কয়লার অভাবে ‘বন্ধের পথে’ বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র

কয়লা সংকটে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের উৎপাদন যে কোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সেখানকার শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা।

দিনাজপুর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2018, 03:24 PM
Updated : 21 July 2018, 04:10 PM

৫২৫ মেগাওয়াট তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রটির তিনটি ইউনিটের দুটি বন্ধ রয়েছে। আরেকটি থেকে মাত্র ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হলেও সেটি যে কোনো বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (ব্যবস্থাপক সংরক্ষণ) মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনমতো কয়লা সরবরাহ করতে না পারায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

এদিকে খনির কোল ইয়ার্ড থেকে এক লাখ ৪০ হাজার টন কয়লা ‘উধাও’ হওয়ার ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির শীর্ষ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার সংকট তুলে ধরে মাহবুবুর রহমান শনিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্রের তিনটি ইউনিট চালু রাখতে দৈনিক পাঁচ হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লা প্রয়োজন।

“কিন্তু চলতি জুলাই মাস থেকে বড়পুকুরিয়া খনি কর্তৃপক্ষ কয়লার সরবরাহ কমিয়ে ৭০০ টনে নামিয়ে আনায় ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন একটি ইউনিট বন্ধ হয়ে গেছে। ১২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার আরেকটি ইউনিট আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে।”

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ এখন বিদ্যুৎ কেন্দ্রে দিনে ৬০০ থেকে ৭০০ টন কয়লা সরবরাহ করছে জানিয়ে মাহবুবুর বলেন, এতে তৃতীয় ইউনিটটিও চালানো কঠিন হয়ে পড়েছে।

২৭৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে পুরো উৎপাদন পেতে দিনে প্রায় তিন হাজার টন কয়লা দরকার হয় জানিয়ে এই প্রকৌশলী বলেন, কয়লা না থাকায় এই ইউনিট থেকে বর্তমানে ১৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে।

হঠাৎ করে কয়লার এই ঘাটতি নিয়ে তিনি বলেন, “গত ২০ জুন সমন্বয় সভায় খনি কর্তৃপক্ষ ১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা মজুদের হিসাব দেয়। আমরাও তার উপর ভিত্তি করেই পরিকল্পনা করি।

“কিন্তু এখন তারা কয়লা দিতে পারছে না। কয়লা সংকটে বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু রাখা নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছে।”

কয়লা সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি কর্তৃপক্ষ জানায়, একটি স্টোভ থেকে নতুন স্টোভে যন্ত্রপাতি স্থানান্তরের জন্য গত ১৬ জুন থেকে খনির উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। পুনরায় কয়লা উত্তোলন শুরু হবে আগামী অগাস্ট মাসের শেষের দিকে।

খনির কোল ইয়ার্ডে এক লাখ ৮০ হাজার টন কয়লা মজুদ রয়েছে বলে গত ২০ জুন পিডিবিকে জানায় খনি কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জুলাই মাসের শুরু থেকেই তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লার সরবরাহ কমিয়ে দেয় তারা।

তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রে বেশি দিন কয়লা সরবরাহ করা সম্ভব হবে না বলেও চার-পাঁচ দিন আগে পিডিবিকে জানিয়ে দেয় খনি কর্তৃপক্ষ।

এখন খনির কোল ইয়ার্ডে কয়লার মজুদ শেষ পর্যায়ে বলে জানিয়েছেন খনির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, খনির কোল ইয়ার্ডে বর্তমানে দেড় লাখ মেট্রিক টন কয়লা মজুদ থাকার কথা। কিন্তু শনিবার সেখানে মজুদ আছে মাত্র চার থেকে পাঁচ হাজার টন কয়লা।

“বাকি এক লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন কয়লার কোনো হদিস নেই।”

তিনি বলেন, কয়লার এই অবস্থা জানাজানির পর বৃহস্পতিবার রাতেই এক অফিস আদেশে খনির মহাব্যবস্থাপক (মাইন অপারেশন) নুরুজ্জামান চৌধুরী ও উপ-মহাব্যবস্থাপক (স্টোর) খালেদুল ইসলামকে সাময়িক বরখাস্ত করে।

ওই রাতেই খনির শীর্ষ কর্মকর্তা ব্যবস্থাপনা পরিচালক হাবিব উদ্দিন আহমদকে অপসারণ করে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। আর মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন ও কোম্পানি সচিব) আবুল কাশেম প্রধানিয়াকে পশ্চিমাঞ্চল গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড সিরাজগঞ্জে তাৎক্ষণিক বদলি করা হয়।

বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পেয়েছেন পেট্রোবাংলার পরিচালক আইয়ুব খান। ঢাকা থেকে গিয়ে এরইমধ্যে দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি।

এদিকে ঘটনা তদন্তে পেট্রোবাংলার পরিচালক কামরুজ্জামানকে প্রধান করে শুক্রবার তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান আবুল মনসুর মো. ফয়জুল্লাহকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।