ছয় লেনের কালনা সেতুর কাজ শুরু নভেম্বরে

মধুমতি নদীর উপর দেশের ‘প্রথম’ ছয় লেনের সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে নভেম্বরে। 

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Oct 2018, 04:01 PM
Updated : 25 Oct 2018, 04:04 PM

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীর শংকরপাশা ও নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কালনা পয়েন্টে এ সেতু নির্মিত হবে।

সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এ সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নদীর দুপাড়ে মালামাল আনা শুরু করেছে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও সেতু কর্তৃপক্ষ নড়াইলের লোহাগড়ার মদিনাপাড়ায় ভাড়া বাড়িতে অফিস করেছে। পার্শ্ববর্তী গন্ধবাড়িয়া গ্রামে বাড়ি ভাড়া নিয়ে কর্মকর্তাদের আবসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, এ বছরের নভেম্বরের প্রথম সপ্তহে এ সেতুর চেস্ট পাইলিং শুরু হবে।

ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ছয় লেনের এ সেতু হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। চারটি মূল লেনে দ্রুতগতির এবং দুটি লেনে কম গতির যানবাহন চলাচল করবে। সেতুর দৈর্ঘ্য হবে ৬৯০ মিটার ও প্রস্থ ২৭ দশমিক ১ মিটার। উভয় পাশের অ্যাপ্রোচ সড়ক হবে ৪ দশমিক ৩০ কিলোমিটার। সেতু নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৯৫৯ কোটি টাকা।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কর্পোরেশন এজেন্সির (জাইকা) অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হচ্ছে। জাপানের টেককেন কর্পোরেশন, ওয়াইবিসি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেড যৌথভাবে এ সেতুর ঠিকাদার।

গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার চরভাটপাড়া গ্রামের আউয়াল শেখ ও নড়াইল জেলার লোহাগড়া উপজেলার জয়পাশা গ্রামের কামরুল ইসলাম জানান, কালনা ঘাটে মধুমতি নদী ফেরিতে পারাপারে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। এই সেতু নির্মিত হলে নড়াইল, মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহসহ ১০ জেলার মানুষের ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগ সহজ হবে, কমবে দুর্ভোগ ও দূরত্ব। বোনাপোল স্থল বন্দরের সাথে ঢাকার যোগাযোগ ত্বরান্বিত হবে।

আউয়াল শেখ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। এ সেতুর কাজ নভেম্বরে শুরু হচ্ছে জেনে আমরা খুবই আনন্দিত।”

গোপালগঞ্জ সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খোন্দকার মো. শরিফুল আলম বলেন, পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হলে গোটা বরিশাল বিভাগ, মাদারীপুর, ফরিদপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ, খুলনা, বাগেরহাট, নড়াইল, যশোর, সাতক্ষীরা, মাগুরা, ঝিনাইদহসহ আশপাশের আরও কয়েকটি জেলার মানুষ সুফল পাবে।

ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশের জন্য মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতু নির্মাণ সময়ের দাবি বলে মন্তব্য করেন তিনি।

শরিফুল জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে এ  সেতু নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তী মেয়াদে সরকার গঠন করে ২০১৪ সালের ১৯ জানুয়ারি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় সেতুটির উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার (ডিপিপি) চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

২০১৫ সালের ২৪ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মধুমতি নদীর উপর কালনা সেতুর ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন।

শরিফুল বলেন, “এ সেতুর সাথে সংযোগ সড়কটি হবে এশিয়ান হাইওয়ের অংশ। সিলেটের তামাবিল বন্দরের সাথে এ সড়ক বিস্তৃত থাকবে। ফলে আমাদের বেনাপোল বন্দরের সাথে আর্ন্তাতিক যোগাযোগ স্থাপিত হবে।”

সেতু প্রকল্পের ম্যানেজার সুমন সিং বলেন, নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কালনা সেতুর টেস্ট পাইলিং হবে। ডিসেম্বরে মূল পাইলং-এর কাজ শুরু করা হবে। পাশাপাশি সংযোগ সড়কের কাজ চলবে।

তিনি জানান, গত ২৪ জুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জাপানের টেককেন কর্পোরেশন, ওয়াইবিসি ও বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম লিমিটেডের সঙ্গে সেতু কর্তৃপক্ষের কার্যাদেশ চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে।

চুক্তির দিন থেকে ৩ বছরের মধ্যে সেতুর নির্মাণ কাজ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে সম্পন্ন করতে হবে বলে জানান সুমন।

ক্রস বর্ডার রোড নেটওয়ার্ক ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের পরিচালক কে এম আতিকুল হক বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও ব্যতিক্রমী ছয় লেনের সেতু হবে কালনা সেতু।

“এটিই হবে দেশের প্রথম ৬ লেনের সেতু। এটি এ অঞ্চলে যোগাযোগের ক্ষেত্রে নতুন নিগন্তের দ্বার উম্মেচন করবে।”