দণ্ড নিয়ে ফেরারী আসামি পুলিশে চাকরিতে

ময়মনসিংহে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত এক ফেরারী আসামি পুলিশে সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) পদে চাকরি করছেন।

ময়মনসিংহ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 June 2018, 05:49 PM
Updated : 26 June 2018, 05:49 PM
মিজানুর রহমান ওরফে জুয়েল নামে ওই ব্যক্তি রাজশাহী মহানগর পুলিশে (আএমপি) এএসআই পদে কর্মরত রয়েছেন।

এক খুনের মামলায় ২০১৩ সালে ১৩ মার্চ ময়মনসিংহের অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মোহাম্মদ জহিরুল কবির নয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন; তাদের একজন জুয়েল বলে মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী সঞ্জীব সরকার জানান।

হাই কোর্টে রিট আবেদন করে মামলাটি খারিজের আদেশ পেয়েছেন বলে এআসআই মিজানুর রহমান দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো কাগজপত্র দেখাতে পারেননি তিনি।

সঞ্জীব সরকার বলেন, ২০০৩ সালের ১৮ মে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার ভাটি চরনওপাড়া গ্রামে জমিসংক্রান্ত বিরোধে খুন হন কৃষক শাহজালাল। ওই দিন তার স্ত্রী নূরজাহান বেগম বাদী হয়ে ২৮ জনকে আসামি করে মামলা করেন। পরে ওই বছরের ২৫ ডিসেম্বর ২৩ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ।

“২০১৩ সালে ১৩ মার্চ ময়মনসিংহের অতিরিক্ত দায়রা জজ মোহাম্মদ জহিরুল কবির নয় আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন।”

বাকি ১৪ জনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় বলে জানান তিনি।        

আদালতের দায়িত্বরত পেশকার আ. গণি জানান, রায়ের পর ২০১৬ সালের ১৫ মার্চ দণ্ডিত ছয়জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে পাঠানো হয়েছে।    

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে এএসআই মিজানুর রহমান বলেন, “কৃষক মো. শাহজালাল খুনের ঘটনার সময় আমার বয়স কম ছিল। পরবর্তীতে হাই কোর্টে রিট করা হলে মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।”

মিজান পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগদান করে চট্টগ্রাম চাকরি করেন। পরে পদোন্নতি পেয়ে এএসআই হয়ে এখন রাজশাহী নগর পুলিশে কর্মরত।

মিজান খারিজের কথা বললেও একই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তার বাবা হেলাল উদ্দিন বলেন, “আপিল করে আমরা জামিনে আছি।” 

এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ থানার এসআই সাফায়েত হোসেন জানান, পুলিশের খাতায় খুনের মামলায় যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মিজানুর রহমান ওরফে জুয়েল এবং বাচ্চু মিয়া এখনও ফেরারী।

“দণ্ডপ্রাপ্তদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ২০১৬ সালে থানায় আসে। বর্তমানে ফেরারি আসামি বাচ্চু সৌদি প্রবাসী এবং জুয়েল পুলিশে কর্মরত আছে।”       

নিহতের ভাই লাল মিয়া বলেন, জুয়েল প্রতি বছর ঈদ করতে এবং বাচ্চু কয়েক বছর পর পর বিদেশ থেকে বাড়ি আসে। কিন্তু পুলিশ তাদের ‘খোঁজ করে না’।

“ফলে খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজা নিয়ে জুয়েল বহাল তবিয়তে পুলিশের চাকরি করছে এবং বাচ্চু সৌদি আরবে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছে।”

এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ওসি আহম্মেদ কবীর হোসেন বলেন, মিজানুর রহমান ওরফে জুয়েলসহ পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তারি পরোয়ানা হাতে পেয়েছি। কিন্তু মিজানুর রহমান ওরফে জুয়েল সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে পরোয়ানা তামিল করতে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে একাধিকবার চিঠি দেওয়া হয়েছে।

“কিন্তু এখনও নির্দেশনা না পাওয়ায় পরোয়ানা তামিল করা সম্ভব হচ্ছে না।”  

এ বিষয়ে গৌরীপুর সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার সাখের হোসেন সিদ্দিকী বলেন, “বিষয়টি আমি অবগত নই। তবে খোঁজ নিয়ে অবশ্যই আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”