বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, গত ৪ অগাস্ট সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষ থেকে স্নাতকে ‘চা শ্রমিক কোটা’য় চার জন করে শিক্ষার্থীকে ভর্তি করা হবে।
কোটা বিরোধী আন্দোলনে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এ সিদ্ধান্ত হলেও তা ইতিবাচক বলে মনে করছেন চা-শ্রমিক সংশ্লিষ্টরা।
মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৮, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী/জাতিসত্ত্বা/হরিজন-দলিত কোটায় ২৮, প্রতিবন্ধী কোটায় ১৪, বিকেএসপি কোটায় ৬, পোষ্য কোটা ২০ এবং এবারের চা-শ্রমিকের ৪ জনসহ মোট ১০০ শিক্ষার্থীকে এবার কোটায় ভর্তি করা হবে।
উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চা-শ্রমিকেরা এখনও অনগ্রসর। তাদের কমিউনিটিকে তুলে আনতে, তাদের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে আমরা দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম এ উদ্যোগ নিয়েছি।”
এই কোটা ব্যবস্থায় এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের আগ্রহ বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন চা-শ্রমিকদের নিয়ে কাজ করা বিভিন্ন সংগঠন ও গবেষকরা।
চা-শ্রমিকদের জীবন ও সংস্কৃতি নিয়ে 'সিলেটের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী চা-শ্রমিকদের কৃত্য-নাট্য ও সংস্কৃতি’ শিরোনামে পিএইচডি করেছেন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক আশ্রাফুল করীম।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, চা-শ্রমিকরা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছে। ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও দলিত শ্রেণি কোটার মধ্যে তারা পড়লেও এ কোটা থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা তারা পাচ্ছে না।
“এখন তাদের জন্য আলাদা কোটা চালু হয়েছে। তাদের মধ্যে উচ্চশিক্ষার আগ্রহ সৃষ্টিতে এ ধরনের কোটা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তাদের মধ্যে শিক্ষার আলো পৌঁছালে সামগ্রিকভাবে তাদের জীবনমান উন্নত হবে।”
ট্রান্সপেরেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর অধীনে চা-শ্রমিকদের নিয়ে কাজ ও গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন রবিউল ইসলাম। তিনি সিলেট বিভাগসহ মোট ছয়টি জেলার চা-বাগান নিয়ে গঠিত সিলেট ক্লাস্টারের ডেপুটি পোলার ম্যানেজারের দায়িত্বে আছেন।
উচ্চশিক্ষায় ভর্তিতে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা ব্যবস্থা চালুর প্রশংসা করে তিনি বলেন, “আমরা যখন চা-শ্রমিকদের কাছে যাই; তখন তাদের দুঃখ-কষ্ট আমরা কাছ থেকে দেখতে পাই। তারা বিশ্বাসই করে না তারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে সক্ষম বা উচ্চশিক্ষা তাদের জন্য।
“কোটা চালু হওয়ায় এখন তাদের শিক্ষার প্রতি আগ্রহ বাড়বে, প্রলুব্ধ হবে। তাদের মধ্যে এক ধরনের নিশ্চয়তা কাজ করবে।”
সিলটে ১৯টি এবং মৌলভীবাজারে ৯১টি চা-বাগান রয়েছে।
এ ব্যাপারে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় সিলেটের কয়েকজন চা-শ্রমিকের।
লাক্কাতুরা চা বাগানের শ্রমিক শান্তিলাল গোয়ালা বলেন, “নানা সমস্যার কারণে আমাদের সন্তানেরা ভালোভাবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে না। আমরা বিভিন্ন সুযোগ-সবিধা থেকেও বঞ্চিত। কোটার মাধ্যমে আমাদের সন্তানদের সুযোগ দিলে তারা ভালো কিছু করতে পারবে।”
বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত চা শ্রমিক সন্তানদের সমন্বয়ে গঠিত সংগঠন 'বিশ্ববিদ্যালয় চা ছাত্র সংসদ’র সহ-সভাপতি দেবাশীষ যাদব বলেন, “একটি শিক্ষিত জাতি পারে দেশকে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে। শিক্ষাক্ষেত্রে বিপ্লব ঘটলে পরিবর্তন আসবেই।
“বাংলাদেশে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসেবে চা জনগোষ্ঠীকে শিক্ষাক্ষেত্রে এগিয়ে নিয়ে যেতে তথা দেশের কল্যাণে চা শ্রমিক কোটা সুবিধা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।”