প্রধানমন্ত্রীর সফরে তিস্তায় অগ্রগতি হবে: কাদের

প্রধাধমন্ত্রীর ভারত সফরে তিস্তার পানিবণ্টন বিষয়ে অগ্রগতি হবে বলে আশা করছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 May 2018, 12:29 PM
Updated : 25 May 2018, 12:56 PM

শুক্রবার নারায়ণগঞ্জে তিনি বলেন, “বর্তমানে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি ভালো। চুক্তি যে কোনো সময় হতে পারে। সন্দেহ, সংশয়ের ওয়াল আমরা ভেঙ্গে ফেলেছি সম্পর্কের বিষয়ে, যা ২১ বছর ধরে বিরাজমান ছিল। বিএনপি এই সম্পর্ক তিক্ত করার জন্য বহুলাংশে দায়ী।” 

শান্তিনিকেতনের বিশ্বভারতীতে বাংলাদেশ ভবনের উদ্বোধন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শুক্রবার ভারত সফরে গেছেন।

সীমান্ত চুক্তির মতো চ্যালেজিং কাজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি করে ফেলেছেন উল্লেখ করে কাদের বলেন, সে তুলনায়  এটা কোনো সমস্যাই নয়। এ সমস্যারও সমাধান হবে।

“প্রধানমন্ত্রী কলকাতায় গেছেন, সেখানে নরেন্দ্র মোদি, মমতা ব্যনার্জি থাকবেন,  এ ব্যাপারে কথা হবে। আমি এখানে বসে বলতে পারি না রেজাল্ট কী হবে। তবে এটা বলি এই সফরে চুক্তি না হলেও অগ্রগতি হবে।”

আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে বলেন, গঙ্গা চুক্তির বিষয়ে বিএনপি নেত্রী ভারত সফর শেষে বাংলাদেশে আসার পর বিমানবন্দরে সাংবাদিকরা তিস্তাচুক্তির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেছিলেন তিনি তিস্তার বিষয়টি ভুলে গিয়েছিলেন।

কাদের বলেন, “আমারা কিন্তু ভুলে যাইনি। আমার নেতৃত্বে ভারত সফরে গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে তিস্তা চুক্তি ও রোহিঙ্গা বিষয়ে কথা বলেছি। বিএনপির বিরুদ্ধে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে একটা কথাও বলিনি। কথা বলেছি দেশের স্বার্থ নিয়ে।”

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার একদিকে বাংলাদেশে স্রোতের মতো রোহিঙ্গা পাঠিয়েছে, অন্যদিকে এর সঙ্গে মাদকের স্রোত সুনামির মতো বাংলাদেশে এসেছে। মিয়ানমার শুধু রোহিঙ্গা পাঠায়নি, ইয়াবাও পাঠিয়েছে।

“কাজেই আমাদের সবার এখানে ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার। ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এখানে আমারা কাউকে ছাড় দেইনি, সে যেই হোক, অভিযোগ যদি তদন্তে প্রমাণ আসে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

“তিনি  যেই হোন যেই জায়গায় থাকেন, জনপ্রতিনিধি হোন, নেতা হোন, বড় রাজনৈতিক হোন, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। রাঘব বোয়াল থেকে চুনোপুটি কেউ ছাড় পাবে না। নেটে সবাইকে আনা হবে, শুরু হয়েছে দেখতে পাবেন।”

খুনের অভিযোগে টাঙ্গাইলে আওয়ামী লীগের এক এমপি কারাগারে আছেন। সরকারের তিনজন মন্ত্রী দুদকের দায়ের করা দুর্নীতির মামলায় আদালতে হাজিরা দিচ্ছেন; তারা বিচারের মুখোমুখি উল্লেখ করে কাদের বলেন, “শেখ হাসিনার সরকারে মাদকের ব্যাপারে কাউকে ছাড় দেবে এটা আপনি কী করলে ভাবলেন?”

“অপরাধ করে পাবনায় মন্ত্রীরপুত্র মাসের পর মাস জেলে বন্দি আছে। কোথায় ছাড় দিচ্ছে আওয়ামী লীগ?” 

মন্ত্রীর সব বক্তব্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়ে সাংবাদিকদেন বলেন, একটা লাইন দিলে তো কেউ পুরোপুরি বুঝবে না। এখানে আওয়ামী লীগের এমপি নয়, আওয়ামী লীগ বিএনপি বলে কথা নয়, যে দলেরই হোক,যেই হোক, অপরাধ প্রাথমিক তদন্তে প্রমাণ হলে কারো রেহাই নেই।

দলের লোককে ছাড় দিচ্ছে এমন অপপ্রচার হচ্ছে মন্তব্য করে এই আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, “আমাদের কর্মী, আমাদের লোক; বিশ্বজিৎ হত্যায় ফাসির দণ্ড হয়েছে। আমরা কি ছাড় দিয়েছি? সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে সাংবাদিক হত্যার অভিযোগে আমাদের নির্বাচিত মেয়র কারাগারে আছে। আমরা ছাড় দিলাম কোথায়? তাহলে এখনে ছাড় দেব কিকরে?”

শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো রাজনৈতিক দল, রাজনৈতিক নেতা মাদকের বিরুদ্ধে একটা কথাও কেউ বলেনি অভিযোগ তুলে কাদের বলেন, ড্রাগ ডিলারদের বিরুদ্ধে যখন অভিযান শুরু হয়েছে তখন তাদের কেন অন্তর জ্বালা!

“মাদক সরাদেশে সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। গ্রামেগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। সেই মাদক নিয়ে আপনারা কথা বলেন না। একমাত্র আমাদের নেত্রী কথা বলেছেন, পুলিশ কথা বলেছে, প্রোগাম নিয়েছে, আমি নিজে কথা বলছি, কিন্তু একটা শব্দও তো কেউ উচ্চারন করেন নি।”

যাজটের ব্যাপারে মন্ত্রী কাদের পুলিশকে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, যখনই কোনো সড়ক মহাসড়কে যানজট পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়, তখন উল্টাপথে যাতে কোনো গাড়ি আসতে না পারে।

“উল্টাপথে আমার গাড়ি আসলেও জারিমানা করবেন। আমি মন্ত্রী হয়ে রং সাইডে যাইনি। আমি নিজে অনেক বড় বড় নেতাকে ধরেছি।”

সব পুলিশ চাদাঁবাজি করে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমাদের দেশে যে সমাজ ব্যবস্থা, তাতে কেউ কেউ করতে পারে। এখানে কোনো কোনো রাজননৈতিক নেতারও যোগসাজস থাকতে পারে।”

মন্ত্রী মহাসড়কে থ্রি হুইলার, ইজিবাইক, ভটভটি, নসিমন, করিমন চলাচল করতে না দেওয়ার পরামর্শ দেন পুলিশকে।

ঈদের আগের তিনদিন ভারী যানবাহন রাস্তায় চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে পচনশীল দ্রব্য, জালানি তেল, গার্মেন্টস সামগ্রী, ঔষধ ভারী পরিবহনের আওতায় পড়বে না।

মন্ত্রী পরিবহন মালিকদের ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় না নামানোর ব্যাপারে সতর্ক করে দেন।

ভাঙ্গাচোরা রাস্তা কোথাও যেন সমস্যার কারণ না হয়। সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীদের এগুলো সর্তক নজরে রাখতে  নির্দেশ দেন তিনি।

এই সময়টা খুব চ্যালেজিং উল্লেখ করে মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ারসহ সড়ক পরিবহনের সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে বলব ৯টা-৫টা ডিউটি মনে না করে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রয়োজনে রাতের বেলায়ও কাজ করতে হবে, রাস্তায় আসতে হবে বলে তিনি মনে করিয়ে দেন।

দুপুরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের আধুরিয়া এলাকায় ভুলতা ফ্লাইওভারের সাইড অফিসে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের যানজট নিরসনে করণীয় বিষয়ক তিনি মতবিনিময় করেন। 

সভায় উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজী, নজরুল ইসলাম বাবু, সড়ক পরিবহন বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী ইবনে আলম হাসান, হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি আতিকুর রহমানসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।