গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি মজিবুর রহমান জানান, উপজেলা প্রকৌশলী ছাবেদ আলী বাদী হয়ে সাবেক ইউপি সদস্য কাঠ ব্যবসায়ী রানু হোসেন এবং কুমিল্লা প্রশিকা বনায়ন কর্মী কল্যাণ সংস্থার স্থানীয় সভাপতি আবদুল করিমের বিরুদ্ধে গত ২০ সেপ্টেম্বর এ মামলা দায়ের করেন।
অজ্ঞাতপরিচয় আরও ২০ থেকে ২৫ জনকে এ মামলায় আসামি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মামলার বিবরণে বলা হয়, নীতিমালা উপেক্ষা করে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রানু হোসেন ও আবদুল করিমের যোগসাজসে গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের কাটা-বৈরাগীরহাট, খামারপাড়া-বৈরাগীরহাট ও চৌহুদপুর-পজয়পুর সড়কের ৯৯০টি গাছ কাটা হয়।
ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশিকা বনায়ন কর্মী কল্যাণ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, প্রায় দশ বছর আগে সাপমারা ইউনিয়ন পরিষদের সাড়ে চার কিলোমিটার অংশে ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রশিকা যৌথভাবে প্রায় ১১ হাজার ইউক্যালিপটাসসহ বিভিন্ন জাতের গাছ লাগায়।
নীতিমালা অনুযায়ী, ইউনিয়ন পরিষদের মালিকানাধীন জমির কোনো গাছ বিক্রি করতে হলে ইউনিয়ন পরিষদের সভার অনুমোদন লাগে। পরে তা প্রস্তাব আকারে উপজেলা কমিটির কাছে পাঠাতে হয়। উপজেলা প্রশাসন অনুমতি দিলে বন বিভাগের মাধ্যমে মূল্য নির্ধারণ করে তারপর গাছ কাটার চূড়ান্ত অনুমতি দেওয়া হয়।
ওই নীতিমালা উপেক্ষা করে কোটি টাকার গাছ মাত্র ১৫ লাখ টাকায় সাপমারা ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য রানু হোসেনের কাছে বিক্রি করা হয়েছে বলে গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির অভিযোগ।
মামলার বাদী গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা পরিষদের প্রকৌশলী ছাবেদ আলী বলেন, “এই সড়কগুলো এলজিইডির (স্থানীয় সরকার প্রকৌশল) অধীনে। অনুমতি না নিয়ে চুরি করে গাছ কাটায় এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।”
স্থানীয়রা জানান, খামারপাড়া-বৈরাগিরহাট সড়কের দুই পাশের গত কয়েক দিন ধরে ওই গাছ কাটা চলে। কাটা গাছের গুড়ি রিকশা-ভ্যান ও ট্রাকে করে বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। কোনো কোনো জায়গায় গাছ কেটে রাস্তার পাশেই ফেলে রাখতে দেখা যায়।
মামলা হওয়ার পর থেকে দিনের বেলায় গাছ কাটা বন্ধ থাকলেও রাতের আঁধারে দুই-একটি করে গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে রানু হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত এপ্রিল মাসে ইউপি চেয়ারম্যান শাকিল আহম্মেদ বুলবুল ও আবদুল করিমের সঙ্গে আলোচনা করে ১৫ লাখ টাকায় ৮০৩টি গাছ কিনেছি। তখন বুলবুলকে নিয়ে গাছ কাটা শুরু করা হলেও হঠাৎ তা বন্ধ করে দেওয়া হয়।”
অভিযোগ অস্বীকার করে শাকিল আহম্মেদ বুলবুল বলেন, “আমি এবং ইউনিয়ন পরিষদের কেউ গাছ কাটেনি। স্থানীয় কুমিল্লা প্রশিকা বনায়ন কর্মী কল্যাণ সংস্থার সভাপতি আবদুল করিম ওইসব গাছ কেটেছেন।”
গাছ কাটার অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, “অনুমতি নেওয়া হয়েছে।”
অন্যদিকে আবদুল করিম বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যান বুলবুল আমাকে পাত্তা না দিয়েই সংস্থার দুই একজন সদস্যকে নিয়ে গাছ কাটছেন। অথচ আমার উপর দোষ চাপানো হচ্ছে।”