ফরিদপুরে লিচুর ‘ফলন ভাল, দামও ভাল’

ফরিদপুরের লিচুগ্রাম বলে পরিচিত জাহাপুর এলাকায় এখন লিচু নিয়ে ব্যস্ত সবাই। চাষিরা বলছেন, গত দুই বছর তাদের লাভ হয়নি। এ বছর ফলনও ভাল, দামও ভাল।

ফরিদপুর প্রতিনিধিমফিজুর রহমান শিপন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 May 2018, 05:56 AM
Updated : 22 May 2018, 06:03 AM

সরেজমিনে মধুখালী উপজেলার জাহাপুর, দপ্তরদিয়া, টেংরাকন্দি গ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বাগানমালিক, মজুর-শ্রমিকসহ সবাই লিচু নিয়ে ব্যস্ত। কেউ গাছ থেকে পাড়ছে, কেউ থোকা বাঁধছে।

তাছাড়া ঝুড়ি ভরা, গাড়িতে তোলার মত নানা কাজ তাদের হাতে এখন।

জাহাপুর গ্রামের আব্দুস সাত্তার শেখ বলেন, গত দুই বছর চাষিরা লাভের মুখ দেখতে পায়নি। কেউ কেউ ক্ষতির মুখেও পড়েছে। শিলাবৃষ্টি, ঝড় ও অতিখরা লিচুর ক্ষতি করে।

“এ বছর ফলন ভাল হয়েছে। দামও ভাল। লাভ দেখতে পাচ্ছে বাগানমালিক, ব্যাপারিসহ জড়িত সবাই।”

ফলন ভাল হওয়ায় একবেলা কাজ করে ভাল মজুরি পাচ্ছেন বলে জানালেন শ্রমিকরা।

সাতৈর ইউনিয়নের কাদিরদি বাজারের পাশে গাছ থেকে লিচু পাড়ছিলেন কাদিরদি গ্রামের নাসির উদ্দিন।

তিনি বলেন, সকাল থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত কাজ করে তিনি দৈনিক ৪০০ থেকে সাড়ে ৪০০ টাকা পান।

জাহাপুর ইউনিয়নের চরমনোহরদিয়া গ্রামে ইউসুফ মল্লিকের বাগানে লিচুর থোকা বাঁধছিলেন আবুল কালাম।

“ভোরবেলা এসে লিচু পাড়ার কাজ শেষ করি। তারপর থোকা বেঁধে ঝুড়ি বরে গাড়িতে তুলে দেওয়ার কাজ। দিন দশেক কাজের চাপ থাকবে। ১০-১২ দিনের মধ্যে লিচু তোলা শেষ হয়ে যায়।”

মধুখালীর সাতৈর ইউনিয়নে লিচু চাষ দিন দিন বাড়ছে বলে জানালেন ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান।

তিনি বলেন, কোনো কোনো গ্রাম আছে যেখানে প্রায় সব বাড়িতে লিচুগাছ আছে। অনেকের বাগান আছে। যার বাগান করার জায়গা নেই তার বাড়িতে দুই-একটা গাছ আছে। তারা সাধারণত পরিবারের সদস্যরা মিলে বাঁধাছাঁদার কাজটা শেষ করে ফেলেন।

জাহাপুর গ্রামের সেতেরা বেগম বলেন, “একজন লোক নিলে তাকে চারশ-পাঁচশ টাকা দেওয়া লাগে। তাই ঘরের কাজ সেরে লিচুর কাজ করছি। এতে টাকাও বাঁচছে আবার আমাদের অবসর সময়ও কাজে লাগাতে পারছি।”

লিচুর মৌসুমে চাষিদের কারিগরি সহায়তায় কাজ করেন কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মকর্তা নাদীরা আক্তার।

তিনি বলেন, “আমি প্রতিনিয়ত লিচু চাষিদের সাথে যোগাযোগ রাখি। তাদের সুখ-দুঃখের সাথী হই।”

জাহাপুর গ্রামে এ বছর ২২ হেক্টর জমিতে লিচুর আবাদ হয়েছে বলে তিনি জানান।

জাহাপুরের কাশেম মল্লিক একজন লিচুর ব্যাপারি।

তিনি জানান, জাহাপুর ও চাঁদপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন বাগান থেকে লিচু সংগ্রহ করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠান শতাধিক ব্যাপারি।

“আমাদের এখানকার লিচু সুস্বাদু। চাহিতা আছে অনেক। ঢাকার বাদামতলী, দোহার, জয়পাড়া, মাদারীপুরের শিবচর, চন্দের চর, টেকেরহাট, মোস্তফাপুরসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হয় জাহাপুর-চাঁদপুরের লিচু।”

এ বছর প্রতি এক হাজার লিচু পাইকারি ২৮০০ থেকে ৩৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ব্যাপারি কাশেম।

এ বছর তিনি ১৬ লাখ টাকার বেশি লিচু সরবরাহ করেছেন বলেও জানান।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্ত্তী বলেন, ফরিদপুরে মোট ৮১৯ প্রকার ফল উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে লিচুর অবস্থান ১২তম। গত বছর এ জেলায় ১১৯৫ হেক্টর জমিতে ১৮৬ মেট্রিকটন লিচু চাষ হয়েছে।