রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) দশম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শনিবার রাষ্ট্রপতি বলেন, “সবার সাথে এগিয়ে চলার বিষয়টি মাথায় রেখে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। পাশাপাশি উচ্চশিক্ষার মান নিয়ে কেউ যাতে প্রশ্ন তুলতে না পারে তাও নিশ্চিত করতে হবে।”
দেশে আজ সরকারি ও বেসরকারি মিলে দেড়শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, “জনসংখ্যার অনুপাতে এ সংখ্যা হয়ত অধিক হবে না; কিন্তু উচ্চশিক্ষা যাতে সার্টিফিকেট সর্বস্ব না হয় কিংবা শিক্ষা যাতে বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত না হয় তা দেশ ও জাতির স্বার্থে সম্মিলিতভাবে নিশ্চিত করতে হবে।”
এটা করতে না পারলে দেশে উচ্চশিক্ষিত বেকারের সংখ্যা বাড়বে এবং বিশ্বে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়তে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
রাষ্ট্রপতি হামিদ ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের স্মরণ করেন।
এ সময় তিনি শহিদ অধ্যাপক সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা, ড. হবিবুর রহমান, ড. সুখরঞ্জন সমাদ্দার, মীর আবদুল কাইউমসহ মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জীবন উৎসর্গকারী সব শহিদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য আরও বলেন, “কারিকুলামভিত্তিক শিক্ষার পাশাপাশি মুক্তচিন্তা, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা, জাতিগঠনমূলক কর্মকাণ্ড, সমকালীন ভাবনা, সাংস্কৃতিক চর্চা, খেলাধুলা ইত্যাদি সৃজনশীল কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীদের কেবল দক্ষ ও পরিপূর্ণ করে না কূপমণ্ডুকতার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক চেতনাকেও পরিপুষ্ট করে। এর প্রভাব ব্যক্তি জীবনে তো বটেই, সামষ্টিক জীবনকেও গভীরভাবে প্রভাবিত করে।”
তিনি বলেন, “এই সমাবর্তন শিক্ষার সমাপ্তি ঘোষণা করছে না, বরং উচ্চতর জ্ঞানভাণ্ডারে প্রবেশের দ্বার উন্মোচন করছে। তোমরা কেউ কেউ সে বিশাল জ্ঞানরাজ্যে অবগাহন করে বিশ্বকে আরও সমৃদ্ধ করবে। তোমরা বড় হও, সফল হও।”
শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এ সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও একুশে পদকপ্রাপ্ত এমিরেটাস অধ্যাপক আলমগীর মো. সিরাজউদ্দীন।
আলমগীর মো. সিরাজউদ্দীন তার বক্তব্যে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী তাদের গবেষণার ও সৃজনশীলতার মধ্যদিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান উন্নত করেছেন।
তিনি বলেন, মানবজাতির অনন্যতা তার বুদ্ধিবৃত্তি, বোধশক্তি ও তার বিচারবুদ্ধিতে। আর তার লালন ও বিকাশের দায়িত্ব হলো বিশ্ববিদ্যালয়ের। সভ্যতার বিকাশে যখন কোনো মানুষ নতুন করে কিছু জানতে চাইল তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃষ্টি হলো। এ বিশ্ববিদ্যালয় একজন মানুষকে স্বাধীন মুক্তচিন্তা, সৃজনশীলতা, বস্তুনিষ্ঠ করে তোলে।
“আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা শুধু দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে না, সমাজ ও জনসাধারণকে আধুনিক ও বিজ্ঞানমনষ্ক করে তোলে; যাতে আধুনিক চিন্তাভাবনা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রসার বাধাগ্রস্ত না হয় এবং সমাজ কুসংস্কারের থেকে মুক্তি পায়।”
বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।
সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরুরেআগে ‘দেশরত্ন শেখ হাসিনা’ এবং ‘শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান’ নামে দুইটি বহুতল আবাসিক হলের ভিত্তিপ্রস্তর উন্মোচন করেন তিনি।
সমাবর্তনে রাষ্ট্রপতি বাংলা সাহিত্যে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ খ্যাতিমান কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেনের হাতে সম্মানসূচক ডক্টর অব লিটারেচার (ডি লিট) ডিগ্রি তুলে দেন।
বিকাল ৫টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে দেশের বরেণ্য শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন সংগীত পরিবেশন করেন।
সমাবর্তনে ২০১১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সময়ে স্নাতকোত্তর, এমফিল, পিএইচডি, এমবিবিএস, বিডিএস ডিগ্রি অর্জনকারী মোট ছয় হাজার ১৪ জন গ্র্যাজুয়েট নিবন্ধন করেছিলেন।