জাতীয় প্রতিবন্ধী দলের ক্রিকেটার ‘চালাচ্ছেন অটোরিকশা’

বিদেশের মাটিতে দেশের মুখ উজ্জ্বল করলেও পরিবারের অর্থ সংস্থানে ‘অটোরিকশা চালাচ্ছেন’ জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সদস্য শাওন।

পিরোজপুর প্রতিনিধিহাসিবুল ইসলাম হাসান, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2018, 03:53 PM
Updated : 27 August 2018, 05:00 PM

শাওন সিকদার পিরোজপুর সদরের শারিকতলা-ডুমরীতলা ইউনিয়নের কুমরিমারা আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা দিনমজুর বাবুল সিকদার ও গৃহিনী নাসিমা বেগমের ছেলে।

শাওন ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিজিক্যাল ডিজ্যাবিলিটি ট্রাই-সিরিজ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ভারত, পাকিন্তান ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

দারিদ্র্যের কারণে বাধ্য হয়ে শাওনকে কখনও দিনমজুর কখনও অটোরিকশা চালিয়ে অর্থ যোগাড় করতে হয়। অনুশীলনের জন্য ক্রীড়া সামগ্রী কেনার সামর্থ্যও নেই তার পরিবারের। 

শাওনের মা নাসিমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছেলে ক্রিকেট খেলতে বিদেশে যায়, পেয়েছে নানা পুরস্কার; এতে অনেক ভালো লাগে। গর্বে বুক বড় হয়, কিন্তু পেট ভরে না। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ভাঙ্গা ঘরে থেকে তারা যে স্বপ্ন দেখছে তা অভাবের কারণে আস্তে আস্তে অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।”

নাসিমা বেগম আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া ‘উপহার’ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। সন্তানদের মাঝে সবার বড় শাওন। ছোট সময় থেকেই লেখাপড়ার তেমন আগ্রহ ছিল না শাওনের। তাই অভাবের সংসারের কিছুটা সহযোগিতার করার জন্য তাকে চট্টোগ্রামে একটি গার্মেন্টসে কাজ করার জন্য পাঠানো হয়।

“সেখানে ক্রিকেট খেলা শুরু করে। এই ক্রিকেট খেলার জন্যই চট্টগ্রামের চাকরি ছেড়ে দিয়ে চলে আসে ঢাকায়। ঢাকায় আসার পরে আমরা জানতে পারি যে শাওন জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী দলের সদস্য হয়ে ক্রিকেট খেলার সুযোগ পেয়েছে।”

কিন্তু ক্রিকেট খেলার যে খরচ তা তাদের পক্ষে বহন করা খুবই কঠিন। বিদেশে খেলতে যাওয়ার জন্য  যে পাসপোর্ট করা হয়েছে তার খরচও মানুষের কাছ থেকে ধার করে আনা হয়েছে বলে নাসিমা জানান।

শাওনের বাবা বাবুল সিকদার বলেন, “ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী হবার কারণে কখনও সে ক্রিকেটার হবে  তা চিন্তাও করিনি। চাকরির জন্য তাকে পাঠানো হয় চট্টোগ্রামে। সেখান থেকেই এই ক্রিকেট খেলায় সে যোগ দেয়। পরে জানতে পারি সে জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে সুযোগ পেয়েছে। পরে জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে ইংল্যান্ডে যায়।”

এখন শাওন বাড়িতে আছেন। এখানে ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা নেই। এছাড়া অনুশীলনের জন্য যে সকল সম্যগ্রী দরকার তা কিনে দেওয়ার সমর্থ্যও তাদের নেই বলে জানান বাবুল সিকদার।  

শাওন সিকদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, জাতীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে তিনি ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ২০১৮ ফিজিক্যাল ডিজ্যাবিলিটি ট্রাই-সিরিজ টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলেছেন। বাংলাদেশের হয়ে খেলেছেন ভারত, পাকিন্তান ও আফগানিস্তানের বিপক্ষে।

তবে খেলার উপকরণের অভাবে নিয়মিত অনুশীলন করতে পারছেন না। তাই ক্রিকেট খেলার উপকরণের টাকা যোগাতে বাড়ি এসে তিনি দিনমজুরের কাজ, অটোরিকশা চালানোর কাজ করছেন বলে জানান।

স্থানীয় বাসিন্দা আজমীর হোসেন মাঝি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটারা তো অনেক সুযোগ-সুবিধা পায়। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও শাওন তো এ  দেশের জন্যই খেলে থাকেন।

প্রতিবন্ধী শাওনকে দেখি জীবনের তাগিতে দিনমজুরের কাজ করছে। আবার সুযোগ পেলে নিজের মতো করে বাড়ির ভিতরে অল্প জায়গায় ক্রিকেট অনুশীলন করেন। সুযোগ-সুবিধা পেলে শাওন সিকদার সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারবে বলে তিনি মনে করেন।

পিরোজপুর  জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা নকীব বলেন, আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির (আইসিআরসি) সহায়তায় গঠিত বিসিবির শারীরিক প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সদস্য হিসেবে শাওন  সিকদার গত ৬ জুলাই ‘ফিজিক্যাল ডিজ্যাবিলিটি ট্রাই-সিরিজ’ টি-২০ টুর্ণামেন্ট খেলতে ইংল্যান্ডে যান।

“৮ জুলাই সেখানে শুরু হওয়া সিরিজে শাওন ইংল্যান্ড ও পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তিন ম্যাচ খেলে ১২৯ রান করেন। এ সিরিজে শাওন একটি ম্যাচে ম্যান অব দ্যা ম্যাচ এবং ম্যান-অব-দি সিরিজ হন।”

এছাড়া তিনি ভারত ও আফগানিস্তারের বিরুদ্ধে টি-২০ ম্যাচেও অংশগ্রহণ করেছেন বলে নকীব জানান।

শাওনের ক্রিকেট অনুশীলনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করা হবে এবং তাকে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে বলেও তিনি জানান।