প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত: বুকভরা বাওড়ে দ্বিতীয় দিনের তল্লাশি

যশোর সদর উপজেলার বুকভরা বাওড়ের যেখানে বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়েছে, সেখানে দ্বিতীয় দিনের মত চলছে উদ্ধার অভিযান।

যশোর প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 July 2018, 07:05 AM
Updated : 2 July 2018, 08:12 AM

নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল সোমবার সকাল ৯টা ২৫মিনিট থেকে সেখানে তল্লাশিতে অংশ নিচ্ছেন বলে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি আবুল বাশার মিয়া জানান।

কে–এইট ডব্লিউ প্রশিক্ষণ বিমানটি রোববার রাত ৯টা ২০ মিনিটে যশোরের মতিউর রহমান বিমান ঘাঁটি থেকে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর বুকভরা বাওড়ে পড়ে ডুবে যায়।

পরে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) পক্ষ থেকে দুই বৈমানিক স্কোয়াড্রন লিডার সিরাজুল ইসলাম ও স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবির পলাশের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।

আইএসপিআর জানিয়েছে, বিরূপ আবহাওয়ার কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। এ ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে।

যশোর বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক আলমগীর পাঠান রোববার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে  জানান, স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত ও স্কোয়াড্রন লিডার সিরাজ প্রশিক্ষণ বিমানটি নিয়ে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পর টাওয়ারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। পরে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার খবর আসে।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি বাশার জানান, বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান পড়ে যাওয়ার খবর পেয়ে রাত সাড়ে ৯টার দিকে বুকভরা বাওড়ে গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস।

“রাতে মরদেহ এবং বিধ্বস্ত বিমানের কিছু ধ্বংসাবশেষ উদ্ধার করা হয়। কিন্তু বিরূপ আবহাওয়ার কারণে ডুবে যাওয়া বিমানের অবস্থান চিহ্নিত করা যায়নি। ফলে ভোর ৪টার দিকে উদ্ধার অভিযান স্থগিত করা হয়। পরে খুলনা থেকে নৌ-বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল এলে সকালে আবার তল্লাশি শুরু হয়।”

যশোর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক পরিমল কুণ্ডু বলেন, রাতে তারা বাওড়ে তল্লাশি চালিয়ে দুই বৈমানিকের দেহের অংশবিশেষ উদ্ধার করেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী চান্দুটিয়া বাজারের ব্যবসায়ী শ্যামল কুমার সিংহ জানান, রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি বিকট শব্দ শুনে আরিচপুর বাজার সংলগ্ন বুকভরা বাওড়ের দিকে যান। দূর থেকে তারা দেখতে পান, একটি বিমানের কিছু অংশ বাওড়ের তীর থেকে প্রায় ৩০০ মিটার দূরে পানিতে ভাসছে।

“কেউ কেউ নৌকা নিয়ে বিমানের কাছে গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা সেখানে কাউকে পায়নি। গোটা এলাকায় পেট্রোলজাতীয় কোনো তেলের গন্ধ ভাসছিল। প্রচণ্ড বৃষ্টি আর অন্ধকারের কারণে কিছুই ঠিকভাবে দেখা যাচ্ছিল না।”

পলাশের বাড়িতে শোকের মাতম:

এদিকে নিহত বৈমানিক এনায়েত কবীর পলাশের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।

স্কোয়াড্রন লিডার এনায়েত কবির পলাশ জামালপুরের সরিষাবাড়ি উপজেলার কৃষ্টপুর গ্রামের সফি উদ্দিনের ছেলে।

পলাশসহ দুই বৈমানিকের মৃত্যুর খবর রোববার রাতে কৃষ্টপুরে এসে পৌঁছালে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। পলাশের স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে গ্রামের পরিবেশ।

পলাশের মামা এ এ এম আবু তাহের জানান, রোববার রাতে সাড়ে ৯টায় আইএসপিআর তাদের পরিবারকে দুর্ঘটনার খবর জানায়। পরে পরিবারের সবাই রাতেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।

তিনি বলেন, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্য সবার বড় পলাশ ২০০০ সালে ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট পদে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে যোগ দেয়। ৭/৮ বছর আগে চিকিৎসক নিতিকে বিয়ে করেন তিনি।

পলাশ আর নিতির সংসারে পারিসা নামে পাঁচ বছরের একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে।