ঈদের দিন ‘নিখোঁজ’ হয়েছিলেন ফেরদৌস

টাঙ্গাঈলে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত কিশোরী জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা গত ঈদের দিন নিখোঁজ হয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন স্বজনরা।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 July 2018, 02:46 PM
Updated : 17 July 2018, 03:35 PM

মঙ্গলবার ভোরে টাঙ্গাইল শহরে মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যা, তার খালাত ভাই ফারুক হোসেন এবং মামা সিরাজুল ইসলাম নিহত হন। আহত হন তিন পুলিশ ও মাইক্রোবাসের চালক।

ফেরদৌসের বাড়ি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার হাড়িয়া; ফারুক ও সিরাজুলের বাড়ি একই উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের ভাটিবন্দর গ্রামে।

নিহতদের বাড়িতে স্বজনদের আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠেছে। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

মঙ্গলবার দুপুরে হাড়িয়া গ্রামে জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যার বাড়ি গিয়ে দেখা যায় স্বজনরা আহাজারি করছেন। শোকাহত প্রতিবেশীরাও।

জান্নাতুল ফেরদৌস তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। তার মা শাহিদা বেগম বিলাপ করতে করতে বার বার মুর্ছা যাচ্ছিলেন। স্বজনদের কোনো সান্ত্বনা তাকে থামাতে পারছিল না।

ফেরদৌসের মা শাহিদা বেগম

বিলাপ করতে করতে মা শাহিদা বলেন, ১০ বছর আগে তার স্বামী মারা যাওয়ার পর অনেক কষ্টে সংসার চালিয়ে তিন মেয়েকে বড় করেছেন। তাদেরকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। তিন মেয়েকেই বিয়ে দিয়েছেন।

তিনি বলেন, গত বছরের (২০১৭ সাল) ডিসেম্বরে ছোট মেয়ে জান্নাতুল ফেরদৌস বন্যার সঙ্গে একই উপজেলার বারদী ইউনিয়নের সৌদি আরব প্রবাসী আল আমিনের টেলিফোনে বিয়ে পড়ানো হয়। এ বছরের শেষের দিকে আল আমিন দেশে ফিরে বন্যাকে তুলে নেওয়ার কথা ছিল।

গত রোজার ঈদের দিন বিকাল থেকে বন্যাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। কে বা কারা তুলে নিয়ে গেছে, বলেন তিনি।

“মাঝে মাঝে আমার মোবাইলে ফোন দিয়ে জানা নো হতো মেয়ে ভালো আছে। কিন্তু অনেক কাকুতি মিনতি করেও একটিবারের জন্য মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে পারিনি।”

মেয়ের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে উল্টো হুমকি দিত। প্রশাসনের সহায়তা নিলেও মেয়েকে মেরে ফেলার হুমকি দিত বলে জানান শাহিদা।

শাহিদা জানান, মেয়ের বাবা না থাকায় খালাত ভাই ফারুক হোসেন ও  মামা সিরাজুল ইসলাম পুলিশ নিয়ে মেয়েকে উদ্ধার করে আনতে গিয়েছিলেন রাজশাহী।

ফারুক-সিরাজুলের বাড়িতেও শোক

ফেরদৌসের খালাত ভাই ফারুক হোসেন ও মামা সিরাজুল ইসলামের বাড়িতেও শোকবিহ্বল স্বজনরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে দিশেহারা তারা।

ফারুকের শোকাহত স্বজনরা

ফারুক হোসেন

ফারুকের এক ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে অনিক সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র। মেয়ে রিয়া মনি সোনারগাঁ পাইলট স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী। 

ফারুক হোসেনের স্ত্রী জাহানারা বেগম বলেন, “পরিবারের উপার্জনক্ষম একমাত্র ব্যক্তি ছিলেন আমার স্বামী। কীভাবে সংসার চলবে। ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে জানি না।”

সিরাজুল ইসলামের দুই ছেলে এক মেয়ে। মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলের হাসান সোনারগাঁ ডিগ্রি কলেজের স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। ছোট ছেলে আবু সাইদ ভাটিবন্দ মিথতাহুলুম মাদ্রাসার ছাত্র।

সিরাজুল ইসলাম

সিরাজুলের স্ত্রী তাসলিমা বেগম বলেন, “সিরাজুল কৃষিকাজ করে সংসার ও দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ চালাতেন। কিন্তু এখন কে দেখবে আমাদের। ছেলেদের পড়াশোনা কীভাবে হবে? সংসার কীভাবে চলবে?”

রাজশাহী থেকে ফেরদৌসকে নিয়ে মাইক্রোবাসে ফিরছিলেন ফারুক ও সিরাজুল। তাদের সঙ্গে ছিলেন সোনারগাঁ থানার কয়েকজন পুলিশ। ভোরে টাঙ্গাইল শহরের কুমুদিনী কলেজ রোড এলাকায় মাইক্রোবাসের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে ফেরদৌস, ফারুক ও সিরাজুল নিহত হন। আহত হন সোনারগাঁ থানার এসআই তানভীর হোসেন, এএসআই হাবিব, কনস্টেবল আজহার ও মাইক্রোবাস চালক আকতার হোসেন।