হলি আর্টিজান: এখনও হাহাকার ‘জঙ্গি’ উজ্জ্বলের পরিবারে

দুই বছর আগে হলি আর্টিজনে জঙ্গি হামলার পর আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গি বগুড়ার শফিকুল ইসলম উজ্জ্বলকে স্মরণ করে এখনও হাহাকার করছেন স্বজনরা।

জিয়া শাহীন বগুড়া প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 June 2018, 05:39 PM
Updated : 30 June 2018, 05:39 PM

একই ঘটনায় বগুড়ার আরেক সন্দেহভাজন জঙ্গি খায়রুল ইসলাম বাঁধনের পরিবারের কেউ বাড়িতে নেই। প্রতিবেশীর কাছে শোনা যায় মৃত্যুর আগে তার নিখোঁজ হওয়ার কথা।   

২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে কূটনীতিক পাড়া গুলিশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালিয়ে ১৭ বিদেশিসহ ২০ জনকে হত্যা করে জঙ্গিরা। তাদের ঠেকাতে গিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন।

রাতভর উৎকণ্ঠার পর ২ জুলাই সকালে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানের মধ্য দিয়ে সঙ্কটের অভিযান ঘটে। হামলায় অংশ নেওয়া নব্য জেএমবির পাঁচ জঙ্গি ওই অভিযানে নিহত হয়।

বগুড়া শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার দূরে যমুনা পাড়ের গ্রাম চল্লিশ পাড়ায় থাকেন শফিকুল ইসলম উজ্জ্বলের পরিবার।

শনিবার তাদের বাড়ি গেলে উজ্জ্বলের বাবা বদিউজ্জামান বলেন, প্রতি বছর এই দিনটি আসলে ছেলের কথা  মনে পড়ে।

“কীভাবে জঙ্গি হয়েছিল তা কখনও বুঝতে পারিনি। তার আচার আচরণ ও কথাবার্তায় কিছুই বোঝা যায়নি। তবে এসব কাজে কারও যাওয়া ঠিক না। ছেলে তো তাই মনটি কাঁদে। আজ সারাদিন কোন কিছু খেতে ইচ্ছে করেনি। বাড়িতে বসেও মন টিকছে না। ছেলেটির লাশ যদি পেতাম অন্তত আজ কবরটা জিয়ারত করতে পারতাম। আর কোনো বাবা-মার সন্তান যেন এ পথে না আসে।”

উজ্জ্বলের বাবার আগের বাড়ি ছিল বগুড়ার ধুনট উপজেলার ভান্ডারবাড়ী ইউনিয়নের কচুগাড়ী গ্রামে। যমুনার ভাঙনে বাড়ি ভেঙে গেলে তারা চল্লিশপাড়ায় চলে যান।

বদিউজ্জামান একজন কৃষক। তার তিন ছেলে। বড় ছেলে আশাদুল ইসলাম শ্যালো মেশিন মেরামতের কাজ করেন। মেজ ছেলে রফিকুল ইসলাম ঢাকায় একটি পোশাক কারখানার কর্মচারী। সবার ছোট ছিলেন শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল।

উজ্জ্বল গ্রামের বিদ্যালয় গোসাইবাড়ী এ এ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করেন। পরে গোসাইবাড়ী ডিগ্রি কলেজ থেকে বি এ পাশ করে বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজে স্নাতকোত্তরে ভর্তি হন।

তাদের বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, সবাই চুপচাপ। কারো মুখে কথা নেই। হাসি তো নেই-ই।

উজ্জ্বলের মেজ ভাবি শাপলা বলেন, “সরকারি আজিজুল হক কলেজে ভর্তির পর সাভার এলাকায় জামগড়ায় আমাদের বাসায় থেকে একটি স্কুলে শিক্ষকতা করছিল উজ্জ্বল। পরীক্ষার সময় বগুড়ায় এসে পরীক্ষা দিত। মাস্টার্স শেষ পরীক্ষার আগেই ঘটনাটি ঘটল।”

সাভারে এবং গ্রামে তার কোনো বন্ধু ছিল না জানিয়ে শাপলা বলেন, “বন্ধুদের নিয়ে ঘোরা-ফেরা পছন্দ করত না। একা থাকতে ভালবাসত।  তার আচরণে কখনও হিংসার মনোভাব প্রকাশ পায়নি। উজ্জ্বল যে এতবড় জঘন্য দুর্ধর্ষ কাজ করবে, ভাবতেও পারিনি।”

ঘটনার কয়েকদিন আগে গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন। পরে মা আছিয়া বেগম ও বাবা বদিউজ্জামানকে তাবলীগের চিল্লায় যাওয়ার কথা বলে বিদায় নেন বলে জানান শাপলা।

বগুড়ার নিহত আরেক সন্দেহভাজন জঙ্গি খায়রুল ইসলাম বাঁধন। তাদের বাড়ি শাজাহানপুর উপজেলার বৃকুষ্টিয়া দক্ষিণ মন্ডলপাড়ায়।

শনিবার বেলা ১১টার দিকে মন্ডলপাড়ায় গেলে দেখা যায় টিন দিয়ে ঘেরা বাঁধনদের বাড়িতে কেউ নেই। প্রতিবেশীরাও জানাতে পারেনি তারা কোথা গেছে।

খায়রুলের বাবা আবুল হোসেন দিনমজুর। তার দুই মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে খায়রুল ইসলাম সবার ছোট।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খায়রুলের এক প্রতিবেশী জানান, বিহিগ্রাম ফাজিল মাদ্রাসা থেকে কামিল পাশ করার পর বাড়িতেই ছিলেন খায়রুল।

তিনি বলেন, “২০১৬ সালে আগন মাসের (অগ্রহায়ণ মাস) পর থেকে খায়রুল হঠাৎ নিখোঁজ হয়ে যায়। খোঁজ-খবর করেও কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায় হলি আর্টিজেনের ঘটনায় সে আইনশৃংখলা বাহিনীর হাতে মারা গেছে।”

বগুড়ার অতিরিক্ত জ্যেষ্ঠ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মন্ডল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “হলি আর্টিজেনের ঘটনায় বগুড়ার ধুনট উপজেলার শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল ও শাজাহানপুর উপজেলার খায়রুল ইসলাম বাঁধন জড়িত ছিল এবং ঘটনাস্থলে তারা মারা যায়।”

আগে থেকেই জঙ্গি তৎপরতা রোধে বগুড়াসহ উত্তরাঞ্চলে সজাগ দৃষ্টি ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, হলি আর্টিজেনের ঘটনার পর তৎপরতা অব্যহত রেখেছে পুলিশ। তাই বড় ধরনের কোনো ঘটনা ঘটাতে পারেনি জঙ্গিরা।