থানা ভবন থেকে পড়ে মৃত্যু: ‘ভাইকে চাকরির নামে রফার চেষ্টা’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় থানা ভবনের ছাদ থেকে পড়ে এক নৈশ প্রহরীর মৃত্যুর ঘটনা তার ‘দুই ভাইকে চাকরি দেওয়ার আশ্বাসে’ ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধিপীযূষ কান্তি আচার্য, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2018, 05:27 PM
Updated : 29 May 2018, 05:27 PM

মৃত নৈশ প্রহরী রাসেলের দুই ভাই লিটন মিয়া ও রুবেল মিয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভা এবং পুলিশে চাকরি দেওয়ার বিপরীতে শর্ত হলো রাসেলের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা করা যাবে না।

গত শনিবার রাতে পৌর মেয়রের কার্যালয়ে রাসেলের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বৈঠকে বসেন মেয়র নায়ার কবির ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকার।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল বারী চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল আলম খোকন, সদর মডেল থানার ওসি মো. নবীর হোসেন, পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল হক ও নিহত রাসেলের বড় ভাই লিটন মিয়াসহ আরও কয়েকজন।

রাসেলের মা আমেনা বেগম

বৈঠকের পর রাসেলের মৃত্যুর ঘটনায় পৌরসভার মেয়র নায়ার কবিরের ভাগনে আসিফ ইকবাল খানের বিরুদ্ধে সদর থানায় জমা দেওয়া অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন রাসেলের মা আমেনা বেগম।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌরসভার মেয়র নায়ার কবির বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আসিফ তো এ ঘটনার সাথে জড়িত না। তার দোকানে চুরি হয়েছে। এরপরও তার বিরুদ্ধে মামলা হবে কেন?”

তাহলে মীমাংসার উদ্যোগ কেন জিজ্ঞাসা করা হলে মেয়র বলেন, “মানবিক দিক বিবেচনা করে আমরা তাদের চাকরির ব্যবস্থা করছি; কারণ রাসেল ছিল ওই পরিবারের একমাত্র উপর্জনক্ষম ব্যক্তি।”

এ ব্যাপারে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন খান বলেন, “আমি রফদফার ব্যাপারে কিছু জানি না।”

এক ভাইকে পুলিশে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে পুলিশ সুপার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি চাকরি দেবার কে? আমি কিছু জানি না।”

তিনি বলেন, পুলিশ হেফাজতে থাকা রাসেল তিন তলা থেকে পড়ে কীভাবে মারা গেলেন, এ ব্যাপারে পুলিশের কারো কোনো গাফিলতি আছে কিনা বিষয়টি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্যে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারকে আহবায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করা হয়েছে।

তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার  মো. ইকবাল হোসাইন বলেন, “আমরা তদন্ত শুরু করেছি। আগামী ৩০ মের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেব।”

রাসেল থানা ভবন থেকে পড়ে যাওয়ারপর এলাবাসীর বিক্ষোভ

গত ২১ মে শহরের সিটি সেন্টার মার্কেটের তৃতীয় তলায় মেয়রের ভাগনে আসিফ ইকবালের মালিকানাধীন স্বপ্নলোকে ফ্যাশন হাউজে চুরি হয়। ফ্যাশন হাউজ থেকে নগদ দুই লাখ টাকা নিয়ে যায় চুরি করে। চোর দোকানের সিসি ক্যামেরার ডিভিআরও (ডিজিটাল ভিডিও রেকর্ডার) চুরি করে নিয়ে যায়।

এরপর সদর থানা পুলিশ তদন্তে নামে এবং শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে স্থাপন করা সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংকের এটিএম বুথের নৈশপ্রহরী রাসেলসহ অন্তত আটজনকে ওইদিন বিকালে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

সন্ধ্যায় ইফতারের সময় রাসেল থানা ভবনের তিনতলার ছাদ থেকে নিচে পড়ে যান। পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। দুইদিন পর ২৪ মে ভোররাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রাসেলের মৃত্যু হয়।  

এ ঘটনায় ২৪ মে রাতে রাসেলর মা আমেনা বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় আসিফ ইকবাল খানকে প্রধান আসামি করে একটি  অভিযোগ জমা দেন।

অভিযোগে বলা হয়, আসিফ ইকবাল খান ও তার লোকজন রাসেলকে মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল।

অভিযোগ দেওয়ার আগে রাসেলের মামা খবির মিয়া সাংবাদিকদের অভিযোগ করেছিলেন, “পুলিশ রাসেলকে ডেকে থানায় নিয়ে যায়। এরপর থানা ভবনের ছাদে নিয়ে তাকে বেধরক পেটানো হয়। মারধর থেকে বাঁচতে রাসেল ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়ে।”

রাসেল ভবন থেকে পড়ার পর ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে।