বাচ্চু হত্যার পরিকল্পনাকারী শামিম, এখলাছ দিয়েছে অস্ত্র: পুলিশ

মুন্সীগঞ্জে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত দুই ‘জঙ্গির’ মধ্যে বোমা শামীম ওরফে কাকা প্রকাশক শাহজাহান বাচ্চুকে হত্যার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ এবং এখলাছুর রহমান ‘অস্ত্রের যোগানদাতা’ ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মুন্সীগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Sept 2018, 10:18 AM
Updated : 7 Sept 2018, 10:18 AM

জেলার পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম শুক্রবার মুন্সীগঞ্জে তার কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের সামনে এই তথ্য তুলে ধরেন। 

বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ২টার দিকে শ্রীনগর উপজেলার হাষাড়া কেসি রোডে পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলির মধ্যে শামীম ও এখলাছের নিহত হওয়ার কথা শুক্রবার সকালে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।

পুলিশ বলছে, নিহত দুজনই পুরনো জেএমবির সদস্য। রাতে তারা শ্রীনগর এলাকায় যাচ্ছিল ‘ডাকাতি’ করার জন্য।

এর আগে গত জুনে গাজীপুরের শ্রীপুর থেকে গ্রেপ্তার আবদুর রহমান নামের এক সন্দেহভাজন জঙ্গি মুন্সীগঞ্জে পুলিশের অভিযানের মধ্যে গুলিতে নিহত হলে সে সময় পুলিশ সুপার বলেছিলেন, ওই আবদুর রহমানই প্রকাশক বাচ্চু হত্যার প্রধান সন্দেহভাজন। 

গত ১১ জুন বিকালে সিরাজদিখান উপজেলারর কাকালদী মোড়ে বিশাখা প্রকাশনীর মালিক ৫৫ বছর বয়সী শাহজাহান বাচ্চুকে দুটি মোটর সাইকেলে করে আসা চারজন গুলি করে হত্যা করে।

মুন্সীগঞ্জ জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ‘আমাদের বিক্রমপুর’ নামের একটি অনিয়মিত সাপ্তাহিক পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকও ছিলেন বাচ্চু।

বাচ্চু নিহতের ঘটনায় অজ্ঞাতপরিচয় চারজনকে আসামি করে মামলা করা হয়েছিল। এরপর আবদুর রহমান নিহত হওয়ার পর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও দুইজনের জড়িত থাকার তথ্য পুলিশ পেয়েছে। 

এরপর শুক্রবার সকালে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে কথিত বন্দুকযুদ্ধে শামিম (৪০) ও এখলাছের (৩২) নিহত হওয়ার খবর জানিয়ে বলা হয়, তারা শাহজাহান বাচ্চু হত্যার অন্যতম সন্দেহভাজন।

তাদের মধ্যে শামীম কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া থানার লৌক্ষা গ্রামের আব্দুল রশিদের ছেলে। আর এখলাছ জামালপুরের খামার পাড়া গ্রামের মো. গিয়াস উদ্দিনের ছেলে।

পুলিশ সুপার জায়েদুল সংবাদ সম্মেলনে বলেন, জঙ্গিরা শ্রীনগর এলাকায় ডাকাতি করতে আসছে খবর পেয়ে রাতে মহাসড়কের দুটি স্থানে চেক পোস্ট বসায় পুলিশ।

রাত ১টার দিকে হাষাড়া কেসি রোডের চেক পোস্টের সামনে দুটি মোটর সাইকেলে করে চারজনকে আসতে দেখে পুলিশ তাদের থামার সংকেত দেয়।

“এ সময় মোটনসাইকেল আরোহীরা পুলিশের দিকে হাতবোমা ও গুলি ছুড়লে পুলিশও পাল্টা গুলি করে। এতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি মোটর সাইকেল থেকে দুইজন রাস্তায় ছিটকে পড়ে; আরেকটি মোটরসাইকেলে থাকা দুইজন পালিয়ে যায়।”

পরে গুলিবিদ্ধ দুইজনকে উদ্ধার করে শ্রীনগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ষোষণা করেন বলে জানান পুলিশ সুপার।  

শাহজাহান বাচ্চু

তিনি বলেন, “ব্লাগার বাচ্চু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল বোমা শামীম ওরফে কাকা। আর সকল অস্ত্রের যোগানদাতা ছিল এখলাস। তারা দুজনেই পুরনো জেএমবির সদস্য।”

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বোমা তৈরিতে পারদর্শিতার জন্য সংগঠনে শামিমের নাম হয়েছিল ‘বোমা শামিম’। তার বিরুদ্ধে থানায় পাঁচটি ডাকাতির মামলা রয়েছে।

“বাচ্চুকে হত্যার জন্য এখলাস নিজে বালুর চরে বাসা ভাড়া নিয়ে অবস্থান করে এবং সকল আগ্নেয়াস্ত্র বিভিন্ন স্থান থেকে ওই ভাড়া বাসায় নিয়ে যায়। হত্যাকাণ্ডের পর সে নিজেই অস্ত্রগুলো গাজীপুরে আব্দুর রহমানের কাছে পৌঁছে দেয়।”

পুলিশ সুপার বলেন, এই অভিযানে পুলিশ সদস্য এএসআই মাসুদ, এসআই ইলিয়াস এবং কনস্টেবল তামিমও আহত হয়েছেন। তাদের মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

ঘটনাস্থল থেকে ১১টি হাতবোমা, একটি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, তিন রাউন্ড গুলি, দুটি রাম দা এবং জঙ্গিদের ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।