এ দাবিতে বৃহস্পতিবার ইসলামপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সামনে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ আয়োজিত মানববন্ধনে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ অংশ নেন।
গত ৩১ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় রাজাকার পরিবারের ভূমিকা তুলে ধরে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর প্রধান। এর জেরে পরদিন (১ সেপ্টেম্বর) তার উপর হামলা হয়।
গফুর প্রধানসহ অন্য মুক্তিযোদ্ধা ও স্থানীয়দের ভাষ্য, একাত্তরে ওই এলাকার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগী দালালদের পরিবারের সদস্যরা এ হামলা চালিয়েছে।
বক্তারা আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
তারা রাজাকারের তালিকা প্রকাশ এবং রাজাকারের বংশধরদের আসন্ন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ারও আহ্বান জানান।
মানববন্ধনে নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর প্রধান তার উপর নির্যাতনের বিচারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
ইসলামপুর থানার ওসি শাহীনুজ্জামান খান বলেন, নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর প্রধান চিকিৎসা শেষে ফিরে বৃহস্পতিবার থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছেন।
“তার উপর হামলার জন্য সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরীসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।”
ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। দ্রুত তদন্ত শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
গত ৩১ অগাস্ট উপজেলার গঙ্গাপাড়ায় স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত শোক দিবসের আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন আব্দুল গফুর প্রধান।
গফুর প্রধানের অভিযোগ, সভাপতির বক্তব্যে তিনি একাত্তরের স্মৃতিচারণ করে ইসলামপুরের রাজাকার পরিবারের ভূমিকা তুলে ধরেন।
“বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়ে রাজাকার পরিবারের সদস্যরা পরদিন আমাকে রাস্তা থেকে তুলে সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনে নিয়ে পিটিয়ে আহত করে। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।”
অভিযোগে আব্দুল গফুর প্রধান আরও বলেন, ইসলামপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমান চৌধুরী শাহীনের চাচা মৃত মতিয়ার রহমান চৌধুরী ইসলামপুর শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালের বাবা মৃত হাবিবুর রহমান খান শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন।
তাদের ভূমিকা নিয়ে বক্তব্য দেওয়ায় রাজাকারের পরিবারের সদস্যদের ক্যাডাররা তার উপর হামলা চালিয়েছে বলে তার দাবি।
তবে গফুর প্রধানে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাবিবুর রহমান চৌধুরী শাহীন ও ফরিদুল হক খান দুলাল।
ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার বাবা শান্তি কমিটির সেক্রেটারি ছিলেন না।
তার বাবা ১৯৭১ সালে ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং ইসলামপুরে স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছেন বলে তার দাবি।
আব্দুল গফুর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা নন বলেও দাবি করেন দুলাল।
দুলাল বলেন, “আব্দুল গফুর প্রধান মুক্তিযোদ্ধা নন; তার ভাই মুক্তিযোদ্ধা। আব্দুল গফুর প্রধান যেসব অভিযোগ করেছে তা ভিত্তিহীন। হামলা হয়েছে শুনেছি; কিন্তু ওই ঘটনার সাথে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
সদর ইউপি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী শাহীনের পরিবারের লোকজন হামলা করেছে বলে শুনেছেন বলে তিনি জানান।
ইসলামপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান চৌধুরী শাহীনও অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল গফুর প্রধানের উপর হামলার খবর তিনি শুনেছেন। তবে তার বাড়ির সামনে এ ঘটনা ঘটেনি।
গঙ্গাপাড়ার মতিয়ার রহমান চৌধুরীর স্বজনরা এ ঘটনা ঘটায় বলে দাবি করেন তিনি।
ইসলামপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার মানিকুল ইসলাম বলেন, আব্দুল গফুর প্রধান একজন গেরিলা ভাতাপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা। রাজাকার পরিবারের সন্তানরা তার উপর হামলা করেছে।
তিনি বলেন, “সংসদ সদস্য ফরিদুল হক খান দুলালের বাবা মৃত হাবিবুর রহমান খান ১৯৭১ সালে নেজামে ইসলাম পার্টির সভাপতি ছিলেন। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেছেন এমন তথ্য এ পর্যন্ত কোনোদিন শুনিনি।”
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ও কে ফোর্সের অধিনায়ক মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের মেয়ে সংসদ সদস্য মাহজাবিন খালেদ বেবী এ হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, “সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশাররফের জন্মভূমিতে রাজাকার পরিবারের হাতে বীর মুক্তিযোদ্ধা নির্যাতিত লাঞ্ছিত হবে এটা মেনে নেওয়া যায় না।”
তিনি এ ঘটনার সাথে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।