সহায়-সম্পদ ছেড়ে নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে তারা দেশে ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন এদেশে। এখানে সাহায্য সহানুভূতি পেলেও ভুলতে পারেননি জন্মভূমির অতীতের সেইসব দিনগুলো।
স্বল্প পরিসরের যে ঘরে তারা থাকছেন কয়েকদিনের ভারি বর্ষণ আর জলকাদায় তাও দুর্বিসহ হয়ে উঠেছে।
নগদ টাকার অভাবে অনেকেই ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন জামা-কাপড় কিনতে পারেননি বলে আক্ষেপ করেন।
শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়ার বিভিন্ন ক্যাম্প ঘুরে এবং রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্র দেখা গেছে।
গত বছর মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। এর আগে যারা ছিল তারাসহ বর্তমান অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে রয়েছে।
তবে প্রশাসন সংশ্লিষ্টরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঈদ উদযাপনে প্রত্যেক রোহিঙ্গা পরিবারের জন্য চাহিদামতো ঈদ সাগ্রমী বিতরণ করা হয়েছে।
কুতুপালং ডি-৫ রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা সাইফুল ইসলাম (৩৭) বলেন, প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে দেওয়া ঈদ সামগ্রী রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ পেলেও অনেকে তাও পাননি। যা পেয়েছে তাও আবার চাহিদার চেয়ে অপ্রতুল।
তবে ঈদ সামগ্রী দেওয়া হলেও ঈদে ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন কাপড়-চোপড়সহ অন্যান্য দরকারি জিনিসপত্র কিনতে নগদ টাকা-পয়সা দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তিনি এক কেজি সেমাই, এক কেজি চিনি, একটি নারিকেল ও আধাপোয়ার মত কিসমিস পেয়েছেন বলে জানান।
কুতুপালং মধুরছড়া ক্যাম্পের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার (৫০) বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ধরে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বর্ষণের পাশাপাশি ভূমিধসের ফলে বিধ্বস্ত হয়েছে রোহিঙ্গাদের তিন শতাধিক বসতঘর। ঝুপড়ি ঘরগুলোতেও ঢুকে পড়ছে বৃষ্টির পানি। এছাড়া ক্যাম্পের হাঁটাচলার পথও জলকাদায় পরিণত হওয়ায় দুর্ভোগের অন্ত নেই রোহিঙ্গাদের।
এরকম পরিবেশে নামাজ আদায়ের জন্য আলাদা কোন ঈদগাহের ব্যবস্থায় না থাকায় ঈদ উদযাপন নিয়ে রোহিঙ্গারা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বলে জানান তিনি।
ত্রাণই একমাত্র ভরসা এবং রোহিঙ্গাদের অন্য কোনো আয়ের উৎস না থাকায় ঈদ উদযাপনে নিজেরাই কিছু কিনতে না পারার কথা জানালেন কুতুপালং লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বাসিন্দা নুরুল আমিন (৪৫)।
তিনি বলেন, দৈনন্দিন জীবনযাপনের জন্য রোহিঙ্গাদের ত্রাণ উপরই নির্ভর করে চলতে হয়। এছাড়া প্রতিমাসে ত্রাণ হিসেবে চাল, ডাল, তেল, জ্বালানি, মরিচ, হলুদ ও পেঁয়াজসহ আরও দুয়েকটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। এসবও অনেকের কাছে চাহিদার অপ্রতুল। তাই রোহিঙ্গাদের কাছে অভাব-অনটন লেগেই থাকে।
ওই ক্যাম্পের আরেক বাসিন্দা দিল মোহাম্মদ বলেন, “প্রশাসন ও বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকে ঈদ সামগ্রী বিতরণের কথা শুনেছি। তবে শুক্রবার পর্যন্তও তা পাইনি। হাতে কোনো নগদ টাকা না থাকায় চার সন্তানকে এবারের ঈদে নতুন জামা-কাপড় কিনে দিতে পারিনি।”
উখিয়ার বালুখালী এলাকার শফিউল্লাহকাটা ক্যাম্পের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন (৪৮) বলেন, “ঈদ সামগ্রী হিসেবে যা পেয়েছি; তা খুবই নগণ্য। তারপরও প্রতিমাসের পাওয়া ত্রাণ থেকে কিছু অংশ বিক্রি করে ছেলে-মেয়েদের জন্য স্থানীয় ক্যাম্প এলাকার বাজার থেকে নতুন কাপড়-চোপড় কিনে দিয়েছি।”
রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতা আবু ছৈয়দ বলেন, স্বদেশে ঈদ উদযাপনের সঙ্গে নির্যাতন-নিপীড়নের মুখে পালিয়ে আশ্রয় নেওয়া মানুষের ভিনদেশের ভিন্ন পরিবেশে ঈদের আমেজ উপভোগ কখনও এক হওয়ার কথা নয়। রোহিঙ্গারা দীর্ঘদিন ধরে মিয়ানমারে জাতিগত নির্যাতন-নিপীড়নের পাশাপাশি নাগরিক অধিকার বঞ্চিত। এ নিয়ে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
এ নিয়ে ত্রাণ ও শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার মো. আবুল কালামের সঙ্গে কথা হলে এ ব্যাপারে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
রোহিঙ্গাদের ঈদ সামগ্রী না পাওয়ার অভিযোগটি সত্য নয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন।
তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বুধবার পর্যন্ত উখিয়ার বিভিন্ন রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক লাখ পরিবারের কাছে ঈদ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবারের মধ্যেই সব রোহিঙ্গা পরিবারের কাছে ঈদ সামগ্রী বিতরণ সম্পন্ন হয়েছে।”
তবে ভিনদেশে শরণার্থী জীবনে সবকিছু চাহিদা মতো পাওয়া এবং বিতরণ করাটাও অনেকে ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না বলে মন্তব্য করেন জেলা প্রশাসক।