বাসন থানার ওসি মো. মুক্তার হোসেন জানান, মঙ্গলবার বিকালে পরিচালক মো. ইব্রাহিম খলিলকে তারা আটক করে থানায় নিয়েছেন।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের চান্দনা এলাকার এই মাদ্রাসায় সকালে পরিচালক ইব্রাহিমের স্ত্রী মাহমুদা আক্তার (২১) ও মাদ্রাসার নুরানি বিভাগের ছাত্র গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকার শাহিদের ছেলে মো. মামুন (৮) খুন হয়। মাহমুদার এক শিশুসন্তানও এ ঘটনায় আহত হয়।
ওসি মুক্তার বলেন, এ ঘটনায় পরিচালক ইব্রাহিমের দিকে সন্দেহের আঙ্গুল তুলেছে ছাত্ররা। তাই তাকে প্রথমে মাদ্রাসায় রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও পরে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নেওয়া হয়।
আইন প্রয়োগকারী বিভিন্ন সংস্থা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছে বলে জানিয়েছেন মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ওয়াই এম বেলালুর রহমান।
তিনি বলেন, “আমি আশা করছি খুব দ্রুত হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটিত হবে। প্রাথমিকভাবে কিছু সম্ভাবনা আমরা দেখতে পেয়েছি। ওই সম্ভাবনা সামনে রেখেই ব্যাপকভাবে তদন্ত করা হচ্ছে। ”
প্রায় দুই বছর ধরে মাদ্রাসাটি পরিচালনার পাশাপাশি ছাত্রদের কোরআন পড়িয়ে আসছিলেন ইব্রাহিম। ওই মাদ্রাসারই একটি কক্ষে স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে তিনি থাকেন।
মামুন ছুটি কাটিয়ে দুদিন আগে বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় ফেরে বলে পরিবারের সদস্যরা সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
ওসি বলেন, পুলিশ সকালে স্থানীয়দের কাছে খবর পেয়ে ইব্রাহিমের ঘরের ভেতর থেকে মাহমুদার এবং দরজার সামনে থেকে মামুনের লাশ উদ্ধার করে।
“মাহমুদার গলায়, গালে ও কানে এবং মামুনের ঘাড়ে, মাথায় ও পিঠে ধারোলো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।”
ঘরের ভেতর থেকে রক্তমাখা একটি দা ও ধার দেওয়ার কাজে ব্যবহৃত একটি কাঠের খণ্ড পাওয়া গেছে বলে জানান ওসি।
মাহমুদার বাবা মো.হানিফ গাজী বলেন, তাদের বাড়ি চাঁদপুরর জেলার সদর উপজেলায়। ছয় বছর আগে ইব্রাহিমের সঙ্গে তার মেয়ের বিয়ে হয়। গত ছয়-সাত মাস আগে তারা জানতে পারেন এটা ইব্রাহিমের দ্বিতীয় বিয়ে।
“২০১০ সালে প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে ইব্রাহিমের ছাড়াছাড়ি হয়; কয়েক মাস আগে তার প্রথম স্ত্রী ইব্রাহিমকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন।”
তার মেয়ের সঙ্গে ইব্রাহিমের দাম্পত্য সম্পর্ক ভাল ছিল বলে হানিফ জানান।
মামুনের মা পোশক শ্রমিক আসমা বলেন, প্রায় এক বছর আগে তার ছেলেকে ওই মাদ্রাসায় ভর্তি করানো হয়। মাদ্রাসার বেতন ও হোস্টেলের খরচের টাকা নিতে শনিবার মামুন বাড়ি আসে। রোববার বিকালে তিনি ছেলেকে মাদ্রাসায় রেখে আসেন।
মামুনের বাবা শাহিদ বলেন, মঙ্গলবার ভোর সাড়ে ৫টার দিকে মাদ্রাসার হুজুর ইব্রাহিমের মোবাইল থেকে তাকে কল করে দ্রুত মাদ্রাসায় আসতে বলে লাইন কেটে দেওয়া হয়। তবে কণ্ঠটি ইব্রাহিমের ছিল না বলে তার মনে হয়েছে।
বাসন থানার এসআই আলামিন বলেন, ঘটনাস্থলে যে দা পাওয়া গেছে সোমবার রাতে ছাত্ররা ইব্রাহিমকে সেটি ধার দিতে দেখার কথা বলেছে।
“মাদ্রাসার এক ছাত্র বলেছে, ভোরে ফজরের নামাজে যাওয়ার আগে ইব্রাহিম মামুনকে তার ঘরে ডেকে পাঠিয়েছিল।”
আর ইব্রাহিম পুলিশের কাছে দাবি করেছেন, ভোরে স্ত্রী এবং দুই সন্তান হুযায়ফা (৫) ও আবু হুরায়রাকে (৩) ঘরে রেখে তিনি পাশের মসজিদে ফজরের নামাজ পড়তে যান।
পরে ঘরে ফিরে বিছানার ওপর মাহমুদা এবং দরজার কাছে মামুনের রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকতে দেখেন বলে ইব্রাহিমের ভাষ্য।