গণস্বাস্থ্যের ভবন ‘দখল করে’ টেক্সটাইল কোম্পানির ব্যানার

জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে তিন মামলার বাদীপক্ষের লোকজন আশুলিয়ায় গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে হামলা-ভাঙচুর চালিয়ে একটি ভবন ও কিছু জমি দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। 

সাভার প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2018, 07:59 AM
Updated : 27 Oct 2018, 07:59 AM

তারা বলছেন, মামলাকারী তিনটি পক্ষের লোকজন শুক্রবার বিভিন্ন সময়ে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওই হামলা চালায়। শনিবারও তাদের লোকজন দখল করা অংশগুলোতে অবস্থান করছে।

এর মধ্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের পিএইচএ ভবন দখল করে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের ব্যানার ঝুলিয়ে দিয়েছে একটি পক্ষ। আরেকটি পক্ষ ওই ভবনের প্রবেশ পথের ১৩.২৫ শতাংশ জায়গার দখল নিয়েছে। আর তৃতীয় একটি পক্ষ পিএইচএ ভবনের অডিউটোরিয়ামে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালিয়েছে বলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের অভিযোগ।

টেলিভিশন অনুষ্ঠানে সেনাপ্রধানকে নিয়ে মন্তব্যের জন্য আলোচনায় থাকা গণস্বাস্থ্যের ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরীর বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় যেসব মামলা হয়েছে, তার একটির বাদী মির্জানগর এলাকার কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী মহিবুর রব।

ওই ভবনের সামনের ১৩.২৫ শতাংশ জমির মালিকানা দাবি করে আসছেন জাফরুল্লাহর বিরুদ্ধে দায়ের করা আরেক মামলার বাদী স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিন।

আর অডিউটোরিয়ামে হামলাকারীরা আরেক মামলার বাদী মোহাম্মদ আলীর লোক বলে গণ্যস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের ভাষ্য।

আশুলিয়া থানার ওসি রিজাউল হক দীপু বলছেন, শুক্রবার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তবে হামলা-দখলের অভিযোগের বিষয়ে কাজী মহিবুর রব, নাসির উদ্দিন বা মোহাম্মদ আলীর ভাষ্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম জানতে পারেনি।

পিএইচএ ভবনের পরিচালক অনিল কুমার ভৌমিক বলেন, ১৫ একর জমির উপর নির্মিত পিএইচএ ভবনে মিলনায়তন ও ডরমেটরি রয়েছে। সেখানের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সম্মেলন হয়।

“শুক্রবার সকালে বহিরাগতরা সেখানে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়। এ সময় তারা ভবনে ভাংচুর করে, মূল্যবান মালামাল লুট করে, হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থীদের মারধর এবং গাছপালা কেটে ফেলে।”

হামলাকারীদের বাধা দিতে গিয়ে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী সে সময় মারধরের শিকার হন দাবি করে অনিল কুমার বলেন, “এ ব্যাপারে আশুলিয়া থানায় অভিযোগ করতে গেলেও পুলিশ বিষয়টি আমলে নেয়নি।”

এদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নাসির উদ্দিনের লোকজন পিএইচএ ভবনের প্রবেশ পথের ১৩.২৫ শতাংশ জায়গা দখল করে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন গণ্যস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন।

তিনি বলেন, “নাসির বাহিনীর লোকজন ভবনের মূল ফটক ও নিরাপত্তা পোস্টের স্থাপনা ভেঙে ফেলেছে। পিএইচএ ভবনে হামলা চালিয়ে মূল্যবান অনেক জিনিসপত্র লুটে নিয়েছে। বেশকিছু গাছও তারা কেটে নিয়ে গেছে।” 

আরেক মামলার বাদী মোহাম্মদ আলীর লোকজন শুক্রবার আলাদাভাবে গণ্যস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মীদের ওপর হামলা চালায় অভিযোগ করে আলমগীর বলেন, “তখন দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের পর তারা পিএইচএ ভবনের অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়।”

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার ওসি রিজাউল হক দীপু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংঘর্ষের খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। কেউ লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।”

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের বিষয়েও পুলিশ খোঁজ খবর নিচ্ছে বলে জানান ওসি।

বিএনপি সমর্থক পেশাজীবী নেতা জাফরুল্লাহসহ গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কয়েকজন কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে জমি দখল, চাঁদাবাজি, মাছ চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মোট পাঁচটি মামলা হয়েছে আশুলিয়া থানায়।

এর মধ্যে কটন টেক্সটাইল ক্রাফটস লিমিটেডের চেয়ারম্যান কাজী মহিবুর রব গত ২৪ অক্টোবর জাফরুল্লাহকে প্রধান আসামি করে আশুলিয়া থানায় মাছ চুরির মামলা করেন।

তার আগে ২৩ অক্টোবর রাতে নাসির উদ্দিন এবং ১৫ অক্টোবর রাতে মোহাম্মদ আলী জমি দখলের চেষ্টা ও চাঁদা দাবির অভিযোগ মামলা করেন জাফরুল্লাহসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।

একের পর এক মামলার মধ্যেই গত ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ‘গণস্বাস্থ্য কলেজ ও হাসপাতাল’ এবং ‘গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেড’ কারখানায় র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে। অভিযানে মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষধ সংরক্ষণ ও লাইসেন্স নবায়ণ না করার অভিযোগে ২৫ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি এন্টিবায়োটিক বিভাগ সিলগালা করে দেওয়া হয়।