বন্ধ হয়ে গেল রাজশাহী শহরের শেষ সিনেমা হল

ব্যবসায় ধুঁকতে থাকা রাজশাহী শহরের সর্বশেষ সিনেমা হল ‘উপহার’ পূর্বঘোষণা অনুযায়ী বন্ধ করে দেওয়া হল।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিশফিকুল ইসলামবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Oct 2018, 10:31 AM
Updated : 12 Oct 2018, 12:09 PM
হলের ব্যবস্থাপক তপন কুমার দাস জানান, মালিকের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে নাকাব নামে একটি সিনেমার শেষ প্রদর্শনী হয়।

তারপর থেমে যায় ৪৪ বছরের কোলাহল। শুক্রবার এ হলে আর কোনো প্রদর্শনী হয়নি।

বৃহস্পতিবার রাতে শেষবারের মত সিনেমা দেখতে এসেছিলেন অনেকে; যাদের কণ্ঠে আকুতি ঝরেছে হলটি বন্ধ হওয়ার খবরে।

রাজশাহী কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তানভীর আহমেদ বৃহস্পতিবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ভাই, খুব মিস করব হলটিকে। এটা ভেবে খারাপ লাগছে যে কাল থেকে এখানে আর সিনেমা চলবে না। আজ সিনেমা দেখতে এসে মন বসেনি। হলটি থাকবে না বারবার শুধু সে কথাই মনে হয়েছে।”

বিভাগীয় শহরে একটি হলও থাকবে না এটা তিনি মানতে পারছেন না বলে জানান।

শেষ দিনের প্রদর্শনী দেখতে এসেছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আলি আহমেদ নিশানসহ অনেকে।

নিশান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ হলে দোতলায় আমার একটি পছন্দের আসন আছে। আজ সেখানে বসেই এ হলের শেষ চলচ্চিত্রটি দেখলাম।

“সিনেমা ভালো হোক, খারাপ হোক—সব সময় এখানে এসে দেখেছি। আমাদের সিনেমার খুব খারাপ দশা এবং দিন দিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। ভালো কিছু দেখতে পাচ্ছি না। এ রকম পরিস্থিতিতেও হলটিতে দীর্ঘদিন সিনেমা দেখেছি।”

দলবেঁধে হলে এসে সিনেমা দেখার যে সংস্কৃতি এখানে গড়ে উঠেছিল তা আর থাকছে না বলে আক্ষেপ করলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী ও চলচ্চিত্র বিষয়ক পত্রিকা ‘ম্যাজিক লণ্ঠনের’ সহকারী সম্পাদক হিরু মোহাম্মদ।

তিনি বলেন, “একটা বিভাগীয় শহরে যদি বিনোদনের কেন্দ্র হিসেবে কোনো সিনেমা হল না থাকে, তাহলে সেই শহরের কোনো পূর্ণতাই থাকে না। সিনেমা দেখার যে পরিবেশ লাগে, সেটা আপাতত রাজশাহীর মানুষ আর পাচ্ছে না।

“যেকোনো মূল্যে এই হলটি রক্ষা কিংবা অন্য কোনো হল যদি গড়ে তোলা যায় অতিসত্ত্বর, তাহলে রাজশাহী তার সাংস্কৃতিক পূর্ণতা পাবে বলে আমি বিশ্বাস করি।”

তিতাস নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী এখানে প্রায় দুই বছর ধরে নিয়মিত সিনেমা দেখছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, “এখন হয়ত মোবাইল ফোনে সিনেমা দেখব। রাজশাহীতে তো আর কোনো হল রইল না যে সেখানে যাব।”

ব্যবস্থাপক তপন তাদের বন্ধ হয়ে যাওয়া হলটি সম্পর্কে জানান, প্রায় সাড়ে ২৪ কাঠা আয়তনের এ হলে একসঙ্গে এক হাজারের বেশি দর্শকের বসার জায়গা রয়েছে।

“কিন্তু ব্যবসা না হওয়ায় বন্ধ হয়ে গেল।”

হলটি চালু রাখতে বৃহস্পতিবার রাজশাহী শহরে পাঁচটি চলচ্চিত্র সংগঠন মানববন্ধন ও হলের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

এদিকে হলটি রক্ষায় কাজ চলছে বলে দাবি করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক সাজ্জাদ বকুল।

তিনি বলেন, “প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলে, মেয়র ও মালিকের সঙ্গে কথা বলে আমরা হলটি রক্ষা করব। সেই প্রক্রিয়া চলছে। আমরা যতটুকু আভাস পাচ্ছি তাতে আমরা হলটি চালু রাখতে সক্ষম হব।

“আমরা খুব দ্রুত একটি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যম আমাদের প্রস্তাব তুলে ধরব। আমরা চাচ্ছি, সরকার প্রতিটি জেলায় একটি করে সিনেমা হল পরিচালনা করুক, যেভাবে জাদুঘরসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো চলে।”

রাজশাহী সিটি করপোরেশনে ‘উপহার’-এর আগে আরও চারটি হল ছিল বলে তিনি জানান।

তিনি বলেন, উপহার ১৯৭৪ সালে স্নিগ্ধা নামে যাত্রা করে। মাঝখানে কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর ১৯৮৫ সালে ‘অন্যায় অবিচার’ সিনেমা দিয়ে ‘উপহার’ নাম নিয়ে আবার চালু হয়।