কোটালীপাড়ায় অবরুদ্ধ ৮ পরিবার: দেখলেন ইউএনও

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় প্রভাবশালীর তোলা দেয়ালে অবরুদ্ধ আট পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম মহফুজুর রহমান।

মনোজ সাহা গোপালগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2018, 05:39 PM
Updated : 25 Sept 2018, 06:12 AM

সোমবার কান্দি ইউনিয়নের নয়াকান্দি গ্রামের তরুর বাজারে এই পরিবারগুলোর অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শনে যান তিনি।

অবরুদ্ধ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি উভয়পক্ষকে কাগজপত্র নিয়ে তিন দিনের মধ্যে তার কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

গত শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশের পর প্রশাসনে তোলপাড় শুরু হয়। পরদিন কোটালীপাড়া উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভায় বিষয়টি আলোচনা করা হয়।

অবরুদ্ধ একটি পরিবারের কর্তা শুখরঞ্জন জয়ধর বলেন, পার্শ্ববর্তী টুঙ্গিপাড়া উপজেলার করফা গ্রামের নুর ইসলাম শেখ ঢাকায় এক্সপোর্ট ইমপোর্টের ব্যবসা করেন। তার ভাই রফিকুল ইসলাম টুঙ্গিপাড়ার ডুমুরিয়া ইউপি সদস্য। তারা খুবই প্রভাবশালী।

“তিন বছর আগে নুর ইসলাম নয়াকান্দি গ্রামের তরুর বাজারের বীরেন বিশ্বাসের কাছ থেকে কিছু জমি ক্রয় করেন। তারপর তরুর বাজারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিভিন্ন কর্নার থেকে কয়েকটি দোকানের কয়েক শতাংশ জায়গা কেনেন। এরপর পর্যায়ক্রমে তিনি নয়াকান্দি তরুর বজারের ৫৩টি পরিবারের দোকানপাট ও বসত বাড়ির কিছু কিছু জায়গা জোর করে দখলে নেন। তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ডেরও ৮০ বর্গফুট জমি দখল করেন।”

গ্রামের মানুষের চলাচলের পথ বন্ধ করে উত্তরে তরুর বাজার মন্দির থেকে দক্ষিণে খাল পর্যন্ত উঁচু করে প্রাচীর তুলে দিয়েছেন। শুখরঞ্জন জয়ধর বলেন, “প্রাচীরের মধ্যে আটটি পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। এখন আমাদের চলাচলের পথ নেই। আমরা বাধ্য হয়েই মই বেয়ে চলাচল করছি। এখন আমাদের জায়গা এ প্রবাবশালী নুর ইসলাম পানির দামে কিনে নিতে পাঁয়তারা করছে। চালাচ্ছে অত্যাচার-নির্যাতন। জায়গা ছেড়ে দিতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।”

ওই গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম বলেন, গোপাল জয়ধর, শুখরঞ্জন জয়ধর, বসার ব্যাপারী, জাকির ব্যাপারী, ইজাবুল শেখ, খগেন বিশ্বাস, আয়েশা বেগম, দেবী বিশ্বাসের পরিবার প্রাচীরে মধ্যে অবরুদ্ধ অবস্থায় রয়েছে।

এছাড়া সদাই জয়ধরের পরিবার নির্যাতনের শিকার হয়ে ওই জায়গা ছেড়ে রাস্তার পাশে সরকারি জায়গায় বসবাস করছে বলে তিনি জানান।

অবরুদ্ধ আরেক পরিবারের প্রধান ইজাবুল শেখ বলেন, পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমাদের অবস্থা দেখে গেছেন। তিনি চলাচলের পথ করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে নুর ইসলামের মোবাইলে বার বার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

কোটালীপাড়ার ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমান বলেন, নয়াকান্দির তরুর বাজারে প্রাচীরের মধ্যে অবরুদ্ধ আট পরিবারের মধ্যে তিন পরিবারের চলাচলের পথ নেই। তারা মই বেয়ে চলাচল করছেন। অন্য পরিবারগুলোর বিকল্প পথে নৌকায় চলাচলের সুযোগ রয়েছে।

“ওখানে জেলা প্রশাসকের কোনো জমি নেই। পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৮০ বর্গফুট জমি রয়েছে। এ জায়গাসহ ব্যক্তি মালিকানাধীন জায়গা জুড়ে প্রাচীর তোলা হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য গোপালগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীকে সোমবার চিঠি দিয়েছি।”

ইউএনও আরও বলেন, “প্রাচীরের জায়গা উভয়পক্ষ তাদের বলে দাবি করেছে। এ কারণে কাগজ নিয়ে উভয় পক্ষকে অফিসে দেখা করতে বলেছি। এছাড়া পরিবারগুলোকে চলাচলের পথ পেতে আমার বরাবর অবদেন করতে বলেছি।” 

কোনো পরিবারই অবরুদ্ধ থাকবে না। প্রাচীরে জায়গা নুর ইসলামেরও যদি হয় তাহলেও সেখানে প্রাচীর ভেঙ্গে গেট করে দিয়ে পরিবার গুলোর যাতায়াতের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে বলে ইউএনও জানান।