কিশোর মুক্তিযোদ্ধার স্মরণে দুর্গাপূজা

পাবনায় কিশোর মুক্তিযোদ্ধা পল্টু মোহন চৌধুরীর স্মরণে আয়োজিত দুর্গাপূজা এলাকাবাসীর মধ্যে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Oct 2018, 09:36 AM
Updated : 19 Oct 2018, 09:36 AM

পাবনা পৌর এলাকার গোপালপুর মহল্লায় শহীদ পল্টু ক্লাব এই আয়োজন করেছে।

ক্লাবের পূজা উৎসব কমিটির সভাপতি স্বাধীন মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, পল্টু ছিলেন ওই মহল্লার প্রফুল্ল কুমার রায়ের ছেলে।

“দশম শ্রেণি পড়ুয়া এক দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধার নাম পল্টু। পরিবারের কাছে তার কোনো ছবিও নেই। কিন্তু দুঃসাহসী এই যোদ্ধার বীরত্বের কথা আমরা শুনেছি পল্টুর সহযোদ্ধাদের মুখে। আমাদের এই উদ্যোগ নতুন প্রজন্মের মাঝে তার দেশপ্রেমের গল্প ছড়িয়ে দিতে।”

পল্টু ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর শহীদ হন জানিয়ে স্বাধীন মজুমদার বলেন, “পল্টু একটি অপারেশনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি নিতে গিয়ে ধরা পড়েন রাজাকার বাহিনীর হাতে। সদর উপজেলার কুচিয়ামোরা এলাকায় নৃশংস নির্যাতনে তাকে হত্যা করে রাজাকার-আলবদররা।

“এলাকার সন্তানের এই সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের গল্প নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে ১৯৯১ সাল থেকে শহীদ পল্টুর নামে দুর্গাপূজার আয়োজন করা হয়ে থাকে। শত প্রতিবন্ধকতা আর প্রতিকূলতার মাঝেও দীর্ঘ ২৭ বছরের ধারাবাহিক আয়োজনে এ বছরও ছেদ পড়েনি।”

এ মণ্ডপে প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী আসেন। প্রতিমা দেখার পাশাপাশি তারা জেনে যান শহীদ পল্টুর আত্মত্যাগের কথা।

পল্টুর স্মরণে দুর্গাপূজার জন্য কোনো নির্ধারিত জায়গা না থাকলেও এলাকাবাসী হিন্দু-মুসলিম সবার স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় মহল্লার যেখানে জায়গা মেলে সেখানেই মণ্ডপ তৈরি করে প্রতিবছর এই আয়োজন করা হয়।

স্বাধীন মজুমদার বলেন, এ বছর পৃষ্ঠপোষকতা দিতে এগিয়ে এসেছেন এসপি গ্রুপের কর্ণধার ব্যবসায়ী সুবল সাহা।

“মানুষকে পল্টুর কথা জানাতে নানা ফেস্টুনে সাজানো হয়েছে পুরো মণ্ডপ। ফেস্টুনে লেখা হয়েছে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়তে শহীদ পল্টুর আত্মত্যাগের কথা।

ওই এলাকার বাসিন্দা পাবনা কলেজের প্রভাষক ইয়াদ আলী মৃধা পাভেল বলেন, “গোপালপুর এলাকা থেকেই পাবনার মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। এ এলাকার প্রতিটি গলিতেই শহীদের রক্তের দাগ লেগে আছে। দেশমাতৃকার বিপদে আকাতরে বিলিয়ে দেওয়া এই শহীদদের রক্ত হিন্দু কি মুসলিমের তা বিবেচ্য নয়। বিবেচ্য বিষয় দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ আর এখানকার পূজা আয়োজনে সেটিই প্রাধান্য পেয়েছে। যা অসাম্প্রদায়িক চেতনায় নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।”

জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী মলয় চাকী বলেন, “অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার যে চেতনা নিয়ে মুক্তিয্দ্ধু হয়েছিল, তার অনন্য উদাহরণ যেন শহীদ পল্টু ক্লাবের পূজা। দুর্গাপূজায় মুক্তির আনন্দ আছে, বিসর্জনের বেদনা আছে, আছে মাতৃভক্তির শিক্ষা। শহীদ পল্টু ক্লাবের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন সেসবের সঙ্গে দেশপ্রেমের চমৎকার সমন্বয়।”

সরেজমিনে দেখা গেছে, নান্দনিক সাজসজ্জার প্রায় আধা কিলোমিটার আলোকিত পথ পেরিয়ে এ মণ্ডপে প্রতিমা দেখতে আসছে বহু মানুষ।

শহীদ মুক্তিযোদ্ধাকে নতুন প্রজন্মের মাঝে পরিচিত করাতে পেরে খুশি আয়োজকরাও।