দোয়ারি মৌসুমে সরব ফরিদপুরের হাজীগঞ্জ বাজার

বর্ষার শুরুতেই দোয়ারি নামে মাছ ধরার ফাঁদ কেনাবেচায় সরগরম হয়ে উঠেছে ফরিদপুরের হাজীগঞ্জ বাজার।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 June 2018, 08:24 AM
Updated : 25 June 2018, 10:03 AM

চরভদ্রাসন উপজেলায় পদ্মাপারে গড়ে ওঠা এ বাজারে প্রধানত দোয়ারি কেনাবেচা হয়। সপ্তাহে দুই দিন শনি ও মঙ্গলবার এখানে হাট বসে। হাট থেকে দোয়ারি কিনে নিয়ে যান বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা।

এছাড়া জেলার সদরপুর ও আলফাডাঙ্গা উপজেলারও বিভিন্ন এলাকায় দোয়ারি তৈরি ও কেনাবেচা জমে উঠেছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন দোয়ারি তৈরির কারিগর ও কারবারিরা।

সরেজমিনে ঘুরে কারিগর, কারবারি ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তাদের হালহকিকত।

হাজিগঞ্জ হাটে দোয়ারি বেচতে আসা স্থানীয় আসলাম মিয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আমরা বর্ষা মৌসুমে ঘরে বসে বাঁশ ও বেত দিয়ে দোয়ারি তৈরি করি। প্রতিবছর জ্যৈষ্ঠ ও আষাঢ় মাসে ডোবানালায় পানি বাড়লে দোয়ারির কদর বাড়ে।

“পানির ধার বুঝে দোয়ারি পাতা হয়। মৎস্যজীবীরা প্রতিদিন সকাল-বিকাল দুই বেলা দোয়ারিতে আটকা পড়া মাছ সংগ্রহ করে হাটে-বাজারে বেচেন।”

দোয়ারির কারিগর সেকেন শেখের বাড়ি হাজিগঞ্জ হাটের পাশেই। তার পরিবারের সবাই এখন দোয়ারি তৈরির কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে তিনি জানান।

“এখন এ এলাকার কারও চোখে ঘুম নেই। সবাই রাতদিন দোয়ারি তৈরির কাজে ব্যস্ত। বাড়ির বাগান থেকে বাঁশ-বেত কেটে অথবা বাজার থেকে কিনে এনে রাতদিন দোয়ারি তৈরি করে হাটে বেচাই এখন তাদের প্রধান কাজ।”

শুধু দোয়ারি কেনাবেচাকে কেন্দ্র করেই দোয়ারিপট্টি নামে একটি বড় গ্রাম গড়ে উঠেছে হাজিগঞ্জ হাটের পাশেই।

এই গ্রামের রহিম শেখ বলেন, বড় একটি বাঁশ কিনে অন্তত চারটি দোয়ারি তৈরি করা যায়। প্রতিটি দোয়ারি ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। একটি বাঁশ কিনতে হয় ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়।

ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও দেশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেক ব্যাপারি দোয়ারি কিনতে আসেন হাজিগঞ্জ হাটে।

ঢাকা থেকে এসেছেন জানিয়ে জামাল মোল্লা নামে এক দোয়ারি ব্যাপারি বলেন, “এ অঞ্চলের দোয়ারিগুলো মজবুত ও টেকসই। এখান থেকে দোয়ারি কেনার পর ট্রলারে করে পদ্মা বেয়ে সিরাজগঞ্জ নিয়ে বিক্রি করি। সিরাজগঞ্জের জেলেরা এসব দোয়ারি দিয়ে বর্ষা মৌসুমে চিংড়িসহ বিভিন্ন মাছ ধরে।”

স্থানীয় বাঁশ ও বেত দিয়ে তৈরির সুযোগ থাকায় দোয়ারি বানিয়ে বহু মানুষ কর্মসংস্থান করতে পেরেছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রতিনিধিরা।

সদরপুর উপজেলার ঢেউখালি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক বেপারী বলেন, এ উপজেলার শতাধিক গ্রামে কয়েক শত পরিবার দোয়ারি তৈরির কাজে আছে। বর্ষা মৌসুমের তিন মাস তারা ব্যস্ত থাকে এ পেশায়। বছরের অন্য সময় দোয়ারির চাহিদা কম থাকে।

চরভদ্রাসন উপজেলায় দুই শতাধিক পরিবার দোয়ারিশিল্পের সঙ্গে জড়িত বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ জি এম বাদল আমিন।

তিনি বলেন, এ উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নে শুধু দোয়ারি তৈরিকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে দোয়ারিপট্টি নামে বিশাল একটি গ্রাম। এছাড়া চরঅযোধ্যায় বাঞ্ছারাম বিশ্বাসের ডাঙ্গী, ঢালার পাড়, চরহরিরামপুর ইউনিয়নের আরজখাঁর ডাঙ্গী, ইন্তাজ মোল্লার ডাঙ্গী, আমিন খাঁর ডাঙ্গী, চরসালেপুর গ্রাম, চরভদ্রাসন ইউনিয়নের করিম মৃধার ডাঙ্গী, টিলারচর, জাকেরের সুরাসহ বিভিন্ন গ্রামে দোয়ারি তৈরি করে বহু পরিবার।

সদরপুর উপজেলার ঢেউখালি, দুয়াইর, চরবলাশিয়া, পেঁয়াজখালি, আকোটেরচর, শয়তানখালী, রামসুন্দরের ডাঙ্গি, চরনাসিরপুর, চরমানাইর ও আলফাডাঙ্গা উপজেলার বেশ কটি গ্রামের কয়েক শ পরিবার দোয়ারি তৈরি করে জীবিকা চালান বলে জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন।