‘এবার ঈদে সব পাইছি, শেখের বেটি সব করিছে’

ঈদের আনন্দ ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে যশোরের শার্শা উপজেলায় দুস্থ ও অসহায় পরিবারে ঈদ সামগ্রী দিয়েছে সরকার ও বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরা।

আসাদুজ্জামান আসাদ, বেনাপোল প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 June 2018, 08:49 AM
Updated : 14 June 2018, 10:40 AM

তাদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, প্রায় অর্ধলক্ষ পরিবার এসব সামগ্রী পেয়েছে। কাউকে কাউকে দেওয়া হয়েছে শুধু চাল, কাউকে কাউকে চালের সঙ্গে অন্যান্য সামগ্রীও। বিভিন্ন এলাকার জনপ্রতিনিধিরাও যার যার মত করে বিভিন্ন সামগ্রী দিয়েছেন।

ঈদ সামগ্রী পেয়ে অভিভূত হয়েছেন অনেক অসহায় মানুষ।

বাগআঁচড়া ইউনিয়নের টেংরা গ্রামের বায়জিদ হোসেনের স্ত্রী তাসলিমা বিবি বলেন, বছর পাঁচেক আগে স্বামীর মৃত্যুর পর তার জীবনে ঈদ আসেনি। ঈদ আর সাধারণ দিনের মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না।

“এবার ঈদে সব পাইছি। শেখের বেটি এবার সব করিছে।”

বাস্তুহীন তাসলিমা ভাড়া বাসায় থাকেন। অন্যের বাড়ি কাজ করে জীবিকা চালান। ৫৫ বছর বয়সী এই নারীর কোনো স্বজন নেই।

একই গ্রামের ৬০ বছর বয়সী জমিলা বিবিকে দেখার কেউ নেই। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে নতুন শাড়ি ও শেমাই-চিনি পেয়ে খুব খুশি।

জমিলা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঈদে কবে নতুন শাড়ি পরিছি বলতি পারব না। তবে এবার পরব।”

মাঠপাড়ার ভ্যানচালক রুহুল আমিন ও তার স্ত্রী জামিরন নেছা খুকির (৫৫) একমাত্র মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাদের ছেলে নেই। এখন কাজ করে জীবিকা চালানো তাদের জন্য কঠিন।

খুকি বলেন, “এবার ঈদটি নতুন করে এয়েছে। অনেক বছর ঈদ আসেনি। এবার ঈদে শাড়ি-লুঙ্গি পাইছি। শেমাই, চিনি, চাল, টাকা পাইছি।”

জামতলার আব্দুর রহিমের (৬৫) সব সুখ কেড়ে নিয়েছে ক্যান্সার। তিনি নিজে কাজ করতে পারেন না। তার স্ত্রী হোটেলে কাজ করে যা পান তা দিয়েই চলাতে হয় তাদের সংসার। সরকার বয়স্কভাতা দেয় বটে, তা দিয়ে ওষুধ কিনতে হয় বলে জানান রহিম। এবার তারা বহুদিন পর ঈদ করবেন বলে জানান।

স্থানীয় সংসদ সদস্য শেখ আফিল উদ্দিন বলেন, “জাতির জনক বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা পবিত্র ঈদুল ফিতরে যেন অসহায় মানুষ কষ্ট না পায়, সেজন্য ঈদে ভিজিএফের চাল সহায়তা দিয়ে থাকেন।

“সরকারি সহায়তার বাইরে ধনাঢ্য ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি, চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতারা উপজেলার গরিব-দুখী মানুষের হাতে ঈদ সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন, যাতে তারা আনন্দের সঙ্গে ঈদ উপভোগ করতে পারেন।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইএনও) পুলক কুমার মণ্ডল জানান, তার উপজেলায় সরকারিভাবে ৩০ হাজার ২৭ জন দুস্থ-অসহায় পরিবারে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ৩১৯ জন ভিখারি ও ২৭৭ জন মুক্তিযোদ্ধাকে শাড়ি লুঙ্গি, টাকা, শেমাই, চিনিসহ ঈদসামগ্রী দেওয়া হয়েছে।

বেনাপোল পৌরসভায় ৪৬২০ জনকে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌরমেয়র আশরাফুল আলম লিটন।

বাগআঁচড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ইলিয়াছ কবির বকুল বলেন, তার ইউনিয়নে ৩০২৭ পরিবারে সরকারিভাবে ১০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে।

এর বাইরে তিনি ব্যক্তি উদ্যোগে ১৩০০ শাড়ি, ৭০০ লুঙ্গি ও ৩৫০ জন দলীয় নেতাকর্মীকে পাঞ্জাবিসহ ঈদ সামগ্রী দিয়েছেন বলে জানান।

ওই ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে ৩২০ পরিবারে চাল, শাড়ি ও লুঙ্গি দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ইউপি সদস্য মোজাম গাজী।

উলাশি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আয়নাল হক তার ইউনিয়নে ৩২৫৩ পরিবারকে আর কায়বা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ফিরোজ হাসান টিংকু ২৯৪০ পরিবারকে ১০ কেজি করে চাল দিয়েছেন বলে তারা জানান।