বাংলা ভাই সৃষ্টি করেছিল; যারা বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে পাঁচ বার চ্যাম্পিয়ন করেছিল।”
শকুনরা আকাশে উড়ছে, থাবা মারার চেষ্টা করছে; মানচিত্রে থাবা মারতে চায়; স্বাধীনতার পক্ষের শক্তিকে থাবা মারতে চায়; বাংলাদেশকে ওরা ক্ষত বিক্ষত করতে চায় বলে মনে করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
“আমরা ইতিহাসসাক্ষী; যতবার নারায়ণগঞ্জ জেগেছে, ততবার সারা বাংলাদেশ জেগেছে। কারণ এই নারায়ণগঞ্জেই আওয়ামী লীগের সুতিকাগার।”
বাংলাদেশে মানচিত্রের উপর আঘাত, তার নেত্রীর উপর আঘাত, কেন্দ্রীয় নেতাদের উপর হামলা কিংবা মানুষকে আগুনে জ্বালিয়ে বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসেবে পরিণত করা চেষ্টা করলে পরিণতি ভালো হবে না বলে হুঁশিয়ার করেন শামীম ওসমান।
“আমরা পরিষ্কারভাবে বলি, হুকুম দেওয়ার পরে আপনাদের বাড়ির একটি ইটও বাংলাদেশে থাকবে না। আমরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান।”
অশুভ শক্তি প্রতিরোধে সবাইকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান তিনি।
“আপনারা প্রস্তুত থাকবেন; নভেম্বরর প্রথম সপ্তাহ থেকে শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশে সমস্ত হায়েনারা এবং শকুনরা আঘাত করবে; চেষ্টা করবে দেশকে অস্থিতিশীল করতে। নির্বাচন তাদের লক্ষ্য না, তাদের লক্ষ্য নির্বাচন বন্ধ করা।
ড. কামাল হোসেনকে তিনি দেউলিয়া উল্লেখ করে বলেন, “বিএনপি মনে করছেন তারা ড. কামাল হোসেনকে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে কামাল হোসেন মনে করছেন তারা বিএনপিকে ব্যবহার করছেন।”
শামীম ওসমান বলেন, বিএনপি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে চায়; আর সে কারণেই তারা এমন কিছু ব্যক্তিত্বকে কাছে টেনে নিয়েছে যারা ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিতে পরিচিত। তাদের ব্যবহার করে নির্বাচন থেকে সরে যেতে চায়। তারা কিছু একটা করতে চায়।
সামনে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কঠিন সময় আসছে বলে দলের নেতাকর্মীদের হুঁশিয়ার করে এই সাংসদ বলেন, এই কঠিন সময়ে ঠিক করবেন এই দেশ কোন দিকে যাবে। দেশ কি আফগানিস্তান হবে, নাকি দেশ পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।
কামাল হোসেনদের জনবিচ্ছিন্ন এবং তারা প্রভুর আদেশে চলেন মন্তব্য করে তিনি বলেন, “তারা জ্ঞান পাপী, তারা এই দেশটা বেচে খায়।”
কামাল হোসেন ও তার সহযোগীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “কোথায় বসে কারা কী প্ল্যান করে আমরা জানি। একটি গ্রুপকে ভাড়া করা হয়েছে, বিদেশ থেকে টাকা এসেছে আমরা জানি। বিমানবন্দরে টাকা ধরা পড়ে।”
দেশের একজন মানুষের উপরও আক্রমণ হলে নারায়ণগঞ্জবাসী আর বসে থাকবে না বলে হুঁশিয়ার করেছেন শামীম।
নেত্রীর কথায় ধৈর্য ধরেছেন দাবি করে তিনি বলেন, “কিন্তু আর না। জনগণের উপর হামলা করলে বসে থাকব না।”
সমাবেশ চলার সময় শামীম ওসমান স্বাধীনতা বিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের শপথ করান।
ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগ সভাপতি সাইফুল্লা বাদলের সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের মহানগর সহ-সভাপতি ওয়জেদ আলী খোকন, চন্দন শীল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, বন্দর থানা সভাপতি এম এ রশিদ, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা সভাপতি মজিবুর রহমান, সোনারগা থানা সভাপতি সামছুল ইসলাম ভুইয়াসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।