বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র বন্ধ হওয়ায় দুর্ভোগ

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় বিপদে পড়েছে রংপুর বিভাগের আট জেলার মানুষ।

রংপুর প্রতিনিধিশাহজাদা মিয়া আজাদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2018, 10:17 AM
Updated : 24 July 2018, 10:27 AM

লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজে কল-কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। আলু নিয়ে বিপাকে পড়েছেন হিমাগারমালিকরা। এছাড়া রান্নাবাড়া করতে না পারা আর বৈদ্যুতিক পাখা না ঘোরায় তীব্র গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গৃহস্থালির কাজে ও কর্মস্থলে।

কয়লার অভাবে রোববার ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।

বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু বলেন, রংপুর বিভাগে শুধু তারই আটটি হিমাগারে আলু ভর্তি রয়েছে।

“লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি লো-ভোল্টেজের কারণে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম চরমভাবে বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলে আলু নিয়ে দারুণ শঙ্কায় আছি।”

রংপুরের মায়া অ্যাগ্রো লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম মায়া তার কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “জেনারেটর দিয়ে সার্বক্ষণিক কারখানা চালোনো সম্ভব নয়। আবার লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজের কারণে মেশিন চালানো যাচ্ছে না।”

আর খরতাপে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সবাইকে।

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ বলেন, “এমনিতেই শ্রাবণের গরমে কাহিল। সেখানে বিদ্যুতের লোডশেডিং ও লো-ভোল্টেজ শুরু হওয়ায় ফ্যান ও এসি ঠিকমত চালানো যাচ্ছে না। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।”

শহরের মার্কেটগুলোয় কেনাবেচায় মন্দা দেখা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন রংপুর চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালক মোতাহার হোসেন মণ্ডল মওলা।

তিনি বলেন, “তীব্র গরমে বিদ্যুতের ঘন ঘন লোডশেডিং আর লো-ভোল্টেজে দোকানপাটে ঠিকমত ফ্যান ঘুরছে না। লাইট জ্বলছে না। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে সমস্যা দেখা দিয়েছে।”

রান্নাবাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বহু মানুষ। রংপুর সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মাহিগঞ্জ ধুমখাটিয়া এলাকার গৃহিণী শাহনাজ পারভীন রেশমা তাদেরই একজন।

রেশমা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “রান্নাবান্না এখন পুরোটাই বিদ্যুৎনির্ভর। লো-ভোল্টেজে চুলা চালানো যাচ্ছে না। খাবার নষ্ট হওয়ার আশঙ্কায় ফ্রিজ সব সময় বন্ধ রাখতে হচ্ছে। তবু তরিতরকারি, ফলমূল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।”

এদিকে বিদুৎ কর্তৃপক্ষ এখনও কোনো আশার বাণী শোনাতে পারেনি।

নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শাহাদৎ হোসেন সরকার বলেন, “রংপুর বিভাগের আট জেলায় দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা ৬৫০ মেগাওয়াট। বড়পুকুরিয়ায় উৎপাদিত হত ৫২৫ মেগাওয়াট। এই ঘাটতিতে লোশেডিংয়ের সমস্যা হতো না।

“বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ায় আট জেলায় লো-ভোল্টেজ সমস্যা দেখা দিয়েছে। সোমবার থেকে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। কিন্তু দূর থেকে বিদ্যুৎ আসায় লো-ভোল্টেজ হচ্ছে। লোডশেডিং করতে হচ্ছে।”

বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না হলে এ সমস্যা থেকে রেহাই নেই বলে তিনি জানান। কিন্তু কবে নাগাদ সেটা চালু হবে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।