কথা দিয়ে কথা রাখে না আ. লীগ: ফখরুল

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আওয়ামী লীগ আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন পদ্ধতি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বললেও সেই কথা তারা রাখেনি।

নীলফামারী প্রতিনিধিঠাকুরগাঁও ও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 August 2018, 10:57 AM
Updated : 23 August 2018, 12:50 PM

ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও যাওয়ার পথে নীলফামারীর সৈয়দপুর বিমান বন্দর চত্বরে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের সামনে তিনি এসব কথা বলেন।

ফখরুল বলেন, “২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার কথা দিয়েছিল, আলোচনার মাধ্যমে নির্বাচন পদ্ধতি বিষয়ে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু তারা তা করেনি। কথা দিয়ে কথা না রাখা, জনগণের সঙ্গে প্রতরাণা করা আওয়ামী লীগের চিরাচরিত ব্যাপার।”

আওয়ামী লীগের অধীনে কোনো নির্বাচনই নিরপেক্ষ হয় না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচন হচ্ছে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন। কিন্তু নির্বাচনে জনগণ যদি ভোটই দিতে না পারে, সেই ভোট তো ভোট হতে পারে না। আমরা সম্প্রতি সিটি করপোরেশন নির্বাচনে যা দেখলাম, ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে যা দেখেছি, তাতে আমাদের অভিজ্ঞতা হয়েছে যে, এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন অর্থবহ হয় না। বরং তা প্রহসনে পরিণত হয়।

“আলোচনার মাধ্যমে দেশের সব সমস্যা সমাধানে বিএনপি আগ্রহী, তবে এই সরকার তা চায় না। এই সরকার একটার পর একটা সমস্যা জিয়ে রেখে দেশে আরও একটি ভোটারবিহীন নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য ষড়যন্ত্র অব্যাহত রেখেছে।”

বিএনপির প্রতি আওয়ামী লীগের মনোভাব সম্পর্কে তিনি বলেন, “মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও তিনবারের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করে বিএনপিকে ধ্বংস করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।”

আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, “এটা নির্ভর করবে সরকারের ওপর। বিএনপি চেয়ারপার্সনকে মিথ্যা মামলা থেকে নিঃশর্ত মুক্তি দিয়ে তারা যদি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করে, তবে।”

সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা শেষে সড়ক পথে ঠাকুরগাঁওয়ের উদ্দেশে রওনা হন বিএনপি নেতা। এর আগে বেলা ১১টায় ঢাকার হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে একটি বিমানে চরে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে নামেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এ সময় সৈয়দপুর পৌরসভার মেয়র আমজাদ হোসেন সরকার ভজেসহ বিএনপি নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে ঈদের শুভেচ্ছা জানান।

ঠাকুরগাঁওয়ের কালিবাড়ি এলাকায় নিজের বাড়িতে পৌঁছে ফখরুল আরও বলেন, “আজ আমেরিকার মত একটি দেশ যদি নর্থ কোরিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসে কথা বলতে পারে, তাহলে আমাদের নিজের দেশে আরেকটা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে কথা বরতে পারব না কেন? এখানেই মানষিকতার ব্যাপার আছে; মাইন্ড সেটের ব্যাপার আছে।

“দেশের মানুষ আছে, অন্যান্য দলগুলো আছে। সমান ইজ্জত দিয়ে, সম্মান দিয়ে তাদের ডেকে নিয়ে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আমাদের দাঁড়ানোর জায়গা দেয় না আওয়ামী লীগ সরকার। একটা মিটিং করব, তার জায়গা দেয় না। আমরা একটা র‌্যালি করব, তার অনুমোতি দেয় না। এভাবেই চলছে সমস্যা। জেলে যাব আমাদের চেয়ারপার্সনের সঙ্গে দেখা করতে ঈদের দিনে, এটা প্রচলিত নিয়ম। জেল কোডের মধ্যে এই নিয়ম আছে। কিন্তু আমাদের দেখা করতে দেয় না। এমনকি তার পরিবারকে ঈদের দিন খাবার দেওয়ার নিয়ম আছে; সেটা পর্যন্ত নিতে দেওয়া হয়নি।”

আন্দোলনের প্রশ্নে ফখরুল বলেন, “মাঠে নামতে হবে, মাঠে নেমে হরতাল-ভাংচুর করতে হবে—এটা ভুল। আমরা মাঠে আছি, মাঠে থেকে সারাক্ষণ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা আন্দোলনটা করছি। আমরা আমাদের কৌশল নিয়ে কাজ করছি। নির্বাচন সামনে রেখে অবশ্যই আমরা জনগণের কাছে যাব।

“শেষ মুহূর্তে রাজনীতির বিভিন্ন রকম পরিবর্তন হয়। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলনে আছি; আন্দোলনে থাকব “

তিনি আগামী নির্বাচনের জন্য বিএনপির সব নেতাকর্মীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির অর্থ-সম্পাদক শরিফুল ইসলাম শরিফ, সদর থানা বিএনপির সভাপতি আব্দুল হামিদ, পৌর বিএনিপর সাধারণ সম্পাদক তারিক আদনান, জেলা যুবদলের সভাপতি মহেবুল্লাহ চৌধুরী আবু নূর, সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব হোসনে তুহিন, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নূরুজ্জামান নূরু, সাধারণ সম্পাদক সোহেল, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. কায়েস ফখরুলের সঙ্গে ছিলেন।