সরেজমিনে দেখা গেছে, ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার সাফারি পার্কের পাখি অ্যাভিয়ারি, কুমির, প্রজাপতি কর্নারসহ বিভিন্ন অংশে অন্যদিনের তুলনায় দর্শনার্থীদের ভিড় অনেক বেশি।
সবচেয়ে বেশি ভিড় দেখা দেখা গেছে পার্কের কোর সাফারি অংশে; যেখানে রয়েছে উন্মুক্ত বাঘ, সিংহ, ভল্লুকসহ বিভিন্ন প্রাণি। বিশেষ একটি মিনি বাসে করে ওই অংশে প্রবেশ করা যায়।
পার্কে প্রবেশ টিকিট মূল্য প্রাপ্ত বয়স্ক জন প্রতি ৫০ টাকা এবং ১৮ বয়সীদের নিচে ২০ টাকা। শিক্ষা সফরে আসা বা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের প্রবেশ মূল্য ১০ টাকা।
আর গাড়িতে করে কোর সাফারি পার্কে ঘুরতে প্রাপ্ত বয়স্কদের প্রতিজনের টিকিট ফি ১০০ টাকা। অপ্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য তা ৫০ টাকা নির্ধারিত রয়েছে।
কিন্তু শর্ত না মেনে শিশু ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে।
বিডিনিউ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “আমার পাঁচ ও সাত বছরের দুই ছেলেরজন্য কোর সাফারি পার্কে প্রবেশ করতে ১০০ টাকা করে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া পার্কে ঢুকতে মূল ফটকেও প্রতিজনের জন্য ৫০টাকা করে গুনতে হয়েছে।”
মুন্সীগঞ্জের মো.শামীম জানান, তিনি তার আট বছরের ছেলেকে নিয়ে সাফারি পার্ক ঘুরতে এসেছেন। পার্কের প্রধান ফটকে ঢুকতে এবং কোর সাফারি অংশে প্রবেশ করতে বাচ্চার
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোতালেব মিয়া বলেন, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কের কোর সাফারি অংশটি নির্ধারিত শর্তানুসারে ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের জন্য পাল এন্টারপ্রাইজ, বেঙ্গল ট্যুরস লিমিটেড কাছে ইজারা দেওয়া হয়েছে।
“কিন্তু সাফারি পার্কের এ অংশের ঠিকাদারদের লোকজন চুক্তি না মেনে সকলের কাছ থেকেই প্রবেশ মূল্য বাবদ ১০০ টাকা করে নিচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে পর্যটকদের কাছ থেকে।”
ইজারার শর্ত না মানা হলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান মোতালেব মিয়া।
তবে পাল অ্যান্ড ব্রাদার্সের গ্যাটের টিকিট ম্যানেজার মো. হাসান মিয়া অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছেন।
এবার ঈদের প্রথম দিনে সাফারি পার্কে দর্শনার্থীর সংখ্যা ছিল নয় হাজার; যা দ্বিতীয় দিনে ১৪ হাজারে গড়ায় বলে পার্ক কর্তৃপক্ষ জানায়।
মোতালেব মিয়া জানান, সাফারি পার্কে বর্তমানে বড় আকারের নয়টি বাঘ, ২০টি সিংহ, ১২টি ভাল্লুক, ১১টি জিরাফ রয়েছে। এছাড়া মরুভূমির প্রাণি উটপাখি, ক্যাঙ্গারো, কুমির, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও প্রজাপতি দর্শকদের মোহিত করে।
পার্কটি পাঁচটি অংশে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হল- কোর সাফার, সাফারি কিংডম, বায়োডাইভার্সিটি পার্ক, এক্সটেনসিভ এশিয়ান সাফারি পার্ক ও বঙ্গবন্ধু স্কয়ার।
১২১৭ একর ‘কোর সাফারি’ পার্কের মধ্যে ২০ একরে বাঘ, ২১ একরে সিংহ, ৮.৫০ একরে কালো ভাল্লুক, ৮ একরে সিংহ, ৮ একরে আফ্রিকান চিতা, ৮১.৫০ একরে চিত্রা হরিণ, ৮০ একরে সাম্বার ও গয়াল, ১০৫ একরে হাতি, ৩০ একরে মায়া ও প্যারা হরিণ আছে।
আফ্রিকান সাফারি পার্কেরজন্য বরাদ্দ ২৪০ একর। যার মধ্যে বাঘ, সিংহ, সাদা সিংহ, জেব্রা, জিরাফ, ওয়াল্ডিবিস্ট, অরিক্স, ব্ল্যাক বাক, ভাল্লুক ও অন্যান্য বন্যপ্রাণি। গাড়ির ভেতর থেকেও বাঘ, সিংহ ও জিরাফকে ক্যামেরা বন্দি করতে পারবেন।
৫৫৬ একরের মধ্যে তৈরি করা সাফারি কিংডম অংশে ঢুকতে গেইটের পাশেই ম্যাকাও ল্যান্ড। এখানে আছে নীল-সোনালী ম্যাকাও, সবুজ ম্যাকাও, আফ্রিকান গ্রে প্যারট, টিয়া, পেলিকেন, লুটিনো রিংনেক প্যারটসহ প্রায় ৩৪ প্রজাতির পাখি। সবগুলোই আফ্রিকা থেকে আনা হয়েছে বলে মোতালেব মিয়া জানান।
ম্যাকাও ল্যান্ডের পাশেই মেরিন অ্যাকুরিয়াম। রয়েছে প্রায় ২০ প্রজাতির মাছ। ক্রোকোডিল ফিস, টাইগার ফিস, লুকিয়ে থাকা ব্ল্যাক গোস, অস্কার। রয়েছে চিকলেট মাছ যা ২০ সেকেন্ড পর পর রং পরিবর্তন করে।
এছাড়াও রয়েছে প্রজাপতি সাফারি। যেখানে বিভিন্ন প্রজাতির প্রজাপতি রয়েছে। সাফারি কিংডমে রয়েছে প্রকৃতিবীক্ষণ কেন্দ্র ফ্যান্সি কার্প গার্ডেন, জিরাফ ফিডিং স্পট, আইল্যান্ড, বোটিং ও লেইক জোন। তাছাড়া অর্কিড হাউজ, শকুন ও পেঁচা কর্নার, ক্যাঙ্গারু, হাতি শো গ্যালারিও রয়েছে।
সাফারি কিংডমের পশ্চিমে অংশে আলাদাভাবে নির্মাণ করা হয়েছে বিশালি তিনটি পাখিশালা। ধনেশ পাখিশালায় রয়েছে প্রায় আট প্রজাতির পাখি। এরইমধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির প্যারট, ফিজেন্ট ধনেশ, ফ্লেমিংগো, ব্ল্যাক সোয়ান ও বিরল প্রজাতির মান্ডারিন ডাক ছাড়া হয়েছে।
এই অংশের প্রধান ফটকের সামনে রয়েছে বিশাল পার্কিং এলাকা। এখানে নির্মাণ করা হয়েছে আকর্ষণীয় মুরাল ও মডেলসহ প্রধান ফটক, ফোয়ারা, জলাধার ও লেইক।
তথ্যকেন্দ্র পার্ক অফিস, ডরমেটরি, বিশ্রামাগার, নেচার হিস্ট্রি মিউজিয়াম, ঐরাবতী বিশ্রামাগার, ময়ূরী বিশ্রামাগার, ইকো-রিসোর্ট, ডিসেপ্লে ম্যাপ, আরসিসি বেঞ্চ ও ছাতা।
এছাড়াও ‘টাইগার’ ও ‘সিংহ পর্যবেক্ষণ’ নামে রয়েছে দুটি বিশাল রয়েছে। এখানে রেস্টুরেন্টে বসেই কাঁচের মধ্যে দিয়ে সিংহ এবং বাঘ দেখতে দেখতে খাওয়াদাওয়া করা যাবে।
আয়তন ও অবস্থান:
ঢাকা থেকে ৪০ কিলোমিটার উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বাঘের বাজার থেকে ৩ কিলোমিটার পশ্চিমে গাজীপুর জেলার শ্রীপুর উপজেলায় মাওনা ইউনিনে সাফারি পার্কটি অবস্থিত।
ভাওয়াল গড়ের ছোট ছোট টিলা ও নিচু ভূমি সমৃদ্ধ বিশাল শালবনে তৈরি করা হয়েছে এই সাফারি পার্ক। ৩৬৯০ একর বিশাল আয়তনের এই পার্ক উপর থেকে দেখার জন্য রয়েছে পর্যবেক্ষন কেন্দ্র। ২০১০ সালে পার্কের কাজ শুরু হয়। আর ২০১৩ সালে পূর্ণাঙ্গ সাফারি পার্ক হিসেবে চালু করা হয়।
যাতায়াত:
গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে বাঘের বাজার গেলেই চোখের পড়বে সাফারি পার্কের বিশাল সাইনবোর্ড। বাঘের বাজার থেকে সাফারি পার্কের দরজা পর্যন্ত যেতে রিকশা ও অটোরিকশা পাওয়া যায়। ভাড়া নিবে ৫০ থেকে ৮০ টাকা।
গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা থেকে বাঘের বাজার পর্যন্ত যাওয়ার জন্য রয়েছে হিউম্যান হলার লেগুনা। ছুটির দিন ও সাধারণ দিন হিসেবে ভাড়া মান নির্ভর করে। ৮০ থেকে ১০০ টাকা। এছাড়া ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ যাতায়াত করা বাসে করেও বাঘের বাজার সরাসরি নামা যায়।