লালচে, ময়লা এই চাল মুখে দিয়ে দেখা গেছে, যেমন দুর্গন্ধ তেমনি তিতা।
জেলার কাশিয়ানী উপজেলার হাতিয়াড়া ইউনিয়নের কার্ডধারী জোছনা ঘোষ, প্রণব সরকার, দিলীপ সরকারসহ অনেকেই বলেছেন, ১০ টাকার এই চালের গায়ে ছত্রাক পড়েছে। দুর্গন্ধযুক্ত এ চাল খাওয়া যাচ্ছে না। রান্নার পর ভাত তিতা ও দুর্গন্ধ লাগছে।
কিন্তু ডিলাররা এর দায় নিতে চাচ্ছেন না।
ওই ইউনিয়নের ডিলার দেবজ্যোতি মণ্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রামদিয়া খাদ্যগুদাম থেকে ৩০ কেজির বস্তায় নতুন চালের পরিবর্তে পুরনো চাল দিয়েছে বলে ধারণা করছি।
“চাল কিনে দরিদ্র ক্রেতারা খেতে পারছে না বলে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। চাল তিতা, দুর্গন্ধযুক্ত ও খাবার অযোগ্য বলে বলে তারা আমাকে জানিয়েছে। এ চাল নিয়ে দরিদ্র পরিবারগুলো বিপাকে পড়েছে।”
বিষয়টি সরকারের তদন্ত করে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন। তিনি বস্তা খুলে দেখেননি বলে দাবি করেন।
এই ইউনিয়নের অপর ডিলার ফজর আলী খান বলছেন, “গুদাম থেকে ৩০ কেজির বস্তায় চাল সরবরাহ করা হয়েছে। সেভাবেই এ চাল কার্ডধারীদের কাছে বস্তা ধরে বিক্রি করেছি। আমি বস্তা খুলিনি। তাই চালের গুণগত মান দেখতে পাইনি। তবে চাল নিয়ে ক্রেতারা খেতে পারছে না বলে শুনেছি।”
তবে রামদিয়া খাদ্যগুদামের পরিদর্শক মো. রেজাউল করিম এর জন্য ডিলারদের দায়ী করেছেন।
তিনি বলেন, “গুদাম থেকে চাল বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ডিলারের। গুদাম থেকে চাল বের হয়ে যাওয়ার পর সব দায়দায়িত্ব ডিলারের। আমার গুদামে কোনো নিম্নমানের চাল নেই।”
“বস্তা বদল করে নিম্নমানের চাল গুদামে রেখে দেওয়া হয়। আর গুদাম থেকে ভাল চাল বের করে নূর ইসলামকে দেওয়া হয়। এর জন্য টনপ্রতি দেড় হাজার টাকা করে নেন রেজাউল।”
বস্তা বদলের জন্য এই গুদামেরই চার শ্রমিককে টনপ্রতি ৫০০ টাকা পারিশ্রমিক দেওয়া হয় বলে ওই কর্মচারী দাবি করেন।
বস্তা বদল সম্পর্কে পরিদর্শক রেজাউল বলেন, “আমার গুদামে চালের বস্তা পরিবর্তনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।”
গুদামের কর্মচারী ও রামদিয়ার সাংবাদিকরা অভিযোগ করেন, গত রোববার এই গুদামে নূর ইসলামের ট্রাক এসেছিল চাল পরিবর্তন করে নেওয়ার জন্য। খবর পেয়ে সাংবাদিকরা হাজির হলে নূর ইসলামের লোকজন তাদের ওপর চড়াও হয়।
এ বিষয়ে পরিদর্শক রেজাউল বলেন, “গত ১৪ অক্টোবর বিকেলে গুদামে একটি বহিরাগত ট্রাক প্রবেশ করে। এখানে সাংবাদিকরা এলে চাল ব্যবসায়ী নূর ইসলামের সঙ্গে তাদের ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে। পরে ট্রাকটি বের করে দেওয়া হয়।
“নূর ইসলাম টিআর, কাবিখাসহ বিভিন্ন প্রকল্পের চাল কেনেন। তারপর এখান থেকে সরবরাহ নেন।”
বৈধ কাগজপত্র থাকলে চাল না দিয়ে ট্রাকটি বের করে দেওয়া হল কেন সে বিষয়ে পরিদর্শক রেজাউল কিছু বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে চাল ব্যবসায়ী নূর ইসলাম সিকদারের সঙ্গে তার মোবাইল ফোনে বেশ কয়েকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি সাড়া দেননি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এএসএম মাঈন উদ্দিন ঘটনা তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন।