উখিয়ায় সরকারি পাহাড় দখল করে স্থাপনা নির্মাণ

কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলায় সরকারি বন দখল করে বসতবাড়িসহ নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এর সঙ্গে স্থানীয় বনবিট কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।

কক্সবাজার প্রতিনিধিশংকর বড়ুয়া রুমি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Oct 2018, 04:47 PM
Updated : 21 Oct 2018, 04:47 PM

স্থানীয়দের অভিযোগ, বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের হলদিয়া বিটের আওতাধীন জামবাগানের পুরো এলাকাজুড়ে অবৈধভাবে কাঁচা, পাকা ও আধাপাকাসহ নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। প্রকাশ্যে এসব স্থাপনা তৈরি হলেও স্থানীয় বিট বিভাগ কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না।

হলদিয়া বিট কর্মকর্তা সরকারি বন দখলদারদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে এসব স্থাপনা তৈরির সুযোগ করে দিচ্ছেন বলেও স্থানীয়দের ভাষ্য।

ফলে হলদিয়া বিটের আওতায় পুরো জামবাগান এলাকাজুড়ে বন দখল করে স্থাপনা তৈরির হিড়িক পড়েছে।

তবে হলদিয়া বনবিট কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

শনিবার কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জের হলদিয়া বিটের আওতাধীন জামবাগান এলাকা ঘুরে দেখা গেছে পুরো এলাকাজুড়ে সরকারি পাহাড় দখল করে নানা স্থাপনা তৈরি হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিস্তীর্ণ পাহাড়ি এলাকায় নানা স্থাপনা তৈরি হয়ে গেছে। অনেকে পাকা দালানও নির্মাণ করেছে।

জামবাগান এলাকায় সড়কের পাশে ইট, বালি ও কংকর স্তূপ করে পাকা দালান নির্মাণ করছিলেন স্থানীয় মৃত মীর আহমদের ছেলে মো. জহির (৫০), মৃত লোকমান হাকিমের ছেলে আব্দুল আজিজ (৩৫) ও দলিল আহমদসহ আরও কয়েকজন।

এছাড়া পাতাবাড়ী সড়কের মরিচ্যা এলাকায় পাকা দালান নির্মাণ কাজ চালাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা আবু তাহের, মঞ্জুরুল ইসলাম ও রমজান আলীসহ অনেকে।

বনবিট কার্যালয় পাহাড় (এক সময় এখানে বিট কার্যালয় ছিল) কেটে চলাচলের পথ তৈরি করে পাকা দালান নির্মাণ করেছেন দলিল আহমদ এবং সড়কের পাশে দোকানঘর তৈরি করেছেন আব্দুল আজিজ।

জামবাগান এলাকার বাসিন্দা জয়নাল উদ্দিন (৫৫) বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “স্থানীয় হলদিয়া বনবিট কর্মকর্তা অধিকাংশ সময় নিজের কর্ম এলাকায় উপস্থিত থাকেন না। মাঝে মধ্যে এলেও দখলদারদের সঙ্গে লেনদেনে ব্যস্ত থাকেন। এতে দখলদারদের বিরুদ্ধে উচ্ছেদ অভিযান না থাকায় সরকারি পাহাড় দখল হয়ে যাচ্ছে।”

একই এলাকার মোস্তাক আহমদ (৩৫) বলেন, “স্থানীয় বিট কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন মাঝে মধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালিয়ে সাধারণ মানুষের কাঁচা স্থাপনা উচ্ছেদ করেন।”

মূলত বিট কর্মকর্তার দাবি মতো টাকা না দেওয়ায় এ অভিযান চালানো হয় বলে অভিযোগ মোস্তাকের।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মোস্তাক বলেন, "দখলদারদের কাছ থেকে স্থানীয় বিট কর্মকর্তার মোটা অংকের টাকা লেনদেন হওয়ায় পাকা দালান নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। এসব স্থাপনা নির্মাণকারীদের কাছ থেকে তিনি জনপ্রতি ৪/৫ লাখ টাকা করে নিয়েছেন।"

বিট কর্মকর্তাকে স্থানীয়রা অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দখলদারদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হলদিয়া বিট কর্মকর্তা মো. মহিউদ্দিন।

তিনি বলেন, “দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান না চালানোর অভিযোগটি সত্য নয়। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে অবৈধ দখলে যাওয়া ৮টি পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে গড়ে ওঠা স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। দখল অভিযান অব্যাহত থাকবে।”

বিট কার্যালয়ে শুধু একজন মালী কর্মরত থাকার কথা উল্লেখ করে মহিউদ্দিন বলেন, জনবল সংকটের কারণে অনেক সময় অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।

উখিয়া রেঞ্জের বন কর্মকর্তা কাজী তারিকুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলদিয়া বিটের অধীন জামবাগান এলাকায় কিছু সরকারি পাহাড় দখল করে নানা স্থাপনা তৈরির কথা শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর নিয়ে অভিযান চালানোর পাশাপাশি দখলদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ইতিমধ্যে মো. জহির নামের এক অবৈধ দখলদারের বিরুদ্ধে সরকারি পাহাড় দখল করে পাকা দালান নির্মাণের অভিযোগে নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

তারিকুর বলেন, "অবৈধ দখলদার জহির জায়গাটি জোত বলে দাবি করেছেন। এর স্বপক্ষে তাকে এক সপ্তাহের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নথিপত্র দেখিয়ে প্রমাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তিনি যথাযথ প্রমাণে ব্যর্থ হলে নির্মিত পাকা দালান অভিযান চালিয়ে উচ্ছেদ করা হবে।"

হলদিয়া বিটের জামবাগান এলাকায় পাহাড় দখল করে পাকা দালান নির্মাণকারী মো. জহির নোটিশ পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, তার জায়গাটি এখন বনবিভাগের অধীনে নেই। এটি এখন জোত খতিয়ানভুক্ত। তাই পাকা দালান নির্মাণ করছেন।

হলদিয়া বিটের পুরাতন কার্যালয় সংলগ্ন পাহাড়ের পাদদেশ দখল করে দোকানঘর নির্মাণকারী আব্দুল আজিজ বলেন, “এলাকার অধিকাংশ বসত বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনা গড়ে উঠেছে বনবিভাগের জায়গার উপর। তাই পাহাড়ের পাদদেশে সড়কের পাশে সরকারি পরিত্যক্ত জায়গাটিতে দোকানঘর নির্মাণ করে জীবিকা নির্বাহ করছি।”

এ ব্যাপারে কক্সবাজার দক্ষিণ বনবিভাগের ভারপ্রাপ্ত বনসংরক্ষক হক মাহবুব মোরশেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সরকারি পাহাড় দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।