সেই ছবি হাতে নিয়ে ৪১ বছর পর পাবনায় ফিরে হারানো স্বজনদের খোঁজে পথে পথে ঘুরছেন মিন্টো কার্স্টেন সনিক, এখন এটাই তার নাম।
পেশায় চিত্রশিল্পী মিন্টো এখন ডেনমার্কের নাগরিক। চিকিৎসক স্ত্রী এনিটি হোলমি হেবকে সঙ্গে নিয়ে দিন দশেক আগে পাবনায় এসে একটি হোটেলে উঠেছেন তিনি।
গত কয়েক দিন ধরে এই দম্পতি পাবনা শহর আর নগরবাড়ি এলাকার পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানতে চাইছেন- কেউ সেই হারিয়ে যাওয়া ছেলেটির বিষয়ে কোনো তথ্য জানে কি না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে মিন্টো বলেন, শৈশবে তার আসল নাম কিছু ছিল তা আর মনে নেই। একটি শিশু সদন থেকে তাকে দত্তক নিয়েছিলেন ডেনমার্কের এক নিঃসন্তান দম্পতি। তাদের স্নেহে ডেনমার্কেই বড় হয়েছেন, বিয়ে করে সংসারী হয়েছেন। একটি ছেলে ও একটি মেয়ে রয়েছে তাদের।
সেই শিশু সদন থেকে মিন্টো জানতে পেরেছেন, নগরবাড়ি ঘাটে অভিভাবকহীন অবস্থায় তাকে খুঁজে পেয়েছিলেন ঢাকার ঠাঁটারিবাজার এলাকার চৌধুরী কামরুল হুসাইন নামের এক ব্যক্তি। তিনিই ১৯৭৭ সালের ৪ এপ্রিল ওই শিশু সদনে তাকে রেখে যান। পরে পালক বাবা-মায়ের সঙ্গে মিন্টো চলে যান ডেনমার্কে।
“আমি ডাঙায় তোলা মাছের মত ছটফট করতে শুরু করলাম। কিছুই ভালো লাগত না। পরিবারের লোকজনের সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেছি অকারণে।তেমন কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্র হাতে নেই। তারপরও প্রাণের টানে নিজের বাবা-মা, স্বজনদের খোঁজে আমার পাবনায় আসা।”
গত দশ দিনের সন্ধানে আশা জাগার মত কোনো তথ্য মিন্টো পাননি। সকাল বেলায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে হোটেল থেকে বেরিয়ে পথে পথে চলে তার খোঁজ। বাংলা বলতে পারেন না, বুঝতেও পারেন না। কিন্তু বুকে হাত রেখে বাবা-মায়ের কথা বোঝাতে চান এবং তাদের সন্ধান চান।
শেকড়ের খোঁজে প্রায় অসম্ভব এই চেষ্টায় মিন্টোকে সহযোগিতা করছেন পাবনার বাসিন্দা স্বাধীন বিশ্বাস। ফেইসবুকে পরিচয় থেকে তাদের মধ্যে গড়ে উঠেছে বন্ধুত্ব।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে স্বাধীন বলেন, “ফেইসবুকে কথা হলে ওকে দেশে আসতে বলেছিলাম আমি। ও চলে এসেছে। আমরা চেষ্টা করছি ওর স্বজনদের খুঁজে বের করার।”
স্বজনদের সন্ধানে ইতোমধ্যে পাবনার পুলিশের সঙ্গেও যোগাযোগ করেছেন মিন্টো। সদর থানায় একটি এজহার দায়ের করেছেন তিনি।
পুলিশ মিন্টোকে সহযোগিতা করছে জানিয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) শামিমা আকতার বলেন, “পুলিশের পক্ষ থেকে যতটুকু সহযোগিতা করা সম্ভব তা করা হচ্ছে। পুলিশের পাশাপাশি গণমাধ্যমগুলোও হয়ত তাকে সহযোগিতা করতে পারে।”