শনিবার সকাল থেকে মনু প্রতিরক্ষা বাঁধ (গাইড ওয়ালের) মাত্র দুই ইঞ্চি নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়; পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে যে কোনো মুহূর্তে বাঁধ উপচে বন্যার পানি জেলা শহরে প্রবেশ করতে পারে বলে আশঙ্কা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে নিখোঁজ পাঁচজনের মধ্যে তিনজনের লাশ শনিবার উদ্ধার করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় ও আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধারে জেলায় কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রনেন্দ্র শঙ্কর চক্রবর্তী পার্থ জানান, শনিবার সকাল ৯টায় মনু নদী মৌলভীবাজার শহরের চাঁদনীঘাটের কাছে বিপদ সীমার ১৫৯ সেন্টিমিটারে এবং মনু কুলাউড়ায় রেলওয়ে ব্রিজে ১২৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ ঝূঁকিপূর্ণ হওয়ায় শহরবাসীকে শতর্ক থাকতে মাইকিং করা হয়েছে বলে পাউবির এ কর্মকর্তা জানান।
গত কয়েকদিন থেকে ভারতের উত্তর ত্রিপুরা এলাকায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় মনু, কুশিয়ারা ও ধলাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে।
মনু ও ধলাই নদীর ২২টি স্থানে প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে বন্যার পানি প্রবেশ করে কুলাউড়া, কমলগঞ্জ, রাজনগর ও সদর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করেছে। এতে তলিয়ে গেছে এ সব বাড়ি-ঘরসহ রাস্তাঘাট।
“তাই পানি নামছে ধীরে। পানি বৃদ্ধি অভ্যাহত থাকলে মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধ উপচিয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করে শহর তলিয়ে যেতে পারে। এই মুহূর্তে মৌলভীবাজার শহর বড় রকমের ঝুঁকিতে রয়েছে।”
কুলাউড়া, কমলগঞ্জ ও রাজনগরে বন্যায় তলিয়ে যাওয়া ও আটকা পড়া মানুষদের উদ্ধারে সেনাবাহিনী কাজ শুরু করেছে বলে পাউবির এ কর্মকর্তা জানান।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে সেনাবাহিনীর একটি দল মনু নদীর শহর প্রতিরক্ষা বাঁধের ঝূঁকিপূর্ণ স্থানগুলো শুক্রবার রাতে পরিদর্শন করেছে; শনিবার দুপুর থেকে জেলা সদরেও তারা কাজ শুরু করবে।
এদিকে উজান এলাকায় পানি হওয়ায় হাজার হাজার মানুষ জীবনের ঝুঁকিতে রয়েছেন বলে কমলগঞ্জ কুরমা চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক তাপস কুণ্ডু জানান।
তিনি বলেন, “জীবনে প্রথম চা বাগানে বন্যা দেখলাম। আমার বাংলোতে বর্তমানে গলা পর্যন্ত পানি। ডুবে গেছে অধিকাংশ লেবার লাইন; ধসে পড়েছে লেবার লাইনের মাটির ঘরগুলো। কুরমাতে ২৫ থেকে ৩০ হেক্টর চা বাগান পানিতে তলিয়ে গেছে।”
কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদুল হক বলেন, বন্যা পরিস্থিতি ভয়ঙ্কর রুপ ধারণ করেছে তার উপজেলায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় সব জায়গার ত্রাণ প্রদান ও উদ্ধার তৎপরতাও বিঘ্নিত হচ্ছে।
এর আগে শুক্রবার কমলগঞ্জ উপজেলায় বন্যার পানিতে ভেসে পাঁচজন নিখোঁজ হন। এর মধ্যে শনিবার দুপুরে তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয় বলে তিনি জানান।
নিহতর হলেন- কমলগঞ্জের ইসলাম পুরের ছাত্তার মিয়া (৫৬) ও তার ছেলে করিম মিয়া (২২) এবং সমশের নগরের প্রতিবন্ধি রমজান মিয়া (৫২)। বাকিদের নাম জানা যায়নি।
এদিকে ভারত থেকে আসা ছোট ছোট বিভিন্ন পাহাড়ি ছড়া দিয়ে জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্দুরখান ও আশিদ্রোন ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে পানি প্রবেশ করায় দুর্ভোগে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবাশশেরুল ইসলাম জানান, তাৎক্ষণিক দুর্গতদের মধ্যে কিছু শুকনো খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করেছন। ত্রাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।