শার্শায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা

বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা সামনে রেখে যশোরের শার্শায় মণ্ডপে মণ্ডপে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Oct 2018, 03:51 AM
Updated : 6 Oct 2018, 03:51 AM

সরেজমিনে শার্শা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত প্রতিমা শিল্পীরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন তাদের কর্মকাণ্ড ও আয়রোজগারের খবর।

শার্শার উত্তর বুরুজবাগান মণ্ডপে কাজ করছেন সাতক্ষীরার বাসুদেব ভাস্কর।

বাসুদেব বলেন, এ বছর তিনি বিভিন্ন এলাকায় ১০টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ নিয়েছেন। প্রতিটায় পারিশ্রমিক নিচ্ছেন ৩০ হাজার টাকা।

তার পাঁচজন সহকারী আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এবার উপযুক্ত সহকারী ও কারিগরের অভাবে মন ভোলানো প্রতিমা তৈরি সম্ভব হচ্ছে না।”

এ মৌসুমে তার লাখ দুই টাকা আয় হবে বলে তিনি আশা করছেন।

বেনাপোলের পাঠবাড়ি মন্দিরে কাজ করছেন সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ উপজেলার কুমারখালি গ্রামের কানাইলাল সরকার।

তিনি বলেন, তিনি প্রায় ২৫ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি করছেন। তার বাবা-দাদাও প্রতিমা তৈরি করতেন। বছরের ১২ মাসই প্রতিমা তৈরি করে জীবিকা চালান বলে তিনি জানান।

“দুর্গাপূজা এলে আমাদের কাজ বেড়ে যায়। এ সময় কর্মচারীদের বেতন দিয়েও আমাদের লাখখানেক টাকা আয় থাকে।”

এ পেশায় দিন দিন আগ্রহ কমে যাচ্ছে বলে অনেক শিল্পী জানিয়েছেন।

সাতক্ষীরার কলারোয়ার রবিন পাল বলেন, “এখন মাটি মেখে জীবিকা উপার্জন করতে শিল্পীদের ঘরের ছেলেরাই আগ্রহী নয়। তাহলে অন্য পেশার মানুষ এখানে কেন আসবে?

“এ পেশায় এই একটি মৌসুম ছাড়া সারা বছর কোনো কাজ থাকে না। তখন কী করে দিন চলবে? সেই অনিশ্চয়তার কারণেই লোক কমে যাচ্ছে এ পেশায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই কমছে প্রতিমার সংখ্যাও।”

রবিন ছোট প্রতিমা তৈরিতে ১৬ হাজার টাকা, মাঝারিতে ৩৫-৪০ হাজার আর বড় প্রতিমায় এক লাখ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক নিচ্ছেন বলে জানান।

তিনি বলেন, তার সাতজনের সংসার প্রতিমা তৈরি করেই চলে। ছেলেমেয়ের লেখাপড়ার খরচও আসে এই খাত থেকে।

বাগআচড়া সর্বজনীন মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজে ব্যস্ত রয়েছেন সাতক্ষীরার আশাশুনির হাড়িভাঙ্গা গ্রামের তপন সরকার।

তিন সহকারী নিয়ে তিনি এ বছর ১০টি প্রতিমা তৈরি করছেন বলে জানান।

শার্শা উপজেলায় এ বছর মোট ৩০টি মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছে উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক বৈদ্যনাথ দাস।

তিনি বলেন, পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশ প্রশাসনের পাশাপাশি পরিষদের পক্ষ থেকে প্রতিটি মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক থাকছে। সব রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীদের সমন্বয়ে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী করা হচ্ছে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল হক মঞ্জু দুর্গাপূজা উপলক্ষে সার্বিক প্রস্তুতি চলছে বলে জানান।

তিনি বলেন, “উৎসবের সার্বিক নিরাপত্তার জন্য যা যা করা দরকার, আমরা তাই করব।”

শার্শা থানার ওসি মশিউর রহমান ও বেনাপোল বন্দর থানার এসআই শরীফ হাবিবুর রহমান জানান, পূজার কেনাকাটা করতে আসা মানুষ ও ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তাসহ পূজার সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রস্ততি নেওয়া হয়েছে। মণ্ডপগুলোয় নিরাপত্তা দেওয়া ছাড়াও শহরে পুলিশি টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাছাড়া র‌্যার ও বিজিবি থাকছে।