ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানজটে চরম ভোগান্তি

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে নারায়ণগঞ্জ অংশের প্রায় ২৫ কিলোমিটারে দিনভর যানজটে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে যাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকদের।

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 May 2018, 04:23 PM
Updated : 16 May 2018, 04:23 PM

বুধবার ভোর থেকে মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জের মেঘনা টোল প্লাজা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যানজট বিস্তৃত হয়। যানবাহন সংকটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ভোগান্তি পোহাতে হয় বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের।

পুলিশের ভাষ্য, মঙ্গলবার রাতে মেঘনা টোল প্লাজায় বেশ কয়েকটি গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। সেই গাড়িগুলো সরাতে সরাতে অন্য গাড়ির চালকরা ঘুমিয়ে পড়লে যানজট বিস্তৃত হয়। বিভিন্ন ধরনের গাড়ির স্রোতের কারণে সেই যানজট ছড়িয়ে পড়ে মহাসড়কের বিভিন্ন এলাকায়।

বুধবার বিকাল ৫টার পর থেকে পরিস্থিতি উন্নতি হতে থাকে।

এর আগে গত সপ্তাহে মহাসড়কে ফেনীর ফতেহপুরে রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ কাজ চলার কারণে চট্টগ্রাম, ফেনী ও কুমিল্লার ৫০ কিলোমিটার অংশে তীব্র যানজট হয়। সে সময় ঢাকা-চট্টগ্রামের ৬/৭ ঘণ্টার দূরত্ব অতিক্রম করতে সময় লাগে ১৭/১৮ ঘণ্টা।

পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে ওই যানজট নিরসণ হলে তা স্থানান্তরিত হয় মহাসড়কের কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জ অংশে। গত দুই-তিনদিন থেকে এই অংশে শুরু হয় তীব্র যানজট।

চারলেন সড়কের যানবাহনের স্রোত দুই লেনের মেঘনা ও মেঘনা-গোমতী সেতুতে এসে পড়াও যানজটের আরেকটি কারণ।    

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, মেঘনা টোল প্লাজা থেকে সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড পর্যন্ত সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত মহাসড়কের দুটি লেনেরই যানজট বিস্তৃত হয়। গুরুত্বপূর্ণ এই মহাসড়কে যানজট ছড়িয়ে পড়ে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোডসহ আশপাশের সড়কগুলোতে।

এরমধ্যে রয়েছে মেঘনা টোল প্লাজা, মোগড়াপাড়া, মদনপুর, কাঁচপুর, সাইনবোর্ড এলাকা।

এছাড়া যানজটের কারণে উল্টে পথে যানবাহন চলাচল ও এলোপাথাড়িভাবে যানবাহন চলাচলের কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।

সাইনবোর্ড, শিমরাইল, কাঁচপুর ও মোগড়াপাড়া পয়েন্টে বাস কাউন্টারগুলোতে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদেরকে গাড়ির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। স্বল্প দূরত্বের যাত্রীদের গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে চলতে দেখা গেছে।

বিকাল ৩টার দিকে সাইনবোর্ড এলাকায় বাসের জন্য অপেক্ষমান কুমিল্লাগামী যাত্রী দেলোয়ার হোসেন জানান, তিনি কুমিল্লা যেতে বাসের জন্য আড়াইঘণ্টা ধরে অপেক্ষা করছেন; কোনো বাস আসেনি।

গত কয়েকদিন ধরে মহাসড়কের যানজট পরিস্থিতিতে অসন্তোষ প্রকাশ করে তিনি বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ একটি মহাসড়ক যানজটে অচল হয়ে রয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট্র কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

কৃষ্ণা সাহা নামের এক যাত্রী বলেন, যানজটে মহাসড়ক স্থবির হয়ে পড়েছে। সকাল থেকে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হলেও বিকালে তা নিরসন হচ্ছে না।

যাত্রী আমেনা বেগম জানান, তিনি রাজধানীর মগবাজার থেকে রওনা হয়ে আড়াইঘণ্টায় সাইনবোর্ড এসেছেন।

“যানজটে আমাদের ভোগান্তির শেষ নেই। আমরা কোনো গাড়ি পাচ্ছি না। ট্রাফিক পুলিশ যানজট নিরসনে কোনো কাজ করছে না।”

অন্যদিক পরিবহন চালকদের ভাষ্য, কুমিল্লার দাউদকান্দি থেকে যানজট শুরু হয়ে তা ছড়িয়ে পড়েছে মহাসড়কের শনির আখড়া পর্যন্ত। যানজটের কারণে যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। যানজটের কারণে তারা রেস্ট করতে পারছেন না।

প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় এই সংকট আরও প্রকট হয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, “দুই ঘণ্টা তিন ঘণ্টার সড়ক পাড়ি দিতে হচ্ছে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টায়। যানজটে আটকা পড়ে আমরা কোনো বিশ্রাম নিতে পারছি না।”

 বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে নারায়ণগঞ্জ ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক জিয়াউল করিম বলেন, রাতে দাউদকান্দি (মেঘনা-গোমতী) সেতুতে দুর্ঘটনা হলে রেকার দিয়ে সড়ক থেকে দুর্ঘটনাকবলিত গাড়ি সরিয়ে নিতে সময় লাগে; যার কারণে ওই যানজটটা আস্তে আস্তে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়।

তাছাড়া থেমে থেমে বৃষ্টি, মাঝে মহাসড়কে গাড়ি নষ্ট, বিভিন্ন স্থানে রাস্তা মেরামতের কাজ হচ্ছে, কাঁচপুর, গোমতী, মেঘনা গোমতী সেতুর কাজ হচ্ছে। এসকল কিছু মিলিয়ে মহাসড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তার ভাষ্য।

“যানজটের কারণে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকলেই মহাসড়কে রয়েছেন। মোটামোটি যানজট আমাদের নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। আমরা আশা করছি, আগামী দুই তিন ঘণ্টার মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসবে।”