সরকার দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার বন্ধ রাখলেও বিভিন্ন জেলায় স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে এসে সড়ক অবরোধ মানব বন্ধনের মত কর্মসূচি পালন করছেন। কয়েকটি স্থানে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
গত ২৯ জুলাই ঢাকায় একটি বাসের চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর থেকে প্রতিদিনই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অবরোধ চালিয়ে আসছে ছাত্রছাত্রীরা।
জেলা প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-
খুলনা:
ঢাকায় বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহততের প্রতিবাদ ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে খুলনার নগরীর শিববাড়ি মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে মানবন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
বৃহস্পতিবার বেলা ১২টা থেকে শুরু হওয়া এ কর্মসূচিতে জেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এ সময় নিরাপদ সড়কসহ বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে সেগুলো বাস্তবায়নের দাবি জানান তারা।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হল- নিরাপদ সড়কের স্বার্থে বেপোরোয়া চালককে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে, শিক্ষার্থীদের চলাচলে ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে, প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাগুেলোতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে, শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সংকেত দিলে তাদের বাসে তুলতে হবে, ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবেন না, বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না এবং উশৃঙ্খল মোটর সাইকেল চালকেদের জরিমানাসহ শাস্তি দিতে হবে।
রাজশাহী:
রাজশাহীতে বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে এক ঘণ্টা নগরীর সাহেববাজার জিরোপয়েন্টে বিক্ষোভ করেছে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে হাতে নানা প্ল্যাকার্ড নিয়ে জিরোপয়েন্টের রাস্তায় জড়ো হতে থাকে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তীব্র যানজট তৈরি হয় নগরীর প্রাণকেন্দ্র সাহেববাজার জিরোপয়েন্টসহ আশপাশের সড়কগুলোতে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইমরুল কায়েস ইশাত বলেন, “আমরা নিরাপদে চলাচল করতে চাই। আমরা সুষ্ঠু বিচার চাই। আমাদের দফা দাবি মানতেই হবে।”
শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কেন্দ্র করে সাহেববাজার জিরোপয়েন্ট এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করা হয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের চারপাশ দিয়ে পুলিশ ঘিরে রাখে।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, “শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছে; তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুলিশ সতর্ক অবস্থানে ছিল।”
নোয়াখালী:
‘নিরাপদ সড়ক চাই, পথ যেন হয় শান্তির মৃত্যুর নয়’ এই শ্লোগানে নোয়াখালীতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করছে বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা।
বেলা ১১টা থেকে জেলার বিভিন্ন স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীরা শহরের মাইজদী-চৌমুহনী সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। ফলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সেখানে কয়েকটি বাস ভাঙচুর করে শিক্ষার্থীরা।
এক পর্যায়ে দুপুর দেড়টার দিকে একদল ছাত্র ও যুবক সড়কে অবস্থান নেওয়া শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করলে শিক্ষার্থীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়।
পরে শিক্ষার্থীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করে।
জেলার পুলিশ সুপার মো. ইলিয়াছ শরীফ বলেন, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচি নিয়ে আমাদের কোন আপত্তি নেই। তবে এই কর্মসূচিকে ঘিরে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি এড়াতে ঘটনাস্থলে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া:
বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি কলেজ থেকে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান রাস্তা ঘুরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাব চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি প্রতিবাদ সভা হয়।
এতে সরকারি কলেজসহ বিভিন্ন কলেজ ও উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। এ সময় নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা।
চাঁদপুর:
চাঁদপুর শহরে রাস্তা অবরোধ করে ছাত্র-ছাত্রীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শত শত ছাত্রছাত্রী মিছিল নিয়ে শহরের কালিবাড়ি এলাকায় জমা হয়। পরে একটি মিছিল নিয়ে শহরের বাসস্ট্যান্ডে যায় তারা।
সেখানে দুটি বাসে ভাঙচুর চালায় শিক্ষার্থীরা। এ সময় পুলিশ ধাওয়া দিলে বাসস্ট্যান্ডের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয় তারা।
পরে পুলিশ গিয়ে তাদের শান্ত করলে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছাত্ররা অবরোধ তুলে নেয়।
বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জানান।
মাগুরা:
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শহরের চৌরঙ্গী মোড় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।
পরে সরকারি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে সড়কে অবস্থান নিয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিসহ বিভিন্ন শ্লোগান দেয় তারা।
এরপর বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে শিক্ষার্থীরা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে শহরের ভায়না মোড়ে দিকে রওনা হলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পরে শিক্ষার্থীরা ফিরে গিয়ে আবারও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের সামনে অবস্থান নেয়।
ফরিদপুর:
বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে জেলা শহরের হাইস্কুল মার্কেটের সামনে বিভিন্ন স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা জড়ো হয়ে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
মিছিলটি শহরের প্রধান সড়ক ঘুরে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়। পরে নিরাপদ সড়কের দাবিতে সেখানে মানববন্ধন করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় সড়কে যান চলাচল সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
লালমনিরহাট:
নিরাপদ সড়কের দাবিতে লালমনিরহাটে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
লালমনিরহাট শহরের মিশনমোড়ে বেলা ১২টার দিকে মানববন্ধনে মানববন্ধনে জেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। অবিলম্বে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবি জানান তার।
গাজীপুর:
নিরাপদ সড়কের দাবিতে বৃহস্পতিবারও গাজীপুরের টঙ্গী, চান্দনা-চৌরাস্তা, কালিয়াকৈর উপজেলার সফিপুর ও চন্দ্রায় মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ এবং চালকদের লাইসেন্স, গাড়ির ফিটনেস যাচাই-বাছাই করেছে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় সড়ক-মহাসড়কে গাড়ির সংখ্যা কমে গেলে যাত্রীরা ভোগান্তিতে পড়েন।
গাজীপুর ট্রাফিক পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে টঙ্গীর কয়েকটি স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা টঙ্গীর স্টেশন রোড ও কলেজগেইট এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে। এসময় পুলিশ তাদের রাস্তা থেকে সরে যেতে বলে।
কিন্তু তারপরও তারা অবরোধ না ছাড়লে এবং গাড়ি ভাংচুরের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে বলে জানান তিনি।
শিক্ষার্থীদের এ অবরোধে ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে দূরপাল্লার কোনো যান চলাচল করতে দেখা যায়নি।
নরসিংদী:
নয় দফা দাবিতে নরসিংদীতে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষাথীরা।
বেলা ১১টা থেকে নরসিংদীর ভেলানগর এলাকায় বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অবরোধ করলে তা সৈয়দনগর ইটাখোলাসহ মহাসড়কের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়ে।
এসময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
খবর পেয়ে জেলা প্রশাসক সৈয়দা ফারহানা কাউনাইন,পুলিশ সুপার সাইফুল্লা আব্দুল্লা মামুন,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শফিউর রহমান,অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাকির হোসেনসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসে শিক্ষার্থীদের সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
তবে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের আশ্বাসে সড়ক থেকে সরতে রাজি না হওয়ায় বেলা ৫টা পর্যন্ত ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ১৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হয়।
যশোর:
যশোরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শহরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করে।
বেলা ২টার দিকেও শিক্ষার্থীরা শহরের পুরনো কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল মণিহার চত্বরে চলাচলরত বাস-ট্রাক, মাইক্রোবাস, ট্যাক্সি, মিনি ট্রাক, পিকআপ ভ্যানসহ বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দেখে।
এরআগে সকাল থেকে শহরের মুজিব সড়কে প্রেসক্লাবের সামনে, কেন্দ্রীয় ঈদগাহর মোড়, দড়াটানা, চৌরাস্তা, মণিহার চত্বরসহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে বিক্ষোভ দেখায় শিক্ষার্থীরা।
তারা ওই সব পয়েন্টে আসা যানবাহনের কাগজপত্র এবং চালকের কাছে ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে কি না তা পরীক্ষা করে।
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক আবুল বাশার বলেন, শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে কোনে যানবাহনের ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
সাভার:
সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তারা ৫/৬টি যানবাহন ভাংচুর করে এবং যাদের ড্রাইভিং লাইসেন্স নেই তাদের নাজেহাল করে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের সাভার বাসস্ট্যান্ড থেকে মিছিল নিয়ে রেডিও কলোনি বাসস্ট্যান্ডে মহাসড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীরা।
বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহাসড়কে বসে শ্লোগান দিতে থাকে তারা। পরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠারে শিক্ষার্থীরা সড়কের উভয় পাশে আটকা পড়া যানবাহনের চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষা করে।
যাদের লাইসেন্স নেই কিংবা লাইসেন্সের মেয়াদ শেষ হয়েগেছে তাদের গাড়ি আটকে রাখে। অনেকের গাড়ির চাবি নিয়ে যেতেও দেখা যায়।
এছাড়া শিক্ষার্থীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেইরি গেইট, সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড, সাভার থানা স্ট্যান্ডে এনাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে। বাইশমাইল এলাকায় গণবিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও বিক্ষোভ দেখিয়েছে।
এদিকে অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে শত শত যানবাহন আটকা পড়ে। অনেককেই পায়ে হেঁটে তাদের গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।
এছাড়া দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁও, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় নিরাপদ সড়কের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা।