রাঙামাটির নানিয়ারচরে পাহাড় ধসে নিহত ১১

টানা বৃষ্টির মধ্যে রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলায় পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

রাঙামাটি প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 June 2018, 04:14 AM
Updated : 12 June 2018, 05:39 PM

উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান কোয়ালিটি চাকমা জানান, গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে পাহাড় ধসে মঙ্গলবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। 

এক বছর আগে যে দিনে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে শতাধিক মানুষ মারা গিয়েছিল, সেই দিনটিতে একই ঘটনা ঘটল।  

নিহতরা হলেন নানিয়ারচরের বুড়িঘাট ইউনিয়নের ধর্মচরন কার্বারিপাড়ার স্মৃতি চাকমা (২৩), তার ছেলে আয়ুব দেওয়ান (দেড় বছর), ফুলদেবী চাকমা (৫৫), ইতি দেওয়ান (১৯), ধর্মচরণ ইউনিয়নের রমেল চাকমা (১৪), সুরেন্দ্র চাকমা (৫৫), রাজ্যদেবী চাকমা (৫০), সোনালী চাকমা (১৩), ঘিলাছড়ি ইউনিয়নের মনতলা পাড়ার বৃষ কেতু চাকমা (৬০), হাতিমারা পাড়ার রিপেন চাকমা (১৪) ও রীতা চাকমা (০৮)।

কোয়ালিটি চাকমা বলেন, গত তিনদিন ধরে টানা বর্ষণের কারণে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনায় এই দুর্ঘটনা ঘটে। নানিয়ারচর উপজেলায় অতীতে এমন ঘটনা না ঘটনায় প্রস্তুতিও তেমন একটা ছিল না।

তিনি বলেন, দুর্ঘটনার স্থানগুলো একটির চেয়ে আরেকটির দূরত্ব যেমন অনেক বেশি আবার এলাকাগুলো দুর্গম, ফলে তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কাজও চালানো যায়নি।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ ১১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে বলেন, “তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের সবার প্রতিবারকে ২০ হাজার টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। আমরা পরিস্থিতি মোকাবেলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি।”

রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষ কেতু চাকমা বলেন, জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও নিহত সবার পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।

বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, গত তিন দিন ধরে চলা টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে রাঙামাটি জেলা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ২৫টি স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। এতে কোনো ঝুঁকিতে পড়েছে অসংখ্য সরকারি বেসরকারি স্থাপনা।

রাঙামাটি শহরের শাহ উচ্চ বিদ্যালয়, রাণী দয়াময়ী উচ্চ বিদ্যালয়সহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাহাড় ধসের কারণে ঝুঁকিতে পড়েছে। এছাড়া পরিবার পরিকল্পনা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের নবনির্মিত ভবনের বিশাল দেয়াল ধসে পড়েছে।

রাঙামাটি শহরের টেলিভিশন উপকেন্দ্র আশ্রয়কেন্দ্রে মঙ্গলবার বিকাল অবধি ১১০টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে, যাদের প্রায় সবাই পার্শ্ববর্তী রূপনগর, শিমুলতলি এলাকার বাসিন্দা। এছাড়াও রাঙামাটি বেতার কেন্দ্রের আশ্রয়কেন্দ্রেও শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। পৌর এলাকায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র।

রাঙামাটির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র জানিয়েছে, সোমবার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত রাঙামাটি জেলায় ২৫৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশীদ বলেন, “রাঙামাটির অন্তত ২৫টি স্থানে ছোট বড় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমাদের সতর্কতার কারণে কোন প্রাণহানি হয়নি। তবে নানিয়াচরের ঘটনাটি অপ্রত্যাশিত। তবুও আমরা এখন সেখানেও বাড়তি ও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিচ্ছি। ইতোমধ্যেই শহরের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানের মানুষকে সরে যেতে বলা হয়েছে। খোলা হয়েছে ২১টি আশ্রয়কেন্দ্র। পর্যাপ্ত খাদ্য, অর্থ ও ঔষধ মজুদ আছে আমাদের কাছে।”

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক ছাড়াও রাঙামাটি-খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি-বান্দরবান সড়কের একাধিক স্থানে সড়কে ফাটল কিংবা ধসের কারণে যান চলাচল বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে প্রতিটি স্থানেই সেনাবাহিনীর সদস্যরা স্থানীয় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় সড়ক চালু করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে দেখা গেছে।

রাঙামাটি বাস মালিক সমিতির সভাপতি মঈনুদ্দিন সেলিম বলেন, “সড়কে সমস্যার কারণে আমাদের যাত্রীবাহী বাস গত দুইদিন ধরে চলাচল বন্ধ আছে। তবে ছোট ছোট গাড়ি চলাচল করছে।

রাঙামাটি সড়ক ও জনপদ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবু মুছা বলেন, রাঙামাটি চট্টগ্রাম সড়কের ঘাগড়ার দেপ্প্যছড়ি, মগাছড়ি, বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আব্দুর রউফ স্কোয়ার এলাকা, পাসপোর্ট অফিস এলাকাসহ বেশ কিছু স্থানে সড়কের ফাটল ও পাহাড় ধসের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হচ্ছে। তবে যানচলাচল স্বাভাবিক আছে। 

এদিকে টানা বৃষ্টিপাতের কারণে ভয় ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে পার্বত্য রাঙামাটিতে। এরই মধ্যে নানিয়ারচরে ১১ জনের মৃত্যুর ঘটনার পর আরও বেশি আতংকিত হয়ে পড়েছেন স্থানীয়রা।

শহরের রিজার্ভ বাজার এলাকার বাসিন্দা রাজু শীল বলেন, “আমরা এখন বৃষ্টি হলেই আর রাতে ঘুমাতে পারি না। রাঙামাটির মানুষের কাছে এখন বৃষ্টি ভয়ের আরেক নাম।

একই কথা বলেছেন ভেদভেদী এলাকার বাসিন্দা সাইফুল উদ্দীনও।

গত বছরের ভয়াবহ ধসে ১২০ জন মারা গেলেও নানিয়ারচরে কেউ মারা যায়নি। ওই ধসের পর জেলা প্রশাসন ঝুঁকিপূর্ণ বসববাসকারীদের যে তালিকা করেছেন, তাতে নানিয়ারচর উপজেলার চার ইউনিয়নে ২৩৯ পরিবারের এক হাজার ১১১ জনকে রাখা হয়।