এ প্রকল্পে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়রা।
‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ী সংলগ্ন এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় পদ্মা নদীর ডান তীর সংরক্ষণ’ প্রকল্প বাঁধে প্রায় ৫০ মিটার সোমবার দুপুরে ধসে পড়ে নদীর তীব্র স্রোতে তলিয়ে যায়।
এরপর থেকে জরুরি ভিত্তিতে বালিভরতি জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মনিরুজ্জামান বলেন, সোমবার দুপুর ২টার দিকে সদ্য নির্মিত এই রক্ষা বাঁধের কালোয়া এলাকার কিছু অংশ ভেঙে যাওয়ার সংবাদ পেয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার সকল কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে পৌঁছান এবং ক্ষতিগ্রস্ত অংশে তাৎক্ষণিক ভাঙন রোধে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে।
“প্রকল্প বাস্তবায়নকালে কারিগরি কোনো ত্রুটি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
স্থানীয় সুলতানপুর গ্রামের আলাউদ্দিন সেখ অভিযোগ করেন, এই কাজের ঠিকাদাররা স্থানীয়দের ঘরবাড়ি ভেঙে কোনো ক্ষতিপূরণ না দিয়ে নিজেদের ইচ্ছেমতো কাজ করেছেন। প্রকল্প শুরুর সময় ঢাকা থেকে বড় বড় অফিসাররা এখানে এসে স্থানীয়দের সাথে কথা বলেছিলেন, স্থানীয়দের সুবিধা অসুবিধা বিবেচনায় রেখে কাজ করার কথা। কিন্তু তারা সেটা করেননি।
শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে কর্মরত কাস্টোডিয়ান মুখলেচুর রহমান বলেন, বাঙালি জাতির ঐতিহাসিক হেরিটেজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত সাহিত্য চর্চার তীর্থ শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী যে উদ্যেগ গ্রহণ করেছেন তা প্রকৃত অর্থে কুঠিবাড়ি রক্ষার জন্যই করেছেন।
“কিন্তু বাস্তবে এখানে যে কাজ হয়েছে তাতে কুঠিবাড়ি রক্ষার কাজ হয় নাই। নির্মাণ কাজ পুরোপুরি সমাপ্ত না করেই প্রকল্পটি ক্লজ করে দেওয়া হয়েছে।”
উপজেলার কয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জিয়াউল ইসলাম স্বপন বলেন, স্থানীয় জনগণের ক্ষতিসাধন, নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, নির্ধারিত পরিকল্পনা ও নকশা বহির্ভূত, প্রয়োজনীয় সামগ্রী অব্যবহৃত রাখা, ব্যয়িত অর্থের অপচয়, অনিয়ম ও দুনীতির মধ্যদিয়ে অসম্পূর্ণ প্রকল্প সম্পূর্ণ দেখিয়ে হস্তান্তর করা হয়েছে।
শিলাইদহ ইউপি চেয়ারম্যান সালাহ উদ্দিন তারেক বলেন, “ইউপি চেয়ারম্যন হিসেবে দায়বোধ থেকে প্রকল্প নির্মাণ কাজ দেখতে মাঝে মধ্যে গিয়েছি। সেখানে কিছু কিছু অনিয়মও দেখেছি; বিষয়গুলি পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নজরে নেওয়ার অনুরোধ করেছি। এখন দেখছি যেভাবে প্রকল্প শেষ হয়েছে তাতে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি রক্ষার কাজ হয়নি।”
“এ প্রকল্পের জন্য তৈরি ১৩ লাখ ব্লকের মধ্যে ২ লাখ ৫০ হাজার ব্লক অব্যবহৃত পড়ে আছে। পদ্মা নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে নতুন করে ভাঙন সৃষ্টি হওয়ায় ঝুঁকিতে পড়েছে শিলাইদহ কুঠিবাড়ি।”
প্রকল্প নির্মাণকারী মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ডিজেল প্লান্ট ও সহযোগী ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোংসহ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়ার যোগসাজসেই চলছে এসব। আরডিপিপি অনুমোদন পেলে অসম্পূর্ণ কাজসহ ত্রুটি বিচ্যুতিগুলি মেরামত করা হবে বলে জানালেন ওয়েস্টার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং কোং এর কর্তব্যরত এই প্রকৌশলী রাজিব ও সাইট কর্মী সুজন আলী।
কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশল আরিফুজ্জামান খান বলেন, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কুষ্টিয়া ডিভিশনের তত্ত্বাবধায়নে এই প্রকল্পের সুলতানপুর অংশে ২ হাজার ৭২০ মিটার এবং শিলাইদহ অংশে ১ হাজার মিটার সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে; কিন্তু দুই অংশের মাঝখানে ১ হাজার ৫৩০ মিটার কাজ না হওয়ার ফলে নতুন করে সৃষ্ট নদী ভাঙন হয়েছে।
ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের কিছু অনিয়মের অভিযোগ তুলে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান এই প্রকৌশলী।
স্থায়ী ও টেকসই প্রকল্প যাতে হয় তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ডিজেল প্লান্টের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।