চলনবিলে নৌকাডুবি: ১০ জনকে বাঁচিয়ে পুরস্কৃত শিশু সুমন

চলনবিলে নৌকাডুবির পর নিজের ছোট্ট ডিঙ্গি নিয়ে ১০ জনকে উদ্ধার করায় শিশু সুমন হোসেনকে পুরস্কার দিয়েছে পাবনা জেলা প্রশাসক।

সৈকত আফরোজ আসাদ পাবনা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Sept 2018, 04:23 PM
Updated : 2 Sept 2018, 04:33 PM

হান্ডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ও পাবনার চাটমোহর উপজেলার হান্ডিয়াল পাইকপাড়া গ্রামের দ্ররিদ্র কৃষক আব্দুস সামাদ ও সুফিয়া খাতুনের ছেলে সুমন।

সুমনের এই সাহসিকতার খবর শুনে শনিবার জেলা প্রশাসক ঘটনাস্থলে গিয়ে তাকে পাঁচ হাজার টাকা পুরস্কার দেন।  

পুরস্কার দিতে গিয়ে জেলা প্রশাসক জসিম উদ্দিন বলেন, “সুমন স্বেচ্ছাশ্রমে একজন বীর। তার শিক্ষা সহায়তায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাঁচ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছে।”

সুমনসহ তার পরিবারকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়ে সব শিশুকে তার মতো এমন মানবিক কাজে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক।

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় চলনবিলে পাবনায় পাইকপাড়ায় ২২ যাত্রী নিয়ে একটি নৌকা ডুবে যায়। এতে ৫ জনের প্রাণহানি ঘটে। 

পুরস্কার পাওয়া সুমন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফে্র ডটকমকে বলে, “আমার ছোট নৌকাটি ধরে ১০ জনকে জীবিত উদ্ধার করতে পারায় আমি খুশি।”

সেদিনে ঘটনার কথা বলতে গিয়ে সে বলে, ঘটনার সময় নৌকাটির ছইয়ের উপর দাঁড়িয়ে যাত্রীরা সেলফি তুলতে গিয়ে মাচা ভেঙে যায়। এ সময় সবাই তাড়াহুড়ো করে মাচা থেকে নামতে গিয়ে নৌকাটি ডুবে যায়। ওই নৌকার যাত্রীদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সুমন তাদের উদ্ধারে এগিয়ে যায়।  

ওই সময় সুমন ছোট একটি ডিঙ্গি নৌকায় প্রতিবেশী এক চাচাকে পাড় করে বাড়ি ফিরছিল। বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা তার ডিঙ্গি ধরে ভেসে বিলের পাড়ে আসে বলে জানান।

পরে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরিদেরকেও উদ্ধার কাজে সহায়তা করেছে এই শিশু।   

সুমনের বাবা আব্দুস সামাদ বলেন, “আমার ছেলে বড় হয়েও যেন এমন আদর্শ ধরে রাখতে পারে। ছেলের এমন কাজ দেখে সব দুঃখ-কষ্টের কথা ভুলে গেছি। আমার ছেলে ডিসি স্যারের হাতে এমন কাজের জন্যে পুরস্কার পাওয়ায় আমি কৃতজ্ঞ।”

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হান্ডিয়াল এলাকার ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির বলেন, শুক্রবার সন্ধ্যায় চলনবিলের পাইকপাড়ায় নৌকাডুবির ঘটনায় শত শত মানুষ ভিড় করে। এ সময় সবাইকে হতবাক করে দিয়ে সে একাই একটি ছোট ডিঙ্গি নৌকা নিয়ে উদ্ধার তৎপরতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে।

ওই এলাকার বাসিন্দা ও গজাইল ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জাকির সেলিম বলেন, অন্যের জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসা শিশু সুমনের কর্মযজ্ঞ বড়দের জন্যে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

হান্ডিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাক বলেন, “আমার বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মানবতার সেবায় যে ভূমিকা রেখেছে তাতে আমি গর্ববোধ করি।”