মঙ্গলবার ভোরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের চান্দনায় ‘হুফ্ফাজুল কোর-আন মাদ্রাসায়’ খুন হন ওই মাদ্রাসার পরিচালক ইব্রাহিম খলিলের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২০) ও নুরানি বিভাগের ছাত্র মো. মামুন (৯)।
এই ঘটনায় বুধবার রাতে মাহমুদার বাবা হানিফ গাজী গাজীপুর মহানগর পুলিশের বাসন থানায় একটি হত্যা মামলা করেছেন।
মামলায় মাহমুদার স্বামী ইব্রাহীম খলিলসহ অজ্ঞাত পরিচয় আরও ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়েছে বলে বাসন থানার ওসি মুক্তার হোসেন জানান।
পুলিশ এই মামলায় মাদ্রাসা পরিচালক ইব্রাহিম খলিলকে গ্রেপ্তার করেছে।
নিহত মো. মামুনের বাবা শহিদ মিয়ার অভিযোগও অভিন্ন, তাই একটি নেওয়া হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
তবে কী কারণে ইব্রাহিম স্ত্রী মাহমুদাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছেন তা জানা যায়নি।
গ্রেপ্তার ইব্রাহীম খলিল হুফ্ফাজুল কোর-আন মাদ্রাসার একটি কক্ষে সপরিবারে বসবাস করেন।
খলিলকে জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে ওসি মুক্তার বলেন, মঙ্গলবার ভোরে ফজরের নামাজের সময় হলে তিনি মাদ্রাসার সকল ছাত্রদের ডেকে তুলে নামাজ পড়ার জন্য মাদ্রাসার বাইরে অবস্থিত মসজিদে পাঠিয়ে দেন খলিল; কিন্তু মামুন ঘুম থেকে উঠে মাদ্রাসার টয়লেটে যাওয়ায় তার যেতে দেরি হয়। সবাই চলে গেছে ভেবে খুনিরা মাহমুদাকে কুপিয়ে হত্যা করে।
“এ সময় মামুন টয়লেট থেকে বের হয়ে খুনের ঘটনা দেখে ফেলায় তাকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়।”
ইব্রাহিম খলিল প্রতিদিন ভোরে ফজরের নামাজ পড়ার জন্য মাদ্রাসার ছাত্রদের ডেকে ঘুম থেকে তুলে তার সঙ্গে মসজিদে নিয়ে যান; কিন্তু ঘটনার দিন ছাত্রদেরকে আগে পাঠিয়ে দেন। পরে ইব্রাহিম খলিল ফজরের নামাজ শুরু করার এক মিনিট আগে মসজিদে যান বলে তদন্তে পাওয়া যায় বলে ওসি জানান।
মামলার এজাহারে বাদীর অভিযোগ, তার মেয়ে মাহমুদা আক্তারকে বিয়ে করার সময় ইব্রাহীম অন্যজনকে বাবা-মা সাজিয়ে বিয়ে করেছেন। পরে তারা জানতে পারেন এর আগেও ইব্রাহিম আরেকটি বিয়ে করেছিলন।
“বিষয়টি পরে জানতে পেরে আমার মেয়েসহ আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। তারপরও মেয়ে মাহমুদা ইব্রাহিমের সাথে ঘর সংসার করতে থাকে। এর মধ্যে আমার মেয়ের ঘরে দুটি ছেলে হোযাইপা (৫) ও আবু হোরাইয়ার (৩) জন্ম হয়। মাঝে মাঝে আমার মেয়ে কান্নাকাটি করে আমাদের বাসায় যেত। কিন্তু জিজ্ঞাসা করলে কিছুই বলত না।”
এজাহারে আরও বলা হয়, “ঘটনার পর মাদ্রাসায় গিয়ে ছাত্রদের জিজ্ঞাসা করে জানতে পারি- যে দা ও বটি দিয়ে মাহমুদা ও মামুনকে কুপিয়েছে সেই দা ও বটি ঘটনার আগের দিন মাগরিবের নামাজের পর মাদ্রাসার ছাত্রদের মাধ্যমে ধার করিয়েছে ইব্রাহিম। সেই দা-দিয়েই আমার মেয়ে মাহমুদা আক্তার এবং মামুনকে হত্যা করা হয়েছে। পুলিশ সেই রক্তমাখা দা বাসার খাটের নিচ থেকে মশারি দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় উদ্ধার করেছে।”
অভিযোগে আরও বলা হয়, প্রতিদিন মসজিদে ভোরবেলা নামাজ পড়তে যাওয়ার আগে মাদ্রাসার প্রধান গেইটে তালা দিয়ে যেতেন ইব্রাহিম; কিন্তু ঘটনার দিন তালা না দিয়ে চলে যান।
“এতে প্রতীয়মান হয় ভোর ৪টা ৩০ মিনিট থেকে ৫টা ১০ মিনিটের ভেতর আমার মেয়ে মাহমুদা আক্তার ও মাদ্রাসার ছাত্র মামুনকে ইব্রাহিম খলিল খুন করেছে।”
নিহত মাহমুদার গলা, মুখ ও কানে এবং মামুনের ঘাড়, মাথা ও পিঠে ধারোলো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন ছিল। ঘরের ভেতর থেকে রক্তমাখা একটি দা ও দা ধার দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি কাঠের খন্ড উদ্ধার করা হয়েছে।
ওসি মোক্তার হোসেন বলেন, “দুইটি হত্যাকাণ্ড হলেও আইন অনুযায়ী একটি মামলা নেওয়া হয়েছে। এতে আিইনগত কোনো সমস্যা হবে না।”