সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামে বাবা-মায়ের সামনেই বুধবার সকাল ৬টা ৫৯ মিনিটে মৃত্যু হয় ১২ বছরের শিশুটির।
মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়দিন ধরেই তো অবস্থা খারাপ হচ্ছিল। আজ ভোরে বমি শুরু হল। একবার পানি খেতে চাইল। ওর দাদি গেল পানি আনতে। পানি আনতে আনতে সব শেষে।”
মুক্তামনির মৃত্যুতে তার বাড়িতে এখন শুধু কান্নার রোল। মা আসমা খাতুনের কিছু বলার ভাষাও আর নেই।
মুদি দোকানি ইব্রাহিমের মেয়ে মুক্তামনির ডান হাতে দেড় বছর বয়সে একটি ছোট গোটা দেখা দেয়। পরে তা বাড়তে থাকে।
হাতে বিকট আকৃতির ফোলা নিয়ে গত ১১ জুলাই ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হয় মুক্তামনি। চিকিৎসকরা তার রোগ শনাক্ত করেন রক্তনালীর এক ধরনের টিউমার হিসেবে, যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় বলা হয় হেমানজিওমা।
ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসকের একটি দল মুক্তামনির হাতে ছয় দফা জটিল অস্ত্রোপচার করেন। কিছুটা ভালো বোধ করলে গত বছরের ২২ ডিসেম্বর তাকে বাড়ি ফেরার অনুমতি দেন চিকিৎসকরা।
কিন্তু গত কিছুদিনে মুক্তামনির অবস্থার অবনতি হয়। হাতের ক্ষতস্থানে আবারও পচনের লক্ষণ দেখা যায়,সেই সঙ্গে জ্বর। অবস্থা এতোটাই খারাপ হয়ে যায় যে দাঁড়ানোর মত শক্তিও মেয়েটির ছিল না।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তামনির অস্ত্রোপচার ও চিকিৎসার সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক ইউনিটের প্রধান সমন্বয়কারী ডা. সামন্তলাল সেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বুধবার সকালে তিনি বলেন, মুক্তামনির অবস্থার অবনতির খবর তিনি আগেই পেয়েছিলেন, কিন্তু বেশ কয়েকবার অনুরোধের পরও মুক্তামনির পরিবার মেয়েকে ঢাকায় আনতে চায়নি।
“মুক্তামনি আর তার পরিবার ঢাকায় আসতে রাজি ছিল না। পরে বাধ্য হয়ে ঢাকা থেকে একজন অর্থোপেডিক সার্জন ও একজন মেডিকেল কনসালটেন্টকে সাতক্ষীরায় পাঠিয়েছিলাম। ওরা দেখে এসে জানিয়েছিলেন যে মেয়েটি খুব রক্তশূন্যতায় ভুগছে, তাকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ভর্তি করে রক্ত দিতে হবে।
“সেজন্য আমি আজ সকালে অ্যাম্বুলেন্সও পাঠিয়েছিলাম, যাতে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে নিয়ে হলেও রক্ত দেওয়া যায়। কিন্তু কাল থেকে তার বাবা হাসপাতালে নেওয়ারও পক্ষে ছিল না।”
ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসায় মুক্তামনির অবস্থার উন্নতি হলেও সংক্রমণের কারণে সাম্প্রতিক সময়ে আবার খারাপের দিকে যায় বলে মনে করছেন এই চিকিৎসক।
তিনি বলেন, “হাসপাতাল থেকে একজন রোগী ‘ফিট’ না থাকলে কখনোই ছেড়ে দেওয়া হয় না, পুরোপুরি সেরে না উঠলেও বাড়ি যাওয়ার মত অবস্থা তার ছিল। কাটা জায়গা থেকে রক্ত বের হত, তাই বারবার ড্রেসিং করতে হত। ড্রেসিং করতে গিয়ে বা অন্য কোনোভাবে সেখানে সংক্রামণ হয়ে এ অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে।”