ওই চারজনের মধ্যে লুৎফর রহমান মোল্লা (৩৭) নামে এক গাড়ি চালকের লাশ শনাক্ত করেছেন তার স্ত্রী। নারায়ণগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা বাকি তিনটি লাশের পরিচয় এখনও পুলিশ জানাতে পারেনি।
লুৎফরের স্ত্রী রেশমা বেগম সাংবাদিকদের বলেছেন, তাদের বাসা ঢাকার রামপুরায়। শুক্রবার বিকালে ‘ট্রিপ নিয়ে’ বের হওয়ার পর তার স্বামীর আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। টিভিতে খবর আর ছবি দেখে তিনি মর্গে এসে লাশ শনাক্ত করেছেন।
রেশমা বলছেন, তার স্বামী গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতেন; কোনো অপরাধে তিনি জড়িত ছিলেন না।
তবে ঘটনাস্থলে এক রাউন্ড গুলিসহ দুটি পিস্তল এবং একটি মাইক্রোবাস পরিত্যক্ত অবস্থায় পাওয়ার তথ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) আবদুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, ডাকাত বা সন্ত্রাসীদের ‘কোন্দলে’ ওই চারজন নিহত হয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, নিহত চারজনেরই মাথার পেছনের অংশে রক্তাক্ত ক্ষত।একজনের ঘাড়ের কাছে একটি গর্ত দেখা যায়, আরেকজনের মাথার পেছনের অংশ উড়ে যাওয়ায় বেরিয়ে এসেছে মগজ।
এদিকে ব্যস্ত মহাসড়কের পাশে এভাবে লাশ পাওয়া যাওয়ায় সকালে সেখানে শত শত মানুষ ভিড় করে।
পাঁচরুখী এলাকার বাসিন্দা রায়হান হোসেন বলেন, রাত আড়াইটার দিকে তিনি চারটি গুলির শব্দ পেয়েছিলেন। কিন্তু তখন আর বাসা থেকে বের হননি। ভোরে সড়কে এসে চারটি লাশ পড়ে থাকতে দেখেন।
“একটি মাইক্রোবাস একপাশে পড়ে ছিল। পুলিশ এসে লাশ উদ্ধারের সময় দুটি লাশের নিটে একটি পিস্তল পায়।”
আড়াইহাজার থানার ওসি এম এ হক সকালে সাংবাদিকদের বলেন, নিহতদের বয়স আনুমানিক ৩০-৩৫ এর মত। একজনের পরনে ছিল লুঙ্গি আর বেগুনি রঙের গেঞ্জি। বাকি তিনজনের পরনে ছিল জিন্স আর টি শার্ট। সুরতহালে দেখা গেছে, সবার মাথার পেছনের অংশ থেঁতলানো।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন সে সময় বলেন, “আমাদের প্রাথমিক ধারণা, যেহেতু ঘটনাস্থল থেকে আমরা পিস্তল ও গুলি পেয়েছি; দুই দল ডাকাত ও সন্ত্রাসীদের কোন্দলে এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।”
তবে ঘটনাস্থলের কাছে বান্টি বাজার থেকে ছনপাড়া এলাকা পর্যন্ত দুই কিলোমিটারের মধ্যে পুলিশের দুটি চেকপোস্ট থাকার পরও এ হত্যাকাণ্ড কীভাবে ঘটল, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন স্থানীয় কয়েকজন।
“তাদেরকে পেছন থেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনজনের মাথায় শটগানের গুলি পাওয়া গেছে। প্রত্যেকের মাথায় পাওয়া গুলির ধরণ একই রকম। রাতের কোনো এক সময় তাদের হত্যা করা হয়েছে।”
এদিকে সংবাদমাধ্যমে খবর দেখে বিকালে হাসপাতালে ছুটে আসেন রামপুরা ওয়াপদা রোড এলাকার রেশমা বেগম।
চারজনের মধ্যে কালো গেঞ্জি ও জিন্স প্যান্ট পরিহিত একজনকে নিজের স্বামী লুৎফর রহমান হিসেবে শনাক্ত করে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
রেশমা বলেন, তার স্বামী মাইক্রোবাস চালক। শুক্রবার বিকাল ৫টার দিকে ‘ট্রিপ নিয়ে’ বাসা থেকে বের হন। তারপর থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। শনিবার লুৎফরের ‘ট্রিপ নিয়ে’ রাজশাহী যাওয়ারও কথা ছিল।
স্বামীর নিখোঁজ থাকার বিষয়ে শনিবার ঢাকার রামপুরা থানায় একটি জিডি করেছিলেন জানিয়ে রেশমা বলেন, “আমার স্বামী কোনো বাজে কাজে জড়িত না। আমার দুইটা ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। যারা আমার স্বামীকে এইভাবে হত্যা করল আমি তাদের বিচার চাই।”
মর্গে থাকা বাকি তিনজনের কাউকে চেনেন না বলে এক প্রশ্নের জবাবে জানান রেশমা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তারা মাইক্রোবাসের মালিকানা যাচাই করতে বিআরটিএতে যোগাযোগ করেছেন। লাশ উদ্ধারের ঘটনায় ‘আইনগত ব্যবস্থা’ নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।