ঈদের ছুটিতে শাবির হল বন্ধ, শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদ

ঈদের ছুটিতে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের হল বন্ধের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক দাবি করে এর প্রতিবাদ জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

হোসাইন ইমরান, শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 May 2018, 12:01 PM
Updated : 29 May 2018, 12:01 PM

প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মঙ্গলবার সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

গত ২১ মে ছাত্র ও ছাত্রীদের মোট পাঁচটি হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৩১ মে বিকাল ৩টার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে আগামী ১ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত হলের সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে। তাই ৩১ মে বিকেল ৩টার মধ্যে সকল শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগ করতে বলা হলো।”

গ্রীষ্মকালীন অবকাশ, শব-ই-কদর ও ঈদ-উল-ফিতর উপলক্ষে ২০ মে থেকে ২১ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক এবং ২৭ মে থেকে সকল প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হলেও হলগুলো খোলা ছিল।

মানববন্ধন পরবর্তী সমাবেশে শাহপরান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ফজলে রাব্বি বলেন, “অনেক শিক্ষার্থী বিভিন্ন সমস্যার কারণে বাড়ি যেতে চায় না। টিউশনির কারণে, আর্থিক কারণে, চাকরির পড়াশোনার কারণে অনেকে ছুটির সময় হলে অবস্থান করতে চায়।

“আমরা হলে না থাকতে পারলে ভালো করে পরীক্ষার প্রিপারেশন নিতে পারব না। আনেকের টিউশনি চলে যাবে। এসব বিষয় চিন্তা না করে প্রশাসনের হল বন্ধের সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক।”

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সৌরভ সরকার বলেন, প্রশাসনের হল বন্ধের সিদ্ধান্ত সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক। এর ভুক্তভোগী হতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

“আমরা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের, অনেক দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীরা হলে থাকি, যাদের ঈদের সময় বাড়িতে যাওয়ার পরিকল্পনা নেই। ছুটি শেষেই আমাদের অনেক বিভাগের পরীক্ষা রয়েছে। এর মধ্যে আমাদেরহ হল বন্ধ করে দেওয়া হলো। আমরা প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা জানাই।”

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্য্যালয়ের এক প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হল প্রভোস্টদের অনুরোধে উপাচার্য হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা এসে উপাচার্যের সাথে সাক্ষাৎ করে হল বন্ধ করার প্রস্তাব তোলেন।”

শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় না নিয়ে প্রশাসনে কর্মরত ব্যক্তিদের কথায় হল বন্ধের সিদ্ধান্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে সৈয়দ মুজতবা আলী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীর মঈন উদ্দিন মিয়া বলেন, “হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের কথায় হল বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এ ব্যাপারে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনা হয়নি।”

গত বছরও ঈদের ছুটিতে হল বন্ধ রাখলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছিল প্রশাসন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা হয়। হলের সামনে বিক্ষোভে নেমেছিল শিক্ষার্থীরা। দুই বছর থেকে ঈদের ছুটিতে হল বন্ধের নিয়ম শুরু হলেও এর আগে কখনও হল বন্ধ রাখা হয়নি।

মঈন উদ্দিন বলেন, “যদি ছাত্র সংসদ নির্বাচন হতো, তাহলে সিন্ডিকেটে আমাদের পক্ষ থেকে কেউ কথা বলত। সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন যাবত ছাত্রসংসদ নির্বাচন হচ্ছে না। ফলে এধরনের অগণতান্ত্রিক ও অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত প্রশাসন নিয়ে থাকে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই।”

এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট এস এম হাসান জাকিরুল ইসলাম বলেন, “আমি শিক্ষার্থীদের দাবি, প্রতিবাদ, আন্দোলনের বিষয়ে জানি না। এ বিষয়ে আমার কিছু বলার নাই।”