ঠাকুরগাঁওয়ে ৫ ছাত্রকে ন্যাড়া করলেন ‘বিএনপি নেতা’

ঠাকুরগাঁওয়ে বিনা অপরাধে পাঁচ ছাত্রকে ন্যাড়া করার অভিযোগ উঠেছে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে; যিনি ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিমো. শাকিল আহমেদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 Oct 2018, 08:57 AM
Updated : 3 Oct 2018, 09:36 AM

প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। তিনি সদর উপজেলার আখানগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও রুহিয়া থানা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক।

আখানগর ইউনিয়নের ভেলারহাট উচ্চবিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র রুবেল রানা, মো. সবুজ, সারোয়ার, আসিফ ও আশরাফুল বুধবার অভিযোগ করেন, আব্দুল জব্বার তাদের বিনা অপরাধে শাস্তি দিয়েছেন।

তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, শনিবার সকালে তারা প্রাইভেট পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন। পথে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চবিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির এক ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করছিলেন সদর উপজেলার রুহিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের মোন্নাপাড়া গ্রামের সিরাজুল ইসলামের কিশোর ছেলে (১৫)। পাঁচ ছাত্র এর প্রতিবাদ করলে লিটন সেখান থেকে চলে যান।

পাঁচ শিক্ষার্থীর অভিযোগ, রোববার বেলা ২টার দিকে ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার তাদের তার বিদ্যালয়ে ডেকে নেন। ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করার দায় চাপানো হয় তাদের ওপর। পাঁচ ছাত্র নিজেদের নিরপরাধ দাবি করলেও প্রধান শিক্ষক তাদের মারধর করেন। এরপর স্থানীয় এক নরসুন্দরকে বিদ্যালয়ে ডেকে আনেন। জব্বারের নির্দেশে স্থানীয় লোকজনের সামনে ওই নরসুন্দর একে একে পাঁচজনকে ন্যাড়া করে দেন।

এ সময় লিটনও সেখানে ছিলেন বলে তারা জানান।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, অপরাধীর বিচার না করে জব্বার তাদের বিনা অপরাধে শাস্তি দিয়েছেন। এখন এলাকার মানুষ তাদের উদ্দেশে নানা কথা বলছে। তারা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারছেন না।

ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার উচ্চবিদ্যালয়ে এমএলএসএস মো. ফিরোজ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শালিস-বৈঠকে পাঁচ ছাত্রকে মারধর করার পর ন্যাড়া করে দেওয়া হয়। ছাত্ররা অনেক কান্নাকাটি করেছে। বৈঠকের নেতৃত্ব দেন আমাদের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার।”

যে ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত করা হয় তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যে আমাকে উত্ত্যক্ত করেছে সেও শালিস-বৈঠকে উপস্থিত ছিল। কিন্তু তার বিচার না করে নিরপরাধ পাঁচ ছাত্রকে ন্যাড়া করে দেওয়া হয়।”

ছাত্রীর মা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “উত্ত্যক্ত করেছে একজন, শাস্তি দেওয়া হয়েছে উল্টো অন্যদের।”

প্রধান শিক্ষক আব্দুল জব্বার এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় নির্যাতিত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা কোথাও অভিযোগ দেওয়ার সাহস পাচ্ছেন না বলে তারা জানান।

ভেলারহাট উচ্চবিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য আব্দুল বারেকসহ পাঁচ শিক্ষার্ধীর অভিভাবকরা এ ঘটনার বিচার দাবি করেছেন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক জব্বারের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, “আমি এ বিষয়ে কথা বলতে পারব না।”

রুহিয়া থানার ওসি প্রদীপ কুমার রায় লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন।

ঠাকুরগাঁওয়ের মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোশারফ হোসেন বলেন, খোঁজখবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।